Banners

মাজার শরীফ বা কবর যিয়ারত করা যায় কি?


islam, nobe, ali, boropir

আসুন আমরা বিস্তারিত দলীল আদিল্লা দ্বারা প্রমান পেশ করি মাজার শরীফ বা কবর যিয়ারত করা যায় কিনা !


  • সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে এরশাদ হয়েছে--

ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﺯﺍﺭ ﻗﺒﺮﻱ ﻭﺟﺒﺖ ﻟﻪ ﺷﻔﺎﻋﺘﻲ

অর্থ: হযরত ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি আমার কবর ( রওজা শরীফ) যিয়ারত করলো তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল |"

সুত্র-- √ জামে ছগীর ১৭১ পৃষ্ঠা √ শিফাউস সিকাম ২ √ ওফাউল ওফা ৩৯৪ পৃষ্ঠা !




  • হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ যিয়ারত প্রসঙ্গে শতাধিক হাদীস শরীফ আছে | প্রয়োজনে সেগুলা পরে উল্লেখ করা যেতে পারে ! এবার আসুন কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে অন্যান্য হাদীস শরীফ গুলা লক্ষ্য করি | বিখ্যাত হাদীস শরীফের কিতাব " মিশকাত শরীফে " কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে " যিয়ারাতুল কুবুর" বা কবর যিয়ারত নামক একটা অধ্যায় রচনা করা হয়েছে ! সেখান থেকে কিছু দলীল পেশ করা হলো -

ﻋﻦ ﺑﺮﻳﺪﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻛﻨﺖ ﻧﻬﻴﺘﻜﻢ ﻋﻦ ﺯﻳﺎﺭﺓ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ
ﻓﺰﻭﺭﻭﻫﺎ
অর্থ : হযরত বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পারো |'

সুত্র-  মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ১৬৭০ ( বাংলা অনুবাদ, সুবিধার জন্য হাদীস নম্বর বাংলা অনুবাদ কিতাব থেকে দেয়া হলো যাতে সবাই সহজেই খুজে পায় ) ﻛﻨﺖ ﻧﻬﻴﺘﻜﻢ ﻋﻦ ﺯﻳﺎﺭﺓ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ ﻓﺰﻭﺭﻭﻫﺎ
ﻓﺎ ﻧﻬﺎ ﻧﺰﻫﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﺗﺬﻛﺮﺓ ﺍﻻﺧﺮﺓ

অর্থ : হযরত ইবনে মাসুদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম , এখন তোমরা তা করতে পারো | কেননা উহা দুনিয়ার আসক্তি কমায় এবং আখিরাতকে স্মরন করায় !"

সুত্র-  ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ ১৬৭৭


  • হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফের কিছু কবরের নিকট গেলেন অতঃপর তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, সালাম হোক তোমাদের প্রতি হে কবরবাসী !"


সুত্র-  তিরমীযি শরীফ, মিশকাত শরীফ ১৬৭৩


  • হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে-- হযরত ইবনে নোমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ননা করেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক জুমুয়ার দিন নিজ পিতা-মাতা অথবা তাদের মধ্যে একজনের কবর যিয়ারত করবে তাকে মাফ করে দেয়া হবে |"

সুত্র-  শুয়াইবিল ঈমান লিল বায়হাক্বী, মিশকাত ১৬৭৬


  • এছাড়া আরো অসংখ্য সহীহ হাদীস শরীফে কবর যিয়ারত করার ব্যাপারে বলা হয়েছে | এসকল হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস , হাফিযে হাদিস , আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

ﺍﻋﻠﻢ ﺍﻥ ﺍﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﺯﻳﺎﺭﺓ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ ﻗﺪ ﺛﺒﺖ ﺑﻬﺬﻩ ﺍﻻ
ﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻝ ﺟﺎﻝ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺟﻤﻴﻌﺎ ﻭﻗﺪ ﺍﺧﺘﻠﻔﻮﺍ ﻓﻲ
ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
অর্থ : জেনে রাখুন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত এ সকল হাদীসের রায় অনুযায়ী মোস্তাহাব প্রমানিত, তবে মহিলাদের ব্যাপারে মতানৈক্য আছে | "

সুত্র-  ফতহুল বারী ফি শরহে বোখারী ৩য় খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা |



  • বিখ্যাত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

ﻭﺑﺰﻳﺎﺭﺓ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ ﺍﻱ ﻻ ﺑﺎ ﺑﺎ ﺀﺱ ﺑﻬﺎﺑﻞ ﺗﻨﺪﺏ
অর্থ- কবর যিয়ারত এতে কোন অসুবিধা নেই, বরং এটা মোস্তাহাব!

