মাওলা পাকের কারামত বা অলৌকিক ক্ষমতা
ওলীদের কারামত বা অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে আমি কিছু দিন আগে মাওলাপাক এর কিছু
কারামত উল্লেখ্য করেছিলাম, তারই ধারাবাহিকতায় আজজের এই পোষ্টটি আশা করি আপনারা পড়ে
মাওলাপাকের অশেষ দয়া করুনা কিছুটা অনুভব করতে পারবেন।
১. খাঁ বাহাদুর মৌলভী
শাহ ইব্রাহিম সাহেব স্কুল সমূহের পরিদর্শক একদিন হুজুরের ৫১ নং তালতলার বাড়ীতে আসার
পথে মনে মনে চিন্তা করেছিলেন যে, হুজুর ইংরেজি ভাষা বুঝতে পারেন কিনা। হুজুরের কাছে এসে তাঁকে সালাম জানিয়ে উঠে আসার
সময় হুজুর তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেন-
“দেখ, আল্লাহ সকল ভাষাই বোঝেন এবং তাঁর খলিফারাও
তা সমক্য অবগত। তবে আরবি আর ইংরেজি ভাষার পার্থক্য কী? অতি উচ্চ স্থরের ওলিদের কথা দূরে থাকুক, সামান্য ওলিরাও সকল ভাষাই বোঝেন; এমনকি পশুদের ভাষা পযন্ত
তাঁরা অবগত।” একথা শুনে খাঁ সাহেব স্তম্ভিত (আবাক) হয়ে গেলেন।
২. হুজুরের এক মুরিদান
জহিরউদ্দিন সাহেব একদিন মগরীবের নামাজ পড়ার সময় একসঙ্গে তসবীর দুটি দানাও গুনে ফেলেন; এ ব্যাপারে তাঁর নিজের মনেও সন্দেহ উপস্থিত হয় বটে কিন্তু
তিনি স্থির নিশ্চয় হতে পারলেন না। যাই হোক, তিনি এশার নামাজের সময় হুজুরের সামনে উপস্থিত হওয়ার মাত্র হুজুর তাঁর প্রতি
কটাক্ষ নিক্ষেপ করে বললেন – “আগামীকাল থেকে যদি একসঙ্গে তিনটি
তসবীর দানা না পড় তা হলো আরো তাড়াতাড়ি তোমার তসবী পড়া শেষ হয়ে যাবে।” একথা শুনে জহির
উদ্দিন সাহেব খুবই বিস্মত হলেন। কারণ সন্দেহ ক্রমে তিনি যে একটি তসবীর দানা পড়েন
নি একথা তিনি কারোর কাছেই প্রকাশ করেন নি।
৩. ব্যারিষ্টার ইউসুফ
আলি সাহেব হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলেন
–“হুজুর, আপনি যে সকল ভবিষ্যদ্বানী করেন,
তা কি সত্য সত্যই ঘটবে। “উত্তরে হুজুর বললেন- “তামাশা ছলেও
যদি কিছু বলি তাও হবে।” মৌলানা আবু তাহের সাহেব বলেন –“আমি এমন কখনও দেখিনি যে হুজুর যা বলেছেন তা ঘটেনি।” খান বাহাদুর আবদুর গণি সাহেব বলেন- “কোনও ব্যক্তি তার পীড়ার কথা পত্রে হুজুরের কাছে জানিয়ে সেই পত্র ডাকে দেওয়া
মাত্রই তার ব্যধির প্রকোপ কমতে থাকত এবং রোগীও সত্ব রোগমুক্ত হয়ে উঠত”।
একদিন হুজুর যখন ওজিফা (ধ্যান) করছিরেন, সেই সময় তাঁর এক খাদেম মুন্সি তহুর আলি তাঁর কাছে নিজের দুঃখের কথা বলছিল। হুজুর এত বিরক্ত
হয়ে বললেন – তহুর
আলি, বড়ই দুঃখের বিষয় যে, পীরের কাছে খাদেম
