পেশাব পায়খানা, ঢিলা কুলুক, মিসওয়াক সম্পর্কে ইসলামের বিধি বিধান
অনুচ্ছেদঃ ৬। কিবলামুখী হয়ে পায়খানায় বা পেশাবে বসা নিষেধ
৮। আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন মলত্যাগ বা পেশাবের সময় কিবলাকে সামনে বা পেছনে রেখে
বসো না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে
ফিরে বস। আবূ আইয়ূব (রাঃ)বলেন,আমরা সিরিয়াতে এসে দেখতে পেলাম এখানকার পায়খানাগুলো
কিবলার দিকে করে স্থাপিত। অতএব আমরা কিবলার দিকে হতে ঘুরে
যেতাম এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা চাইতাম। -সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩১৮), বুখারী ও মুসলিম।
আবূ ঈ‘সা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে ‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিস, মা‘কিল ইবনু আবুল হাইসাম, আবূ উমামা, আবূ হুরাইরা
ও সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ)-এর হাদীসও
রয়েছে। আবূ ‘ঈসা বলেন, এ
অনুচ্ছেদে আবূ আইয়ূবের হাদীসটি বেশি সহীহ এবং সর্বোত্তম। আবূ আইয়ূবের নাম
খালিদ ইবনু যাইদ এবং যুহ্রীর
নাম মুহাম্মদ ইবনু মুসলিম ইবনু উবাইদুল্লাহ ইবনু শিহাব আয -যুহরী। তাঁর উপনাম আবূ বাক্র। আবুল ওলীদ আল –মক্কী বলেন, আবূ
‘আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ আবনু ইদরীস শাফিঈ বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীঃ “মলত্যাগ বা পেশাবের সময় ক্বিবলাকে সামনে বা পেছনে
রেখে বসবে না” – এ নিষেধাজ্ঞা খোলা ময়দানের জন্য। কিন্তু ঘরের মধ্যে মলত্যাগের সময় ক্বিবলাকে সামনে
রেখে বসার অনুমতি রয়েছে। ইসহাক ইবনু ইবরাহীমও একই রকম মত দিয়েছেন। আহমাদ ইবনু হাম্বল বলেছেন, ক্বিবলাকে পেছনে রেখে মলত্যাগ-পেশাবে বসার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি রয়েছে,কিন্তু ক্বিবলাকে সামনে করে বসা যাবে না।তাঁর মতে, খোলা জায়গার অথবা ঘেরা জায়গার ক্বিবলাকে সামনে রেখে বসা ঠিক নয়।
অনুচ্ছেদঃ ৮। দাঁড়িয়ে পেশাব করা নিষেধ
১২। আয়িশাহ্ (রাঃ) হবে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন, যে লোক তোমাদেরকে বলে,
নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন, তার কথা তোমরা বিশ্বাস কর না। তিনি সব সময় বসেই
পেশাব করতেন। - সহীহ। ইবনু মাহা- (৩০৭)।
এ অনুচ্ছেদে ইমার, বুরাইদা এবং আব্দুর রহমান ইবনু হাস্নাহ (রাঃ)-এর হাদীস রয়েছে। আবূ ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে আয়িশার হাদীস অধিকতর উত্তম ও সবচাইতে
সহীহ। উমারের বর্ণিত হাদীস হলঃ উমার (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখেন। তিবি বলেনঃ হে উমার! দাঁড়িয়ে পেশাব কর না। (উমর বলেন,) অতঃপর আমি আর
কখনো দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি।
আবু ঈসা বলেনঃ শুধুমাত্র
আব্দুল কারীম ইবনু আবীল মুখারিক হাদীসটিকে মারফূরূপে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি মুহাদ্দিসদের
মতে যঈফ। আইয়ুব সাখ তিয়ানী তাঁকে যঈফ বলেছেন এবং তাঁর সমালোচনা করেছেন। অপর এক বর্ণনায়- ইবনু উমার হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উমার (রাঃ)
বলেছেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর কখনও দাঁড়িয়ে
পেশাব করিনি।
এ হাদীসটি আবদুল কারীমের
বর্ণিত হাদীস হতে অধিক সহীহ। এ অনুচ্ছেদে বুরাইদার হাদীস অরক্ষিত। দাঁড়িয়ে পেশাব করা
নিষিদ্ধ হওয়ার তাৎপর্য হল, এটা
প্রচলিত নিয়ম বিরোধী, তবে হারাম নয়।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊস (রাঃ) বলেনঃ তোমার দাঁড়িয়ে
পেশাব করাটা একটা বেয়াদবী।
অনুচ্ছেদঃ ৯। দাঁড়িয়ে পেশাব করার অনুমতি সম্পর্কে
১৩। হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কোন এক সম্প্রদায়ের আবর্জনা রাখার
স্থানে আসেন এবং সেখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করেন।অতঃপর
আমি তাঁর পানি আনি। আমি অপেক্ষা করার জন্য একটু দূরে সরে দাঁড়াই। তিনি আমাকে ডাকলেন এবং আমি এসে তাঁর পায়ের সামনে
দাঁড়ালাম। তিনি ওযূ করলেন এবং মোজার উপর মাসিহ করলেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩০৫)।
অনুচ্ছেদঃ ১২। পাথর বা ঢিলা দিয়ে ইস্তিনজা করা
১৬। আবদুর রাহমান ইবনু
ইয়াযীদ (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, সালমান (রাঃ)-কে বলা হল,
আপনাদের নাবী প্রতিটি বিষয় আপনাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন; এমনকি পায়খানা-পেশাবের শিষ্টাচারও। সালমান (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ, তিনি আমাদের কিবলামুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করতে, ডান হাত দিয়ে ইস্তিনজা করতে,
আমাদের কাউকে তিনটি ঢিলার কম দিয়ে ইস্তিনজা করতে এবং শুকনা গোবর অথবা
হাড় দিয়ে ইস্তিনজা করতে নিষেধ করেছেন।–সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩১৬), বুখারী ও মুসলিম।
অনুচ্ছেদঃ ১৪। যেসব বস্তু দিয়ে ইস্তিনজা করা মাকরূহ
১৮। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শুকনা গোবর দিয়ে
আর হাড় দিয়ে ইস্তিনজা করবে না। কেননা এগুলো তোমাদের ভাই জ্বিনদের খাদ্য। -সহীহ। আল –ইরওয়া –(৪৬), মিশকাত –(৩৫০), যাঈফাহ-(১০৩৮) এর অধীনে।
২১। আবদুল্লা ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে নিজের গোসলখানায়
পেশাব করতে নিষেধ করেছেন।তিনি আরো বলেছেনঃ (মানুষের মনে) বেশিরভাগ ওয়াসওয়াসা
তা হতেই সৃষ্টি হয়।–প্রথম অংশ সহীহ, দ্বিতীয় অংশ যঈফ। ইবনু মাজাহ –(৩০৪)।
অনুচ্ছেদঃ১৮। মিসওয়াক করা বা দাঁত মাজা
২২। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের জন্য
কষ্টদায়ক হবে মনে না করলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।–সহীহ। ইবনু মাজাহ-(২৮৭), বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ আত্-তিরমীযী [প্রথম খণ্ড]
মূল: ইমাম হাফিয মুহাম্মদ বিন ঈসা সাওরাহ আত্-তিরমিযী (রহিমাহুমুল্লাহ)
তাহকীক: মোহাম্মদ নাছিরুদ্দীন আলবানী
অনুবাদক ও সম্পাদনায়: হুসাইন বিন সোহরাব, হাদীস বিভাগ- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনাহ্ সৌদীআরব এবং শাইখ মোঃ ঈসা মিঞা বিন খলিলুর রহমান মুনতাব শররীআহ্ বিভাগ- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনাহ্, সৌদী আরব।
ধন্যবাদ ভাই এই সুন্দর পোস্ট করার জন্য
ReplyDelete