Banners

বেহেশতের উড়ন্ত ব্যক্তি / দুই পাখা বিশিষ্ট ব্যক্তি! The flying person of heaven / the person with two wings!

মুয়াবিয়ার পত্রের প্রত্যুত্তর
        তোমার পত্র আমার কাছে পৌছেছে পত্রে তুমি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছো যে, আল্লাহ্ মুহাম্মদ  (সঃ) তাঁর দ্বীনের জন্য মনোনীত করেছিলেন এবং সাহাবা দ্বারা তাঁকে সাহায্য করেছিলেন আশ্চর্যের বিষয় হলো, তুমি তোমার সম্বন্ধে সব কিছু গোপন করে আমাদের জন্য আল্লাহ্র বিচারের কথা বলতে শুরু করেছো এবং রাসুল সম্পর্কে আমাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করছো তোমার এ হাস্যষ্পদ  কথা ঐ লোকটির মতো যে হাযারে খেজুর বহন করে আনে অথবা সে লোকটির মত যে ধনুর্বিদ্যায় তার ওস্তাদকে চ্যালেঞ্জ করে
          তুমি মনে কর অমুক অমুক ইসলামে খুবই বিশিষ্ট ব্যক্তি তুমি এমন বিষয় কথা বলছো যা সত্য হলে তাতে তোমার কিছু করণীয় নেই আর মিথ্যা হলে সে ক্রটিতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না কে ভালকে মন্দ অথবা কে শাসক, কে শাসিত এসব প্রশ্নে তোমার প্রয়োজন কি? প্রথম মুহাজিরগণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা এবং তাদের অবস্থান বা পদবী নির্ধারণে সাধারণ ক্ষমার অন্তভূর্ক্ত লোক ও তাদের পুত্রগণের কাজ কি? কি আফসোস, একটি নকল তীর আসল তীরের শব্দ সৃষ্টি করছে এবং যার বিচার হবার কথা সে আজ বিচারকের আসনে বসে আছে হে লোক, তুমি কেন নিজের পঙ্গুত্বে দেখ না এবং নিজের গণ্ডির মধ্যে থাক না তুমি কেন নিজের হীনতা ও ক্রুটি অনুধাবন কর না এবং নিয়তি তোমাকে যেখানে রেখেছে সেখানে থাক না পরাজিতের পরাজয়ে বা বিজয়ীর বিজয়ে তুমি ধর্তব্য নও

আল্লাহ সিংহ, বেহেশতের উড়ন্ত ব্যক্তি, মুয়াবিয়ার চিঠির উত্তর,

          তুমি বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়াচ্ছো এবং ন্যায়ের পথ ছেড়ে পথভ্রষ্টতার নিপতিত হয়েছো তুমি কি এটা অনুধান করতে পার না? আমি তোমাকে কোন খবর দিচ্ছি না; আমি শুধু আল্লাহ্র রহমত তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, আনসার ও মুহাজেরদের অনেকেই মহিমান্বিত আল্লাহ্র রাস্তায় শহীদ হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কিন্তু আমাদের একজন যখন শাহাদত  বরণ করেছিল তখন তাকে  শহীদদের প্রধান বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল এবং আল্লাহ্র রাসুল তার দাফনের সময় সত্তর বার তকবীর (আল্লাহু আকবার) ধ্বনি করে তাকে বিশেষ  সম্মানে ভূষিত করেছিলেন তুমি জানো না যে, আল্লাহ্র রাস্তায় অনেকেই তাদের হাত হারিয়েছিল এবং তারা সকলেই বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কিন্তু আমাদের একজন যখন তার হাত হারিয়েছিল তখন তার নাম রাখা হয়েছিল, বেহেশতের উড়ন্ত ব্যক্তি এবং দুই পাখা বিশিষ্ট ব্যক্তি আত্ম-প্রশংসা যদি আল্লাহ্ নিষিদ্ধ  না করতেন তবে আমি আমাদের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে অনেক কিছু লিখতাম যা মুমিনগণের ভালবাভে জানা আছে এবং যা মুমিম শ্রোতাগণ কখনো ভুলে যাবার ইচ্ছা করে না

