গাউসে পাকের মুরীদের মর্যাদা - ২য় পর্ব (শেষ পর্ব)
২। গাউসেপাক বলেন- মুরদি
লা-তাখাফ আল্লাহুরাব্ব,
আতানী রিফ আতান নিল্তুল মাআলী।
(কাসিদায়ে গাউসিয়া)
অর্থঃ হে আমার মুরীদ! তোমাদের কোন ভয় নেই। আল্লাহ
মালিক (রব) আমার। তিনি আমাকে উচ্চ মযাদা দিয়েছেন (উন্নত করিয়াছেন) আমি উচ্চ স্তর (মাকাম)
পাইয়াছি।
ব্যাখ্যা বা সবকঃ এ কাসিদা পংক্তিতে গাউসুল আযম বলতে চাচ্ছেন আল্লাহ
তায়ালার মারিফাতে যত জালালিয়াত, কামালিয়াত, সুউচ্চ মাকাম, মঞ্জিল রয়েছে সবই আমি অতিক্রম
করেছি এবং আল্লাহ তায়ালা আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং মওলা আলীর মাধ্যমে বেলায়েতের
সম্রাট বানিয়ে দিয়েছেন। তাই হে আমার মুরীদ!
আমার বেলায়েতী কুদরতী শক্তি দ্বারা আমি তোমাদের সকল অভাব পূরণ করিতে পারিব। তোমরা মৃত্যুকালে,
কবরে, মিযানে, হিসাবের ময়দানে (হাশরে), পুলসিরাতে ভয় করিও না এবং দুনিয়াতে সাংসারিক
কোন বিষয়েও ভয় করিও না। তোমাদের দুঃসময়ে অবশ্যই আমি বন্ধু হিসাবে সাহায্য করবো।
৩। হুজুর গাউসে সাকলায়েন,
রওশন জমির বলেন- যদি আমার কোন মুরীদ পৃথিবীর
পশ্চিম প্রান্তে অবস্থান করে এবং তার সতর খুলে যায় আর এ অবস্থায় আমি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে
অবস্থান করি, তাহলে আমি সেখান থেকেই তার সতর ঢেকে দিই।
কিছু মাশায়েখ কেরাম বর্ণনা করেন, গাইসে পাক বলেছেন
– যদি আমার নাম স্মরণকারী কারো দোষ-ক্রটি বা গুনাহ্ পশ্চিম প্রান্তে প্রকাশ পায় তখন
আমি পূর্বপ্রান্তে থাকি, তবুও আমি ওর হেফাজতের জিম্মাদার হবো এবং দোষ-ক্রটি গোপন করবো। (বাহজাতুল আসরার ৯৯ পৃষ্ঠা, তাকরিহুর খাতিয়া ৫৩
পৃষ্ঠা, আখবারুল আখইয়ার ২৫ পৃষ্ঠা, সফিনাতুল আউলিয়া ৬৯ পৃষ্ঠা, তোহফায়ে কাদেরীয়া ৩৮
পৃষ্ঠা)।
৪। উপমহাদেশের বিখ্যাত
হাদিসবেত্তা শায়খুল মুহাদ্দেসিন ইমামুল মুহাক্কেকিন হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস
দেহলভী (রাঃ) বর্ণনা করেন – ইরাকের বিখ্যাত ওলি শায়েখ হযরত আবুল কাসেম ওমর বায্যার
বলেছেন- সেয়্যেদেনা গাউসুল আযম দস্তগীরকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল – যদি কোন ব্যক্তি আপনাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ
করে, কিন্তু আপনার মুরীদ হবার সৌভাগ্য হয়নি বা আপনার থেকে খেলাফতের খেরকা (জামা) পায়নি,
সেকি আপনার সহানুভূতি লাভকারী লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবে? তিনি বলেন – যে ব্যক্তি কেবল
নামের সাথে সম্পর্ক রাখবে বা অন্তরে আমার প্রতি ভাল ধারণা পোষন করবে, আল্লাহ তায়ালা
ওর তওবা কবুল করবেন যদিও তার এই পদ্ধতি বিশুদ্ধ নয়। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তায়ালা আমার
সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমার বন্ধু-বান্ধব, ভক্ত, আমার নাম জপকারী ও আমার প্রতি
ভাল ধারণা পোষনকারীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আখবারুল আখেইয়ার (ফার্সি) পৃষ্ঠা-২৫,
কালায়েদুল মাওয়াহিব, পৃষ্ঠা-১৫, বাহজাতুল আসরার, পৃষ্ঠা-১০১, তোহফায়ে কাদেরীয়া, পৃষ্ঠা-৩৮)
৫। হযরত শায়েখ আবু সউদ
আবদুল্লাহ্, শায়েখ মুহাম্মদ আল-আউয়ালি, হযরত শায়েখ আবুল কাসেম ওমর বায্যার প্রমুখ
