Banners

আখেরি চাহার সোম্বা কি?

মদিনা নগরি নিরব নিস্তব্দ হয়ে আছে। সেমাবারে সুবেহ সাদিকে বেলাল (রা.) এর আজানে নিস্তব্ধতা ভেঙে জাগিয়ে দিল সব মানুষ। রাসূল(সা.) ইশারায় ফজরের নামাজ আদায় করলেন। হযরত আয়েশা (রা.) বললেন, আমার হুজরার বাতি সেই সময় নিভে গেল। মহানবী (সা.) এর সকল সম্পদ সেই মুহুর্তে এমন ভাবে শেষ হল যে, বাতি জ্বালানের তেলটুকু আর অবশিষ্ট আর নেই।

আখেরি চাহার সোম্বা, ইসলাম, নবীজি সুস্থ হওয়ার,


তার প্রাণ প্রদীন নিভে যাওয়ার আগেই আলোর প্রদীপ নিভে গেল। হযরত জিব্রাই (আ.) হাজির হয়ে বলেন, হে রাসূল (সা.) আল্লাহ আপনাকে সালাম পেশ করেছেন।


আল্লাহর প্রিয় নবী এই ভূবনে তেষট্টি বছর হায়াত পেয়েছিলেন। তার জিন্দিগিতে কোন বড় রোগ হয় নাই। কাফের মুশরিকদের অত্যাচার ও নির্যাতনের মাঝেও তিনি ছিলেন আল্লাহ পথে হিমালয়ের মতো অটল।  শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তার বন্ধুকে তার নিকট নেওয়ার জন্য রেগাক্রান্ত করলেন। উম্মুল মু’মেনীনগনও সাহাবা আসাহাফে সুফফা তাতে বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। তার আগে সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি সুস্ততা অনুভব করলেন এবং আয়েশা (রা.) ডেকে বললেন আমার মাথা ব্যাথা কমে গেছে এবং আমি সুস্থতা অনুভব করছি। আপনি আমার হাসান হোসাঈন ও মা ফাতিমা এবং আলী (রা.) ডেকে নিয়ে আসেন। আয়েশা (রা.) তাই করলেন এবং রাসূল (সা.) এর মাথায় পানিলেন সুন্দর ভাবে গোসল করালেন।


এইা খবর মদীনার অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়লো। সাহাবীরা ও আসাহাবে সুফফাগণ আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। কেউ দাসমুক্ত করে দিল কেউ উট ধন সম্পদ দান করে দিলেন। অনেক সাহাবীও আল্লাহর কাছে শুকরিয়ার নামাজ ও দোয়া করলো। সেটা ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। এজন্য আই দিনটিকে আখেরী চাহার সোম্বা বলা হয়ে থাকে। আখেরি অর্থ শেষ আর চাহার সোম্বা হলো বুধবার মানে দাড়ায় শেষ বুধবার।


রাসূল (সা.) এর আগে তার পরম বন্ধু আল্লাহর নিকট পৌছানোর জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। যেমন করে পথিক দুরে কোথাও জাবার জন্য তার প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নেয়। যা দেখেই মনের হয় তিনি কোথাও যাবে। রাসূল (সা.) তার বিদায় যাত্রার প্রস্ততি দেখে নিকটতম সাহাবীর কিছুটা অনুভব করতে পেরেছিল। এর পর জিব্রাইল (আ.) হে রাসূল (সা.) আল্লাহ আপনাকে শ্রীঘ্রই এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার অথবা আরোকিছু দিন থাকার অবকাশ দিয়েছেন। আপনি যেটা চান সেটাই হবে।


তিনি একদিন বলেছিলেন, আল্লাহ তার বান্দাকে পৃথবীতে থাকার ও এখান থেকে যাওয়ার ইখতিয়ার দেন। কিন্তু বান্দা বলেন আমি আমার পরম বন্ধুর সন্নিধ্যকেই বেছে নিচ্ছি। সেই দিন তার এই কথা শুনে নিকটতম সাহাবী আবু ককর, ওমর, ওসমান, আলী, তালহা, যুবায়ের আবদুর রহমান বি আউফ সহ আরো জলিল-কদর সহাবীরা ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন তারা এমন ভাবে কেদেছিলেন যা শব্দ পিছনের কাতার পর্যন্ত শোনা গিয়েছিল। তারা বুঝেছিলেন রাসূল (সা.) বেশিদিন আমাদের মাঝে থাকবেন না। অতপর রাসূল (সা.) অসুস্থ  হলেন তার স্ত্রী মায়মুনার বাড়ী থেকে ফেরার পথে। আয়েশার কাছে এসে বললেন তার অসু¯’তার কথা এবং বললেন খয়বারের ইহুদীনী মহিলার সেই বিষ মিশানো খাবার আমাকে যন্ত্রনা দি”চ্ছে। মহানবী কোনদিন জামায়াত ছাড়া নামাজ আদায় করেনি। যখন থেকে জামায়াতবদ্ধ ভঅবে নামাজ পড়া ফরজ হয়েছিল। সর্বশেষে যখন বেশি অসুস্থ হয়ে যায় তখনা তিনি সতের ওয়াক্ত নামাজ জামায় এ যেতে পারেননি। শেষ যে জামাত আদায় করেছে তখনকার অবস্থা ছিল অন্যান্য দিনগুলোর মত বেলার আজান দিলেন এরপর নবীজিকে ডাকদিয়ে বললেন হুজুর জামায়াতের সময় হয়েছে।