আল্লাহ সিংহ, বেহেশতের উড়ন্ত ব্যক্তি, মুয়াবিয়ার চিঠির উত্তর,
          যাদের তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট তাদের সঙ্গে কথা না বলাই ভাল আমরা হলাম সরাসরি আল্লাহ্র নেয়ামত ও রহমতের গ্রহীতা অপরপক্ষে অন্যরা আমাদের  কাছে থেকে তা পেয়ে থাকে তোমাদের চেয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের সুপ্রতিষ্ঠিত  সম্মান ও সুপরিজ্ঞাত প্রাধান্য সত্বেও আমরা তোমাদের সাথে মেলামেশা ও বিবাহ বন্ধন করা হতে বিরত থাকিনি আমরা তোমাদেরকে সমান মনে করতাম যদিও বাস্তবেব তোমরা তা ছিলে না আর কি করেই বা তোমরা সমাব হবে যেখানে আমাদের মাঝে রয়েছে আল্লাহ্র রাসূল আর তোমাদের মাঝে তার বিরোধীরা; আমাদের মাঝে আল্লাহ্র সিংহ আরা তোমাদের মাঝে বিরোধী দলের সিংহ, আমাদের মাঝে বেহেশতের যুবকদের দুজন মনিব আর তোমাদের মাঝে দোযখের সন্তান; আমাদের মাঝে জগতের সেরা নারী আর তোমাদের মাঝে জ্বালানী কাঠ বহনকারিনী; এভাবে আমাদের রয়েছে হাজারো বৈশিষ্ট্য আরা তোমাদের রয়েছে অসংখ্য দোষ-ক্রুটি ও হীনতা

          আমাদের ইসলাম  সুপরিজ্ঞাত এবং আমাদেরকে প্রাক-ইসলামী কালেও কেউ অস্বীকার করতে পারেনি যা অবশিষ্ট রয়েছে তা মহিমান্বিত আল্লাহ্র কথায় উল্লেখ করা যায়ঃ
      আল্লাহ্র কিতাব অনুসারে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়গণ একে অপরের জন্য অধিকতর ঘনিষ্ট” (কুরআন- ৩৩:)
মহিমান্বিত আল্লাহ্ আরো বলেছেনঃ
          নিশ্চয়ই, মানুষের মধ্যে তারাই ইব্রাহীম ও এ নবীর (মুহাম্মদ) সব চাইতে নিকটবর্তী যারা তাঁকে অনুসরণ করেও বিশ্বাস করে; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মুমিনগণের অভিবাবক” (কুআরন- :৬৮)
          এভাবে আমরা জ্ঞাতিত্ব ও আনুগত্য উভয় দিকেই তোমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ সকিফায় (বনু সায়দার) যখন মুহাজিরগণ আল্লাহ্র রাসুলের জ্ঞাতিত্বের কথা বলে আনসারদের সাথে প্রতিযোগিতা করে  কৃতকার্য   হয়েছিল তখন সে অধিকার আমাদের তোমাদের নয় একথা স্বীকার না করলে আনসারদের বক্তব্য সঠিক বলে প্রতিষ্ঠিত  হবে তুমি মনে কর যে, আমি প্রত্যেক খলিফার প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ ছিলাম এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলাম তোমার এ ধারণা সঠিক হলেও এটা তোমার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ নয় এবং সেহেতু এতে তোমাকে ব্যাখ্যা দেয়ার মত কিছু নেই
          তুমি বলেছো যে, আমাকে উটের মত নাকে দড়ি দিয়ে আবু বকরের নিকট আনুগত্যের শপথ গ্রহণের জন্য টেনে-হেচঁড়ে নিয়ে গেছে চিরন্তন আল্লাহ্র কসমতুমি এ কথা দ্বারা আমাকে তীব্রভাবে গালাগালি করার ইচ্ছা পোষণ করেছো প্রকৃতপক্ষে তোমার একথা দ্বারা আমার  প্রশংসা ব্যক্ত করেছো  আমাকে অপদস্থ করতে গিয়ে তুমি নিজেই অপদস্ত হয়েছো একজন মুসলিম অত্যাচারের শিকার হলে তাতে তার কি কোন অবমাননা হয়?