কে যে তার নিজের দুঃখের কথা বলতে নেই তুমি এখনও তা জান না। পীর সর্বজ্ঞ। যদি তোমার বিশ্বাস না হয়, পরীক্ষা করলেই জানতে পারবে। চুপ কর, তুমি আমার সময় নষ্ট করছ মাত্র।
৪. অ্যাডিশনাল ইনন্সপেকটর
অব স্কুলস মৌলিভী হাসিব-উল-হোসেনের তখন সবে নতুন বিবাহ হয়েছে এবং তিনি তখন ভবানীপুরে তাঁর শ্বশুরালয়ে
বাস করছেন। তাঁর পিতা কয়েকদিনের জন্য তাঁর কাছে থাকার পর বাড়ি ফেরার সময় ৭০ টাকা
চাইলেন। হোসেন
সাহেবের কাছে তখন একটিও পয়সা ছিল না, আবার টাকা না হলে পিতার ও চলে না। ফলে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও শ্বশুর মহাশয়ের দেওয়া সোনার চেন বন্ধক রেখে তিনি টাকাটি সংগ্রহ
করতে মনস্থ করেন। চেনটি বন্ধক দেবার জন্য তিনি যখন তাঁর পিতার সাথে নিউ মার্কেটের সামনে
এসে উপস্থি হলেন তখনই হুজুরের খাদেম রমজান মিঞাকে তাঁরা দেখতে পেলেন।
হুজুর কলকাতাতেই আছেন- রমজান মিঞার কাছে এই সংবাদ শোনার পর তাঁরা খুবই আনন্দিত
হলেন এবং চেন বন্ধক না দেয়েই সরাসরি খানকা শরীফের অভিমুখে চললেন। খানকা শরীফে উপস্থিত
হওয়া মাত্রই হুজুর তাঁদের ডেকে পাঠালেন। কিন্তু আশ্চযযের কথা এই যে, তাঁদের উপস্থিতির খবর হুজুরের কাছে পাঠানো হয় নি এবং
রজমান মিঞাও তখন পর্যন্ত বাজারে আর হুজুরও ঘরের ভিতরে অবস্থান করছে- সুতরাং হুজুরের পক্ষে সেখান থেকে তাঁদের দেখারও অবকাশ ছিল না। যাই হোক, তাঁরা সালাম করার পর হুজুর হঠাৎ তাঁর পিতার উদ্দেশে
বললন- “আচ্ছা, মৌলভী সাহেব আপনার পুত্র
এখনও ছাত্র; সে আপনাকে কোথা থেকে টাকা দেবে? আপনি আমার কাছ থেকে টাকা নিন।” এই বরে তিনি খাদেমকে ৭০ টাকা দিতে আদেশ দেন।” তারা আবার হয়ে যান; কারণ টাকার
কথা পিতা পুত্র ছাড়া আর কেউিই জানতেন না, আর পিতার প্রয়োজনও ছিল
ছিক ৭০ টাকাই।
৫. একবার হুজুরের বিনা
অনুমতিতে মৌলনা আবু তাহের খানকা শরীফের ফান্ড থেকে ৭০ টাকা ধার হিসাবে গ্রহণ করেন এবং
মনে মনে ঠিক করেন যে বাড়ী থেকে টাকা এলই তিনি ফান্ডের ঋণ পরিশোধ করে দেবেন। হুজুর তখন কলকাতায় ছিলেন
না এবং তাহের সাহেবও কারও কাছে কিছু বলেন নি। কিন্তু হুজুরের কাছ থেকে এই আদেশ এল- তুমি ফান্ড থেকে যে টাকা নিয়েছ তা আর ফেরত দিতে হবে
না। প্রত্যুত্তরে তাহের সাহেব চু করে থাকলেন। ফলে হুজুর তাঁকে
পত্রে লিখলেন- তুমি
ঐ বিষয়ে (ফান্ড থেকে টাকা নেওয়া এবং তা ফেরত না দেওয়া সম্বন্ধে
যা লিখেছিলাম) কোন জবাব দাও নি কেন? সৈয়দ আব্দুল কাদের সাহেবের কাছে ৭০ টাকা নিয়ে তোমার ফান্ড
ঠিক রাখবে। তাহের সাহেবের বিষ্ময়ের সীমা থাকল না। পরে তাহের সাহেব ঐ টকা ফেরত দিতে
