পানাহারের রীতি নীতি



খানা খাইবার কালে
মুখের লোকমা কোন ক্রমেই মুখ হইতে বাহির করিয়া ফেলিবে না। অবশ্য যধি মুখের লোকমা
কোন ভাবে গলায় বাঁধিয়া যায় বা আটক হইয়া পড়ে, তখন যেভাবেই হউক গলার মধ্য হইতে সেই
লোকমা বাহির করিয়া ফেলিবে। অথবা খানা বন্ধ করিয়া খাবার স্থান হইতে দূরে গিয়া হঁচি
দিয়া আসিবে। খানা খাইবার সময় কোন খাদেম বা পরিচালক কাছে দাঁড়ানো থাকিলে তাহাকে
বসিতে বলিবে। কোন ছোট বালক-বালিকা নিকটে দাঁড়াইলে বরতন হইতে ভাল ভাল খানা উঠাইয়া
তাহার মুখে দিবে। বরতনে কিছু খানা লাগিয়া থাকিলে তাহার রাখিয়া না উঠিয়া বা বরং ছাফ
করিয়া খাইয়া ফেলিবে। যাহাদের সঙ্গে খাইতে বসিবে, তাহাদের পদ-মর্যাদা অনুসারে
তাহাদের সাথে ভদ্র আচরণ করিবে। সাধু
দরবেশদের সাথে খাইতে বসিলে তাহাদের প্রিয় এবং পছন্দনীয় বস্তু তাহাদের বরতনে দিবে
এবং নিজের তুলনায় তাহাদের অগ্রাধিকার প্রদান করিবে। বন্ধু-বান্ধবদের নিয়া খাইতে
বসিলে তাহাদের আপ্যায়নে দস্তদারাজী প্রদর্শন করিবে। আলেম-ফাজেলদের সাহিত খাইতে
বসিলে তাঁহাদের দ্বারা খানা-পিনা সম্পর্কিত আদব ও শিষ্টতা শিখিয়া লইবে। অন্ধ
ব্যক্তি খাইতে বসিলে তাহার নিকট প্রত্যেকটি খাদ্য বস্তুর গুণাগুণ বর্ণনা করিয়া উহা
তাহার খাওয়ার ব্যবস্থা করিবে যেন সে কোন খাদ্য হইতে বঞ্চিত না থাকে।
কাহারও খাওয়া অন্যান্যদের পূর্বেই শেষ হইয়া গেলে বরতন হইতে হাত না উঠাইয়া
সকলের সাথে অল্প অল্প খাইতে থাকিবে অথবা বসিয়া অপেক্ষা করিতে থাকিবে। যখন সকলে
খাওয়া শেষ করিয়া হাত উঠাইয়া লইবে, তখন তাহাদের সাথে একত্রে হাত উঠাইয়া লইবে।
মেহমানদের খানা খাইতে দিয়া তাহারের খাওয়া শেষ হওয়ার পূর্বে হাড্ডি-কাটা-ঝুটা
ইত্যাদি পাত্র তাহাদের সম্মুখ হইতে তুলিয়া লইবে না। সকলের খাওয়া শেষ হইবার পারে
উহা সরাইয়া নিবে।
খেজুর বা খোরমা খাইবার কালে এক সঙ্গে দুইটি মুখে পুরিবে না। ইহাকে হুযুর
পাক (দঃ) নিষিদ্ধ ফরমাইয়াছেন। কাহারও কাহারও মতে ভক্ষণকারী যদি একাকী হয় বা সে যদি
নিজেই আহার্য বস্তুর মালিক হয়, তবে উক্তরূপ (এক সাথে দুইটি খেজুর বা খোরমা) ভক্ষণ
করা মাকরূহ হইবে না।
কোন মেহমানের জন্য মেজবানের নিকট নিজের ইচ্ছামত খানা তলব করা উচিত নহে। কারণ
তাহা মেজবানের জন্য অসুবিধা কারণ ঘটাইতে পারে এবং ইহা তাহার অপ্রীতিকর ব্যাপারও
বটে। সুতরাং মেহমানের উচিত মেজবানের যাহা সরবরাহ করে, খুশী মনে তাহাই আহার করা।
হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করিয়াছেন, আমি এবং আমার পরহেজগার উম্মগণ যে কোন ক্ষেত্রে
বাড়াবাড়ি বা সীমাতিরিক্ত কাজ অপছন্দ করি। অবশ্য মেজবান যদি মেহমানের নিকট খাবার
দ্রব্যে তাহার রুচি এবং পছন্দ-অপছন্দের কথা জিজ্ঞাসা করে তবে তাহা প্রকাশ করায় দোষ
নাই।
খাদ্য দ্রব্যে কোন বিষাক্ত প্রাণী পড়িলে বা মুখ দিলে তাহা পানাহার করা
হারাম। যেমন সর্প, বিচ্ছু ইত্যাদি। কোন আহার্য বা পানীয় দ্রব্যে মাছি পতিত হইয়া উহার
উভয় পাখা উহার ভিতরে ডুবাইয়া দিলে মাছিটি ফেলিয়া দিয়ে উহা পানাহার করা জায়েয।
খানা-পিনার কালে এক আদম হইল এই যে, কেহ যখন আহার করিতে থাকে তখন তাহার
আহারের দিকে তাকাইয়া থাকিবে না।
বিবাহের জিয়াফতে দাওয়াত করিলে তাহাতে যোগদান কার মুস্তাহাব। অনুষ্ঠানে
যোগদান করিয়া ইচ্ছা হইলে খানা খাইবে, না হইলে খাইবে না। (তাহাতে দোষ নাই কিন্তু)
নব-দম্পতির জন্য দোয়া করিয়া আসিবে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি এই
দাওয়াত কবুল না করে, সে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (দঃ) এর নাফরমানী করে আর যে বিনা
দাওয়াতে জিয়াফত খাইতে যায়, সে চোর তুল্য ভিতরে প্রবেশ করে আর ডাকাত তুল্য বাহির
হইয়া যায়। এই হাদীস অবশ্য শরীয়ত সিন্ধ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য। কোন স্থানে
শরীয়ত বিরুদ্ধ কার্য হইতে দেখিলে সেখান হাইতে চলিয়া আসিবে। গান-বাজনা, ঢোল,
ঢাক-বাঁশী, নৃত্য ইত্যাদি শরীয়ত বিরোধী কাজ। কেবল দফ বাজানো বিহারে অনুষ্ঠানে
জায়েয আছে।
হযরত শিউলী (রহঃ) এর নিকট লোকজন জিজ্ঞাসা করিয়াছিল গান শুনা জায়েয কিনা?
