Banners

জামাল-যুদ্ধে আমিরুল মোমেনিন তাঁর পুত্র মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া – এর হাতে পতাকা অর্পণকালে কি বলেছিলেন? What did Amirul Momenin offer in the hands of his son, Muhammad ibn Hanafiya, in the battle of Jamal?

খোৎবা-১১ 

জামাল-যুদ্ধে আমিরুল মোমেনিন তাঁর পুত্র মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া – এর হাতে পতাকা অর্পণকালে খোৎবা প্রদান করেন


          পর্বতমালা  উহার স্থান থেকে সরে পড়তে পারে কিন্তু তুমি তোমরা অবস্থান থেকে নড়তে পাববে না দাঁতে দাঁত কামড়ে ধরো তোমরা মাথা আল্লাহ্কে ধার দাও (আল্লাহ্ পথে যুদ্ধ করতে নিজকে উৎসর্গ করো) তোমার পদদ্বয় শক্তভাবে জমিনে স্থাপন করো বহুদূরবর্তী শত্রুর প্রতি দৃষ্টি রেখো শত্রুর সংখ্যাধিক্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করো না নিশ্চিত মনে রেখো, সাহায্য বিজয় মহিমান্বিত আল্লাহ্থেকে হয়ে থাকে

            মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া আমিরুল মোমেনিনের পুত্র কিন্তু মায়ের নামানুসারে তাঁকে ইবনে হানাফিয়া বলা হতো তাঁর মায়ের নাম খাওলা বিনতে জাফর বনি হানিফা গোত্রদ্ভুত বলে তাঁকে হানাফিয়া বলা হতো যখন ইয়ামামার জনগণ ধর্মত্যাগ করে জাকাত দিতে অস্বীকৃত জানালো এবং মুসলিম বাহিনীর হাতে পর্যুদস্ত নিহত হলো তখন তাদের নারীগণকে কৃতদাসী হিসেবে মদিনায় আনা হয়েছিল খাওলা বিনতে জাফরও তাদের সাথে মদিনায় নীত হয়েছিল বনি হানিফার লোকেরা একথা জানতে পেরে আমিরুল মোমিনের নিকট আবেদন করলো যেন খাওলার পারিবারিক ইজ্জতের খাতিরে তাকে কৃতদাসী হওয়ার কলঙ্ক হতে রক্ষা করা হয় ফলে আমিরুল মোমেনিন তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দিলেন এবং তাকে বিয়ে করলেন অতঃপর তার গর্ভে মুহাম্মদ জন্মগ্রণ করলেন

          অধিকাংশ ঐতিহাসিক লিখেছেন তাঁর লকব ছিল আবুল কাসিম বার ৯৭ (৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩৬৬-১৩৭২) লিখেছেন যে, রাসুলের (সঃ) সাহাবাদের মধ্যে জনের পুত্রের নাম চিল মুহাম্মদ এবং তাদের লকব ছিল আবুল কাসিম তারা হলো- () মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া () মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর, () মুহাম্মদ ইবনে তালহা () মুহাম্মদ ইবনে সা অতঃপর তিনি লিখেছেন যে, মুহাম্মদ ইবনে তালহার নাম লকব রাসুল (ষঃ) রেখেছিলেন ওয়াকিদী ৩৭ লিখেছেন যে, মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর নাম লকব আয়শা রেখেছিলেন মুলত রাসুল (সঃ) কর্তৃক মুহাম্মদ ইবনে তালহার নাম রাখার বিষয়টি সঠিক হতে পারে না কয়েকটি হাদীস হতে জানা যায় যে, আমিরুল মোমেনিনের একটা পুত্রের জন্য রাসুল (সঃ) নামটি নির্ধারণ করে গিয়েছিলেন এবং তিনিই হলেন মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া রাসূল (সঃ) বলেছিলেন-
          আলী, আমার পরে তোমার ঔরসে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তাকে আমার নাম লকব
          প্রদান করলাম এবং এখন হতে কারো জন্য একত্রে আমার নাম লকব ব্যবহারে অনুমতি রইল
          না