        একজন মুসলিমের পক্ষে দ্বীনে সন্দেহ পোষণ করা বা তার দৃঢ় ইমানে ফাটল ধরা প্রকৃতপক্ষে অবমাননাকর আমার এ যুক্তি অন্যদের জন্য হলেও তোমার বেলায় প্রযোজ্য বলে ব্যক্ত করলাম
         তৎপর তুমি উসমান ও আমার মর্যাদা সম্পর্কে লিখেছো এ বিষয়ে তুমি একটা উত্তর পেতে পার; কারণ উসমান তোমার জ্ঞাতি সুতরাং এখন তুমি আমাকে বল, তোমাদের মধ্যে কে উসমানের প্রতি বেশী শত্রু ভাবাপন্ন ছিল এবং উসমানের হত্যা সংঘটিত করা কার ভূমিকা বেশী ছিল অথবা তুমি আমাকে বল, কে তাকে সমর্থন দিতে গেলে অন্যজন তা থামিয়ে দিয়েছে; অথবা কে সে ব্যক্তি যকে সে সাহায্যের জন্য আহ্বান করেছিল; কিন্তু সে মুখ ফিরিয়ে চলে গেল এবং তার মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে এসেছিল? না, না; আল্লাহ্র কসমঃ
         আল্লাহ্ অবশ্যই জানেন তোমাদের মধ্যে  কারা বাধা দেয় এবং তাদের ভ্রাতৃগণকে বলে, ‘আমাদের সঙ্গে আসোউহারা অল্পই যুদ্ধে অংশ নেয় (কুরআন- ৩৩:১৮)
          তার বিদাতের জন্য আমার ওজর দেখিয়ে আমি তাকে তিরস্কার করতে যাচ্ছি না কারণ তার প্রতি আমার উত্তম পরামর্শ ও হেদায়েত যদি পাপ হয়ে থাকে তবে প্রায়শই যে ব্যক্তিকে দোষারোপ করা হয় তার কোন পাপ নেই প্রবাদে আছে কখনো কখনো উদেষ্টার একমাত্র পুরস্কার হলো  মন্দের সন্দেহ
          আমি সংস্কার ছাড়া কোন কিছুই আশা করিনি যা আমি করতে সমর্থ; এবং আমার হেদায়েত আল্লহ্ প্রতি আহবান ছাড়া অন্যকিছু নয়; আমি তাঁর উপর নির্ভর করি এবং তাঁর প্রতি আমার প্রত্যাবর্তন (কুরআন- ১১:৮৮)
          তুমি লিখেছো আমি ও আমার অনুসারীদের জন্য তোমার তরবারি রয়েছে তোমার এ কথা ক্রন্দনরত লোকও হাসবে তুমি কি কখনো দেখেছো আবদাল মুত্তালিবের বংশ কখনো যুদ্ধ হতে পালিয়ে গেছে? অতবা তরবারিকে ভয় পেয়েছে? “হামাল, যুদ্ধে যোগদান করা পর্যন্ত অপেক্ষা কর সহসাই তুমি যাকে খুঁজছো (যুদ্ধ) সে তোমাকে খুঁজবে, তুমি যাকে দূরে ভাবছো সে তোমার নিকটে পৌছাবে সহাসাই আমি মুহাজির ও আনসার বাহিনী নিয়ে তোমার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাব এবং যারা তাদের অনুসরণ করবে তারা সকলেই ধার্মিক তাদের সংখ্যা হবে বিশাল এবং তাদের পায়ের আঘাতে ধুলি চতুর্দিকে অন্ধকার করে দেবে তারা তাদের কাফন পরিহিত থাকবে এবং তাদের ঐকান্তির আকাঙ্খা আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাত তাদের সাথে থাকবে বদরীদের বংশধর এবং তাদের হাতে  থাকবে হাশিমীদের তরবারি যে তরবারির কাটা তুমি তোমার ভাই, মামা, দাদা ও জ্ঞাতি-গোষ্ঠির বেলায় নিজেই প্রত্যক্ষ করেছো

          তারা অন্যায়কারীদের থেকে অনেক দূরে নয় (কুরআন- ১১:৮৩)


নাহ্ আল-বালাগা
আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব
সংঙ্কলনঃ আশ-শরীফ আর-রাজী
ইংরেজি অনুবাদঃ সৈয়দ আলী রেজা
বাংলা অনুবাদঃ জেহাদুল ইসলাম
পৃষ্ঠা নং-৩২৯; পত্র নং-২৮

1 comment:

  1. আহলে বাইয়াতের মোহাব্বত নিয়ে যেন মৃত্যু হয় আমার

    ReplyDelete

Powered by Blogger.