খিজির (আ) এর সাথে নবী মূসা (আ) এর সাক্ষাৎ এর গল্প। This is the story of the Prophet Moses's meeting with Khizir.
৭৪। মুহাম্মাদ ইব্ন গওরায়র আয-যুহরী (র) .... ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত,
তিনি এবং হুর ইব্ন কায়স ইব্ন হিসর আল-ফাযারী মূসা (আ)-এর সঙ্গি সম্পর্কে বাদানুবাদ করছিলেন। ইব্ন আব্বাস (রা) বললেন,
তিনি ছিলেন খিযর। ঘটনাক্রমে তখন তাদের পাশ দিয়ে
উবাঈ ইব্ন কা‘ব (রা) যাচ্ছিলেন। ইব্ন ‘আব্বাস (রা)
তাঁকে ডেকে বললেনঃ আমি ও আমার এ ভাই মতবিরোধ পোষণ করছি মূসা
(আ)-এর সেই সঙ্গীর ব্যাপারে যাঁর সাথে সাক্ষাত
করার জন্য মূসা (আ) আল্লাহ্র কাছে পথের সন্ধান চেয়েছিলেন—আপনি কি নবী (সাঃ)-কে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি নবী
(সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, একবার
মূসা (আ) বনী ইসরাঈলের কোন এক মজলিসে হাযির
ছিলেন। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে জানেন কি? মূসা (আ) বললেন, ‘না।’ তখন আল্লাহ্ তা‘আলা মূসা
(আ)-এর কাছে ওহী পাঠালেনঃ হ্যাঁ, আমার বান্দা খিযর।’ অতঃপর মূসা (আ) তাঁর
সাথে সাক্ষাত করার রাস্তা জানতে চাইলেন। আল্লাহ্ তা‘আলা মাছকে তার নিশানা বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হল, তুমি যখন মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরে আসবে। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি তাঁর সাক্ষাত পাবে। তখন তিনি সমুদ্রে সে মাছের নিশানা অনুসর করতে লাগলেন। মূসা (আ)-কে তাঁর সঙ্গী যুবক বললেন, (কুরআন মাজীদের ভাষায়ঃ) আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন
পাথরের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তার তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। .... মূসা বললেন, আমরা
তো সে স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম। এরপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে
ফিরে চলল। (১৮:৬৩-৬৪)
তাঁরা খিযরকে
পেলেন। তাদের ঘটনা তা-ই,
যা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
১২৪। ‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন মুহাম্মদ আল-মুসনাদী (র) .... সা’ঈদ ইব্ন জুবায়র (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ইব্ন ‘আব্বাস (রা)-কে বললাম, নাওফ আল-বাকালী দাবী করে যে, মূসা (আ) [যিনি খিযির (আ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন তিনি] বনী ইসরাঈলের মূসা নন বরং তিনি অন্য এক মুসা। (একথা শুনে) তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাঈ ইব্ন কা‘ব (রা) নবী (সাঃ) থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ইরশাদ করেনঃ মূসা (আ) একবার নবী ইসরাঈলদের মধ্যে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, সবচাইতে জ্ঞানী কে? তিনি বললেন, ‘আমি সবচাইতে জ্ঞানী।’ মহান আল্লাহ্ তাঁকে সতর্ক করে দিলেন। কেননা তিনি ইল্মকে আল্লাহ্র প্রতি ন্যস্ত করেন নি। তারপর আল্লাহ্ তাঁর নিকট এ ওহী পাঠালেনঃ দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে আমার বান্দাদের মধ্যে এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চাইতে বেশী জ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘ইয়া রব! কিভাবে তার সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে? তখন তাঁকে বলা হল, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে নাও। এরপর যেখানে সেটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তাকে পাবে। তারপর তিনি রওয়ানা হলেন এবং ইউশা‘ ইব্ন নুন নামক তাঁর একজন খাদিমও তাঁর সাথে চলল। তাঁরা থলের মধ্যে একটি মাছ নিলেন। চলার পথে তাঁরা একটি বৃহৎ পাথরের কাছে এসে, সেখানে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর মাছটি (জীবিত হয়ে) থলে থেকে বেরিয়ে গেল এবং সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে চলে গেল। এ ব্যাপারটি মূসা (আ) ও তাঁর খাদিম-এর জন্য ছিল আশ্চর্যের বিষয়। এরপর তাঁরা তাঁদের বাকী রাতটুকু এবং পরের দিনভর চলতে থাকলেন। পরে ভোরবেলা মূসা (আ) তাঁর খাদিমকে বললেন, ‘আমাদের নাশতা নিয়ে এস, আমরা আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আর মূসা (আ)-কে যে স্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে তিনি ক্লান্ত অনুভব করেন নি। তারপর তাঁর খাদিম তাঁকে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন পাথরের পাশে বিশ্রাম করছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছি? মূসা (আ) বললেন, ‘আমরা তো সেই স্থানটিই খুঁজছিলাম।’ তারপর তাঁরা তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। তাঁরা সেই পাথরের কাছে পৌঁছে, কাপড়ে আবৃত (বর্ণনাকারী বলেন,) কাপড় মুড়ি দেওয়া এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। মূসা (আ) তাঁকে সালাম দিলেন। তখন খাযির বললেন, এ দেশে সালাম কোথা থেকে এল! তিনি বললেন, ‘আমি মূসা।’ খাযির জিজ্ঞাসা করলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা (আ)? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি আরো বললেন, “আমি কি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি এ শর্তে যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন? খাযির বললেন, “তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না। হে মূসা (আ)! আল্লাহ্র ইল্মের মধ্যে আমি এমন এক ইল্ম নিয়ে আছি যা তিনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তুমি যান না। আর তুমি এমন ইলমের অধিকারী, যা আল্লাহ তোমাকেই শিক্ষা দিয়েছেন, তা আমি জানি না।” ‘মূসা (আ) বললেন, “আল্লাহ্ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না। তারপর তাঁর দুজন সমুদ্র তীর দিয়ে চলতে লাগলেন, তাঁদের কোন নৌকা ছিল না। ইতিমধ্যে তাঁদের কাছ দিয়ে একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা নৌকাওয়ালাদের সঙ্গে তাদের আরোহণ করিয়ে নেওয়ার কথা বললেন। তারা খাযিরকে চিনতে পারল এবং ভাড়া ব্যাতিরেকে তাঁদের নৌকায় তুলে নিল। তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে দুই-একবার সমুদ্রে তার ঠোঁট মারল। খাযির বললেন, ‘হে মূসা (আ)! আমার ইল্ম এবং তোমার ইল্ম (সব মিলেও) আল্লাহর ইল্ম থেকে সমুদ্র থেকে চড়ুই পাখির ঠোঁটে যতটুকু পানি এসেছে ততটুকু পরিমাণও কমাতে পারবে না।’ এরপর খাযির নৌকার তক্তাগুলির মধ্য থেকে একটি খুলে ফেললেন। মূসা (আ) বললেন, এরা আমাদের ভাড়া ছাড়া আরোহণ করিয়েছে, আর আপনি আরোহীদের যুবিয়ে দেওয়ার জন্য নৌকার ফাটল সৃষ্টি করলেন? খাযির বললেন, “আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরতে পারবে না?” মূসা (আ) বললেন, ‘আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।’ বর্ণনাকারী বলেন, ইহা মূসা (আ)-এর প্রথমবারের ভুল। তারপর তাঁরা উভয়ে (নৌকা থেকে নেমে) চলতে লাগলেন। (পথে) একটি বালক অন্যান্য বালকের সাথে খেলছিল। খাযির তার মাথার উপর দিক দিয়ে ধরলেন এবং হাত দিয়ে তার মাথা ছিদ্র করে ফেললেন। মূসা (আ) বললেন, ‘আপনি কি একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন কোন হত্যার অপরাধ ছাড়াই? খাযির বললেন “আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কখনো ধৈর্য ধরতে পারবে না?” ইব্ন ‘ইয়ায়না (র) বলেন, এটা ছিল পূর্বের চেয়ে বেশী জোরালো। তারপর আবারো চলতে লাগরেন; চলতে চলতে তারা এক গ্রামের আধিবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদের কাছে খাবার চাইলেন, কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর সেখানে তাঁরা এক পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন। খাযির তাঁর হাত দিয়ে সেটি খাড়া করে দিলেন। মূসা (আ) বললেন, ‘আপনি ইচ্ছে করলে এর জন্য পরিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।’ তিনি বললেন, ‘এখানেই তোমার আর আমার মধ্যে সম্পর্কের অবসান।’ নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মূসার ওপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করতেন, তাহলে আমাদের কাছে তাঁদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো।
মুহাম্দ ইব্ন ইউসুফ আলী ইব্ন খাশরাম সুফিয়ান ইব্ন উয়ায়না (র) এ হাদীসটি বিশদভাবে বর্ণনা করেন।
বুখারী শরীফ
প্রথম খণ্ড
ইমাম মুহাম্মদ
ইব্ন ইসমাঈল বুখারী (রঃ) হাদিস নং ৭৪ এবং ১২৬
No comments