রাসূলের (সঃ) উপরোক্ত বাণী সামনে রেখে তালহার পুত্রের নাম রাসূল (সঃ) রেখেছিলেন কথা সঠিক হতে পারে না ছাড়া কোন কোন ঐতিহাসিক ইবনে তালহার লকব আবু সুলায়মান (আবুল কাসেম নয়) লিখেছেন একইভাবে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের লকব আবুল কাসিম যদি এজন্য হয়ে থাকে যে তার পুত্রের নাম ছিল কাসিম (যিনি মদিনার আল্লাহ্তত্ত্ববিদদের অন্যতম ছিলেন) তা হলে আয়শা কিভাবে তার লকব দিয়েছিলেন? মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর আমিরুল মোমেনিনের যত্নে লালিত পালিত হয়েছেন আমিরুল মোমেনিন তার কাছে রাসুলের (সঃ) বাণী গোপন রাখার কথা নয় সে ক্ষেত্রে আয়শা কর্তৃক প্রদত্ত নাম লকব একত্রে তিনি নিজেই সহ্য করতেন না তদুপরি অনেক ঐতিহাসিক তার লকব লিখেছেন আবু আবদার রহমান খাল্লিকান ৫৬ (৪র্থ খন্ড, পৃ-১৭০) লিখেছেন যে, আমিরুল মোমেনিনের পুত্র মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়ার জন্য রাসুল (সঃ) ‘আবুল কাসিমলকব নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন কিন্তু আশরাফ ১৭ (৩য় খন্ড, পৃঃ১১২) লিখেছেনঃ
          মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়ার প্রতি লকব প্রয়োগ করতে গিয়ে খাল্লিকান বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন কারণ আমিরুল মোমেনিনের যে পুত্রকে রাসুল (সঃ) তাঁর নাম লকব একত্রে দান করেছেন এবং যা অন্য আর কারো জন্য অনুমোদিত নয়, তিনি হলেন প্রতিক্ষীত শেষ ইমাম- মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া নয় হানাফিয়ারআবুল কাসেমলকব প্রতিষ্ঠিত হয় না কতেক লোক অজ্ঞতা বশতঃ রাসুলের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে নো পেরে ইবনে হানাফিয়াকে বুঝেছে

          যা হোক, মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, আত্মত্যাগ, ইবাদতে শ্রেষ্ঠত্ব, জ্ঞান কীর্তিতে অতি উচ্চ মর্যাদা  অর্জন করেছিলেন এবং তিনি তার পিতার বীরত্বের উত্তরাধিকারী ছিলেন জালাল সিফফিনের যুদ্ধে তার কৃতিত্ব এমন প্রভাব ফেলেছিল যে, বড় বড় যোদ্ধাগণও তার নাম শুনলে কেঁপে উঠতো আমিরুল মোমেনিন তার সাহজ শৌর্যে গর্বিত ছিলেন এবং সর্বদা যুদ্ধক্ষেত্রে তাকে সম্মুখভাগে দিতেন আমিলী ১১ লিখেছেন যে, আলী ইবনে আবি তালিব যুদ্ধক্ষেত্রে মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াকে সম্মুখভাগে রাখতেন কিন্তু হাসান ও হুসাইনকে সম্মুখে এগিয়ে যেতে দিতেন না এবং প্রায়শই বলতেন, “এ হচ্ছে আমার পুত্র আর ওরা দুজন আল্লাহ্ রাসুলের পুত্র একজন খারেজী ইবনে হানাফিয়াকে বলেছিল যে, আলী তাকে যুদ্ধের দাবানলে ঠেলে দেয় অথচ হাসান ও হুসাইনকে দূরে সরিয়ে রেখে রক্ষা করতে চায় তখন হানাফিয়া জবাবে বললেন, “আমি তাঁর দক্ষিণ হস্ত এবং তারা তাঁর চক্ষু সুতরাং তিনি তাঁর চক্ষুকে দক্ষিণ হস্ত দ্বরা রক্ষা করেনআশরাফ ১৭ লিখেছেন যে, একজন খারেজীর প্ররোচনায় ইবনে হানাফিয়া নালিশের স্বরে এ বিষয়টি আমিরুল মোমেনিনকে বললে, প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছিলেন, “তুমি আমার দক্ষিণ হস্ত অপরপক্ষে হাসান ও হুসাইন আমার চক্ষু এবং চক্ষুকে রক্ষা করা হাতের কর্তব্যএ দুটি মতের মধ্যে কোন অমিল নেই তবে  বাগ্নীতার বিবেজনায় এটা আমিরুল মোমেনিনের উক্তি বলেই অধিক যুক্তিযুক্ত হয়ত আমিরুল মোমেনিনের কথাই ইবনে হানাফিয়া অন্যের কথায় জয়াবে বলেছিলেন

          মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া দ্বিতীয় খলিফার রাজত্বকালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের রাজত্বকালে ৬৫ বছর বয়সে ইনতিকাল করেন কোন ঐতিহাসিক ৮০ হিজরীতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে লিখেছেন, আর কেউ কেউ লিখেছেন ৮১ হিজরীতে তার মৃত্যুর স্থান সম্পর্কে মতভেদ আছে কেউ বলেন মদিনায়, কেউ বলেন আয়লাতে এবং কেউ বলেন তায়েফে

          জামাল-যুদ্ধ আমিরুল মোমেনিন মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াকে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণকালে বলেছিলেন যে, তিনি যেন শত্রুর সম্মুখে পর্বত প্রমাণ স্থির-সংকল্প ও দৃঢ়তা সহকারে অবস্থান করে যাতে করে শত্রুর প্রচন্ড আক্রমণও যেন তাকে স্থানচু্ৎ করতে না পারে এবং তিনি যেন দাঁতে দাঁতে কামড়ে ধরে শক্রকে আঘাত করতে থাকেন তৎপর তিনি বললেন, “বৎস আমার, তোমার মাথা আল্লাহ্কে ধার দাও এতে তুমি শাশ্বত জীবন লাভ করবে, কারণ কোন কিছু ধার দিলে তা ফেরত পাবার অধিকার থাকে তাই তুমি জীবনের দিকে না তাকিয়ে যুদ্ধ করো যদি তোমার মনে জীবনের মায়া এসে যায় তবে মৃত্যুর মুখোমুখী হবার জন্য অগ্রবর্তী হতে তুমি দ্বিধাগ্রহস্থ হয়ে পড়বে এতে তোমার বীরত্বের সুনাম ক্ষুন্ন হবে দেখ, কখনো পশ্চাৎপদ হয়ো না, কারণ পশ্চাৎপদ হলে শত্রুর সাহস বেড়ে যায় এবং তাদের পদক্ষেপ দ্রুত হয় শত্রুর সর্বশেষ সারিতে তোমার লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করো এতে শত্রু  তোমার উচ্চকাঙ্খা অনুধাবন করে ভীত হয়ে পড়বে তাতে শত্রু বুহ্য ভেদ করা সহজ হয়ে যাবে এবং তাদের গতিবিধিও তোমার কাছে গোপন করতে থাকবে না দেখ, শত্রুর সংখ্যাধিক্যের প্রতি নজর দিয়ো না- এতে তোমার সাহজ ও শৌর্য্য অক্ষুন্ন থাকবেতিনি আরো বলেছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে চোখ এত বেশী খোলা উচিত নয় যাতে শক্রর অস্ত্রের চাকচিক্যে চোখ ধেঁয়ে এবং সে সুযোগে শত্রু  আক্রমণ করে বসে সর্বদা মনে রেখো বিজয় আল্লাহ্র হাতেযদি আল্লাহ্তোমাকে সাহায্য করেন তবে কেউ পরাভূত করতে পারে নাসুতরাং বস্তু-উপকরণাদির ওপর নির্ভর  না করে আল্লাহ্র সাহায্য ও সমর্থন অনুসন্ধান করো
          আল্লাহ্ তোমাদেরকে সাহায্য করলে তোমাদের ওপর জয়ী হবার কেউ থাকবে না (কুরআন-:১৬০)  

নাহ্ আল-বালাগা
মূলঃ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব
সংঙ্কলনঃ আশ-শরীফ আর-রাজী
ইংরেজি অনুবাদঃ সৈয়দ আলী রেজা
বাংলা অনুবাদঃ জেহাদুল ইসলাম
পৃষ্ঠা নং-২৯-৩১

No comments

Powered by Blogger.