সুত্র-  ফতোয়ায়ে শামী ২/২৪২


  • শুধু তাই নয় ওহুদ যুদ্ধে শহীদ গনের মাজার শরীফ যিয়ারত করার জন্য স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই প্রতি বছর ওহুদ প্রঙ্গনে যেতেন !

যেটা বর্নিত আছে -- ﻭﻓﻴﻪ ﻳﺴﺘﺤﺐ ﺍﻥ ﻳﺰﻭﺭ ﺷﻬﺪﺍﺀ
ﺟﺒﻞ ﺍﺣﺪ ﻟﻤﺎﺭﻭﻱ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ " ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﺎﺀ ﺗﻲ ﻗﺒﻮﺭ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ ﺑﺎﺣﺪ ﻋﻠﻲ
ﺭﺃﺱ ﻛﻞ ﺣﻮﻝ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺍﻟﺴﻼ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺑﻤﺎ ﺻﺒﺮﺗﻢ ﻓﻨﻌﻢ
ﻋﻘﺒﻲ ﺍﻟﺪﺍﺭ
অর্থ : ওহুদ পাহাড়ের শহীদগনের ( কবর) যিয়ারত করা মোস্তাহাব | ইবনে আবী শায়বা হতে বর্নিত আছে , হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বৎসরান্তে ওহুদের শহীদগনের কবর যিয়ারত করতে আসতেন | অতঃপর বলতেন, তোমাদের প্রতি সালাম , যেমন তোমরা ধৈর্য ধারন করেছিলে তেমনি পরকালে উত্তম বাস স্থান লাভ করেছ |"

সুত্র- ফতোয়ায়ে শামী ২য় খন্ড ২৩৪ পৃষ্ঠা !


সেটার ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ﻧﺪﺏ ﺍﻟﺰﻳﺎﺭﺓ ﻭﺍﻥ ﺑﻌﺪ ﻣﺤﻠﻬﺎ
অর্থ : দূরবর্তী স্থানেও ( কবর) যিয়ারতের জন্য গমন মুস্তাহাব !"

সুত্র-  শামী ২য় খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠা !



  • শুধু তাই নয় শাফেয়া মাযহাবের ইমাম, ইমাম শাফেয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ যিয়ারত করার জন্য আসতেন ! যেটা ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেই বলেন--

ﺍﻧﻲ ﻻﺗﺒﺮﻙ ﺑﺎﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﺍﺝﺀﻱ ﺍﻟﻲ ﻗﺒﺮﻩ ﻓﺎﺫﺍ ﻋﺮﺿﺖ
ﻟﻲ ﺣﺎﺟﺔ ﺻﻠﻴﺖ ﺭ ﻛﻌﺘﻴﻦ ﻭ ﺳﺎﺀﻟﺖ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻋﻨﺪ
ﻗﺒﺮﻩ ﻓﺘﻘﻀﻲ ﺳﺮﻳﻌﺎ

অর্থ : নিশ্চয়ই আমি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বরকত হাসিল করি |যখন আমার কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন আমি উনার মাজার শরীফে এসে প্রথমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি | অতঃপর উনার উসীলা দিয়ে আল্লাহ পাকের নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য প্রর্থনা করি | তা অতি তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যায় |"

সুত্র-  ফতোয়ায়ে শমী, মুকাদ্দিমা ১ম খন্ড ৫৫ পৃষ্ঠা !


এছাড়া আরো অসংখ্য দলীল রয়েছে , যার দ্বারা প্রমানিত হয় মাজার শরীফ বা কবর যিয়ারত করা সুন্নত ! এখন বর্তমানে কিছু মাজারে শরীয়ত বিরোধী কাজ দেখা যায় ! যেমন- গান-বাজনা, নারী পুরুষ অবাধ মেলামেশা ,বিভিন্ন নেশা করা ইত্যাদি !! এগুলো মোটেই জায়িয নেই , এগুলা প্রতিরোধ করতে হবে |  উপরোক্ত আলোচনায় জানা গেল মাজার শরীফ বা কবর যিয়ারত করা খাস সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।

2 comments:

Powered by Blogger.