রাসূল (সা.) বললেন আমার মনে হয় আমি একা জামায়াতে যেতে পারবোনা তুমি কাউকে ডেকে নিয়ে আসো। হযরত আলী এবং অন্য এক সহাবীকে নিয়ে এলেন তাদের কাঁধে ভর দিয়ে জামায়াতে চলে গেলেন। অসুস্থতায় দাড়াতে পাড়ছেননা। রাসূল (সা.) বসলেন এবং আবু বকরকে নামাজ পড়াতে বলেন বেলায় ইকামত দিতে বলেন। শেষ হলো জোহরের নামায। আছরের সময় রাসূল (সা.) বললেন আমি বোধ হয় জামায়াতে যেতে পারবোনা বেলাল তুমি আবু বকরকে নামাজ পড়াতে বলো। যখন নামাজ আরম্ভ হলো রাসূল (সা.) আয়েশাকে বলেন, হুজরার পর্দাটা সরিয়ে দাও আমি নামাজরত অবস্থা আমার সাহাবীরদেরকে একটিু দেখতে চাই। আয়েশা পর্দা সরালেন রাসূল (সা.) মসজিদের দিকে দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে নবীজির মলিন চেহেরা উজ্জল হয়ে গেল এবং বললো আমার সাহাবীরা নামাযে ব্যতিক্রম করে নাই।


তারা আমার মতো সুন্দর করে নামাজ পড়ছেন। এর পর হতে রাসূল (সা.) মসজিদের জামায়াতে যেতে পারেনি। ধীরে ধীরে বেশি অসু¯’ হয়ে গেল মদিনা নগরী নীরব নিস্তব্দ। সোমবার সুবেহ সাদিকে বেলাল নিস্তদ্ধতা ভেঙ্গে জাগিয়ে দিল সব মানুষকে। রাসূল(সা.) ইশারায় ফজরের নামাজ আদায় করলেন। হযরত আয়েশা (রা.) বললেন, আমার হুজরার বাতি সেই সময় নিভে গেল। মহানবী (সা.) এর সকল সম্পদ সেই মুহুর্তে এমন ভাবে শেষ হল যে, বাতি জ্বালানের তেলটুকু আর অবশিষ্ট আর নেই। তার প্রাণ প্রদীন নিভে যাওয়ার আগেই আলোর প্রদীপ নিভে গেল। হযরত জিব্রাই (আ.) হাজির হয়ে বলেন, হে রাসূল (সা.) আল্লাহ আপনাকে সালাম পেশ করেছেন।


রাসূল (সা.) সেই দিন চিরবিদায় নিবে মা ফাতেমা সে সময় খুব কাঁদছিল। রাসূল (সা.) মা ফাতেমাকে ডেকে কি যেন বললেন এতে তার কান্না বন্ধ হয়ে গেল। তখন আয়েশা (রা.) ফাতেমাকে বললেন তোমার কাছে তোমার আব্বা তোমাকে কানে কানে কি বললো, যে তোমার কান্না বন্ধ হয়ে গেল।


মা ফাতেমা বললেন, আব্বাজান আমাকে বলেছেন মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের সবার মধ্যে আগে তাঁর সাথে আমার দেখা হবে। এরপর আজরাইল (আ.) আসলেন তখন জিব্রাইল (আ.) জিজ্ঞাসা বললেন ইয়া রাসূল (সা.) আপনার কি কষ্ট হচ্ছে। রাসূল (সা.) বললেন হ্যাঁ মৃত্যুর যন্ত্রণা খুবই কষ্টকর।


জিব্রাইল (আ.) জিজ্ঞাসা বললেন ইয়া রাসূল (সা.) আপনাকে পৃথিবীর সব  মানুষের চেয়ে কম কষ্টে জান কবজ করা হচ্ছে। নবীজি বলনেন আমারতো মনে হচ্ছে ওহুদ পাহাড়টি আমার বুকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর  রাসূল (সা.) আস-সালাত! আস-সালাত!! এই কথা বলতে বলতে চিরনিদ্রায়শায়িত হয়ে গেলেন।



1 comment:

Powered by Blogger.