জগৎ বিখ্যাত মাশাযেখগণ বলেছেন – শায়েখ মুহিউদ্দিন
আব্দুল কাদের জিলানী কিয়ামত পযন্ত আগত তার সকল মুরীদের এ কথার জামিনদার যে, তাঁর মুরিদদের
কেউ তওবা ছাড়া মৃত্যুরণ করবেন না। (বাহজাতুল আসরার, পৃষ্ঠা-৯৯, কালায়েদুল জওয়াহের,
পৃষ্ঠা-১৬, আখবারুল আখইয়ার, পৃষ্ঠা-৬৫)
অপর আরেক বর্ণনায় এসেছে-
সরকারে বাগদাদ হুজুর গাউসে পাকের অনুসারী ও মুরীদগণের জন্য বিশেষ সুখবর হল যে, সরকারে
গাউসে পাক, পীরানে পীর, দস্তগীর, ক্বিনদিরে নূরানী, শাহবাজে লামাকানী বলেছেন- আমার মুরীদগণ যতিই গুণাহগার হোক না কেন, তার তওবা
না করা পযন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। (আখবারুর আখইয়ার, পৃষ্ঠা-১৯)
৬। আউলিয়াদের শিরোমনি মাহবুবে
সোবহানী, গাউসুল ওরা বলেছেন- আমাকে চোখের পরখ
এক দীর্ঘ আমলনামা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে আমার মুরীদগণের নাম লিখা আছে এবং কিয়ামত পযন্ত
আগমনকারী ভক্তদের নাম উল্লেখিত আছে। আমাকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে ওসব লোকদেরকে আমার
খাতিরে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। আমি মালেককে (দোযখের দারোগা) জিজ্ঞেস করেছি, তোমার কাছে
আমার বন্ধু-বান্ধবদের কেউ আছে কি? সে বলল না। (গাওসুল ওরা, গাউসুল আযম)
৭। আল্লাহর কসম, আমার হাত আমার মুরীদগণের উপর ঐ রকম
প্রসারিত যে ভাবে জমির উপর আসমানের ছাড়া। আল্লাহর জালালিয়াত ও ইজ্জতের কসম, আমি ততক্ষণ
জান্নাতে পদার্পন করবো না, যতক্ষণ আমি আমার সমন্ত মুরীদগণকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে
না পারবো। (বাহজাতুল আসরার, যুবদাতুল আসার)
৮। কুতুবুল আরশে ওয়াল কুরসি
ওয়াল লওহে ওয়াল কলম কুতুবুস সামাওয়াতে ওয়াল আরদ্ গাউসুল আযম বলেন- হে মানবগণ আমি আমার
জাদ্দে আমজাদ্ রাসূলে পাক (সাঃ)-এর প্রেমে এতই মশগুল যে শুনিলে তোমরা নির্বাক নিস্পন্দ
হয়ে যাবে। সরওয়ারে কায়েনাত (সাঃ) এর পবিত্র
দেহ মোবারকের নিঃসৃত ঘাম হতে যেমন সদ্যজাত প্রষ্ফুটিত গোলাপ, মেশকের স্বর্গীয় মনোহর সুগন্ধি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তো তদ্রুপ আমার
শরীর মোবারক হতে নিঃসৃত ঘামের সৌরভের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। সেরূপ তার মল-মূত্র ত্যাগের
কোন চিহ্ন মৃত্তিকায় পরিলক্ষিত হইত না, আমারও সেই প্রকার মল-মূত্র ত্যাগের চিহ্ন ভূমির
মধ্যে থাকে না। তাঁর পবিত্র শরীরে মশা-মাছি ও অন্যান্য কীট-পতঙ্গ বসিত না, তদ্রুপ আমার
অঙ্গেও কোন প্রাণী বসতে পারে না। তার পূণ্যমাখা সুধাময় স্বর্গীয় চেহারা মোবারক যে দেখেছে
তাঁর ক্রমনিম্নশীল সাত পুরুষ জান্নাতে প্রবেশ করিবে, আমার চেহারা গুণ ও তৎসদৃ। তাঁর
পৃষ্ঠদেশে মহিমারূপ হস্ত চিত্রিত উজ্জ্বল মোহরে নবুয়ত ছিল, সেই রূপ আমার স্কন্দদেশে
অক্ষয় চিত্রিত তাঁর পদধূলি সম্মিলিত “মোহরে কদম” উজ্জ্বল উদ্ভাসিত রহিয়াছে। (মেদিনীপুর
দরগাহ) গাউসে পাকের মুরীদের মর্যাদা - ১র্ম পর্ব দেখতে ক্লিক করুন
সংগ্রহঃ মুরিদের প্রতি গাউসে পাকের দয়া
লেখকঃ ইঞ্জিয়ার মোহাম্মদ তফিজ উদ্দিন কাদেরী
লেখকঃ ইঞ্জিয়ার মোহাম্মদ তফিজ উদ্দিন কাদেরী
No comments