তিনি জবাবে বলিলেন, না, জায়েয নয়।
খানা শুরু করিবার কালে ও খানা খাওয়ার পরে উভয় হাত ধৌত করা মুস্তাহাব। কাঁচা,
পিয়াজ-রসুন ভক্ষণ করা মাকরূহ, কারণ ইহাতে দুর্গন্ধ বিদ্যামান। হুযুর পাক (দঃ)
এরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি দুর্গন্ধ যুক্ত শাক-সবজি আহার করে সে যেন মসজিদে
প্রবেশ না করে।
পেটে বদহজমি হইতে পারে এত বেশী পরিমাণ মাকরূহ। মেজবানের অনুমতি ব্যতীত এক
মেহমানের খানা অন্য মেহমানকে প্রদান করা মাকরূহ। কারণ মেজবানের খাদ্যের উপর
মেজমানের শুধু নিজেরর খাইবার হক রহিয়াছে। অন্যকে প্রদান করার হক নাই।
খানা মেহমানের সামনে রাখিলেই সে খানা শুরু করিতে পারে তজ্জন্য মেজবানের নিকট
হইতে অনুমতি গ্রহণ করার প্রয়োজন করে না।
কোন কিছু পান করিবার কালে উহা এক এক ঢোক করিয়া পান করিবে। বন্য পশু বা অন্যান্য জীব জন্তুর ন্যায় একসাথে দীর্ঘটানে
পান করিবে না। বরং তিনবার শ্বাস লইয়া তিন ঢোকে পান করিবে। আর শুরু করিবার কালে
বিসমিল্লাহ এবং পান শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলিবে।
মোট কথা পানাহারের মধ্যে বারটি আদব। উহার মধ্যে চারটি ফরজ। চারটি সুন্নত এবং
চারটি মোস্তাহাব।
ফরজ চারটি এইঃ আহার্য বা পানীয় বস্তু হালাল হওয়া, খাইবার কালে আল্লাহর নাম
উচ্চারণ করা, সন্তষ্টির সাথে পানাহার করা এবং খাইবার পরে আল্লাহর শোকর করা।
সুন্নত চারটি এইঃ বাম পায়ের উপর ভর দিয়া খাইতে বসা, তিন আঙ্গুল দ্বারা আহার
করা, সম্মুখের দিক হইতে খাইতে শুরু করা এবং আঙ্গুলসমূহ চাটিয়া খাওয়া।
মুস্তাহাব চারটি এইঃ ছোট ছোট লোকমা লওয়া, আহার্য দ্রব্য উত্তমরূপে চিবাইয়া
খাওয়া, খাইবার সময় মানুষের মুখের দিকে দৃষ্টিপাত না করা এবং কোন কিছুর সাথে ঠেস
দিয়া বসিয়া আহার করা।
গুনিয়াতুত্ব-ত্বালেবীন
নাজাত লাভের একমাত্র সম্বল [প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড]
মূলঃ অলীকুল শিরমণি গাউছুল আজম বড়পীর হযরত আবদুল
কাদের জিলানী (রহমাতুল্লা-হি ‘আলাইহি)
অনুবাদঃ এ, এন, এম, ইমদাদুল্লাহ ; সম্পাদনা ও পরিমার্জনাঃ
মরহুম মাওলানা শাহ ওয়ালীউল্লাহ।
খুব সুন্দর শিক্ষামূলক ইসলামিক উপদেশ বাণী। এই ধরনের শিক্ষামূলক ইসলামিক গল্প, মোটিভেশনাল উক্তি এবং রহস্য গল্প পড়তে ভিজিট করুন অনুপ্রেরণা ডটকম।
ReplyDelete