চাইলে হুজুর তা কিছুতেই নিলেন না। তিনি বললেন-
“পীর আর মুরীদে কোন পার্থক্য নেই বা থাকতে পারে না; তুমি ঐ টাকা নেওয়ার জন্য কোন রকম সংকোচ করবে না।”
৬. মৌলানা আবু তাহের
খানকা শরীফের হিসাব রাখতেন এবং তিনি মাস পর পর হুজুরের কাছে হিসেব দেখাতেন। কিন্তু যখন তাঁর হিসেবে
কোনও ভুল থাকত, তাহের সাহেব হুজুরের
কাছে যাওয়া মাত্র তিনি কিছু না দেখেই তাঁকে পুরনায় হিসাব ঠিক করে লিখে আনতে বলতেন। একবার তাহের সাহেব খুব
যত্ন ও পরিশ্রম সহকারে হিসেবে প্রস্তু করে হুজুরের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু তা না দেখেই হুজুর
আবার হিসেব ঠিক করতে বললেন। তাহের সাথে বললেন- “হুজুর হিসেবে কোনও ভুল নেই”। হুজুর তাতে বিরক্ত হয়ে বললেন – নিশ্চই ভুল হয়েছে। অগত্যা তাহের সাহেব ফিরে গিয়ে পুনরায় হিসাব মেলাতে বসলেন এবং দেখলেন
এক জাযগায় তিন আনা আধ পয়সার একটা ভুল হয়েছে।
লজ্জিত তাহের সাহেব ভুল সংশোধন করে হুজুরের আছে
আনা মাত্র হুজুর জিজ্ঞাসা করলেন-
“ভুল ছিল কি না?” হুজুর প্রায়ই বলতেন
–“আমি আল্লাহর কাছে একটি পয়সার জন্যও হিসেব দিতে বাধ্য।”
৭. একবার সৈয়দ আলি হাফেজ
সাহেবের ১৫০ টাকার খুব প্রয়োজন হওয়ায় তিনি হুজুরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন- “হুজুর, মঙ্গলকোটের খাদেম নূরমোহম্মদ
মিঞাকে আপনি বলে দিন যে সে যেন আমাকে ১৫০ টাকা ধার দেয়।” হুজুর বাংলায় লিখতে জানতেন না বা শুদ্ধভাবে বাংলা বলতেও
পারতেন না। খাদেম সাহেব আবার বাংলা ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানতেন
না; তাই হুজুর মৌলবী আব্দুল লতিফ সাহেব
কে উক্ত বিষয়ে পত্রটি লেখার ভার দিলেন। লতিফ সাহেব বাইরে এসে পত্রটি লিখতে বসলেন। এমন সময় হাফেস সাহেব
তাঁর কাছে এসে অনুরোধ জানালেন যে তাঁর আরও দু একটা কথা ঐ পত্রে লিখে দিতে হবে। লতিফ সাহেব তাতে রাজি
হলেন না এবং জানিয়ে দিলেন যে ঐ রূপ লিখে দেবার হুকুম নে। উত্তরে হাফেস সাহেব বললেন – ঐরূপ না লেখারও হুকুম নেই। অগত্যা লতিফ
সাহেব তাঁর পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে তাঁর কথাটি লিখলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, পত্রখানি হুজুরের হাতে দেওয়া মাত্র ঠিক বাড়তি সেই
কয় লাইনের ওপর আঙুল দিয়ে হাফেস সাহেবের দিকে তিনি রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিজ্ঞাসা
করলেন- “তুমি তো আইনও পড়েছ।”
হাফেস
সাহেব উত্তরে বললেন- “হুজুর
সৈয়দ সাহেবের অত্যাধিক অনুরোধে পড়ে আমাকে ঐ লাইন কটি লিখতে হয়েছে। যা হোক আমি যখন লিখি, তখন এই ভেবেছিলাম যে হুজুর যদি অনুমোদান না করেন তা
হলে আমি ঐ লাইন গুলো কেটে দিব। হুজুর বললেন- “আমার অনুমোদনের কথা নয় – যখন তুমি লিখেছ তখন থাকুক, কিন্তু আমার সুষ্পষ্ট আদেশ ব্যতীত ভবিষ্যতে আর কখনই ঐরূপভাবে একটি কথাও লিখবে না।”
৮. শাহ জহিরুদ্দিন সাহেব রাত্রে ৫১ নং তালতলা লেনে খানকা শরীফের সিঁড়িতে বসে কাশফ-উল-কুবুরের (পরলোক বৃত্তান্ত জ্ঞান) দোয়া অভ্যাস করছিলেন; এমন সময় তাঁর মনে হল যেন তাঁর দিকে কতকগুলি সৈনিকাকৃতি পুরুষ আসছে। এই দৃশ্য দেখে তিনি অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়লেন। কিন্তু তৎক্ষনাৎ হুজরা পাক থেকে হুজুরের উৎসাহবানী শুনতে পেলেন- মিঞা জহিরুদ্দিন ভয় নেই। এতে তাঁর হৃদয়ে সাহসের সঞ্চার হল এবং তিনি সরাসরি তাদের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন; কিছুক্ষণের মধ্যে তারা অদৃশ্য হয়ে গেল। হুজুরের হুজরা পাকের দরজা বন্ধ ছিল; এবং হুজরাপাক ও জহিরুদ্দিন সাহেব যেখানে বসে ছিলেন তার মধ্যে আরও একখানি ঘরের ব্যবধান ছিল।
৯. একদিন শাহ জহিরুদ্দিন সাহেবকে হুজুর বললেন – “মিঞা জহিরুদ্দিন, আমি তোমাকে আমার খলিফা নিযুক্ত করলাম। তুমি সাধারণকে ধর্ম ও আধ্যাত্ম বিষয়ক উপদেশাবলী দান করে তাদের দীক্ষিত কর। বড় মৌলভী (মৌলনা আবু তাহের) সাহেবের কাছ থেকে একখান খেলাফাৎ নামা (প্রতিনিধি- পত্র) লিখিয়ে নিয়ে এসো আমি তাতে সাক্ষর করে দেব। এই বলে হুজুর পায়খানায় গেলেন। কিন্তু জহিরুদ্দিন সাহেব সেখানেই অপেক্ষা করতে লাগলেন; এবং মনে মনে ভাবলেন- যদি হুজুরের খেলাফাৎ নামাই পাই তাহলে হুজুরের স্বহস্তে লেখাই নেব, অপরের হাতের নেব না। কিন্তু কী আশ্চযের বিষয়, হুজুর পায়খানা থেকে বের হয়ে তাঁর পিঠে হাতে রেখে বললেন – “আচ্ছা, মিঞা জহিরুদ্দিন তুমি যদি মৌলভী সাহেবের কাছে যেতে না চাও, আমি নিজেই তোমাকে খেলাপৎ নামা লিখে দেব।”
১০. মুন্সি আক্তার আলি সাহেব একদিন হুজুরের অনুচরবর্গের জন্য পাঁচ পোয়া চাল ও সেই পরিমান রান্নার
সামগ্রী দিয়ে রান্না করে হুজুরের কাছে তা হাজির করলেন। এদিকে হুজুর ইচ্ছা প্রকাশ করলেন যে সেখানে উপস্থিত
দর্শনার্থীরাও সেই অন্নব্যঞজন গ্রহন করেন। সে দিন বত্রিশ জন দর্শনার্থী ছিলেন আর হুজুরের
অনুচর বর্গের সংখ্যা ছিল আটজন। এত অল্প পরিমান অন্নতে যে এত অধিক
সংখ্যক লোক খাওয়ানো যে অসম্ভব তা হুজুরকে জানান হল। হুজুর বললেন- আল্লাহর ইচ্ছা করলে, ঐ খাদ্যেই
সকলের তৃপ্তি সহকারে ভোজন হবে। এর পর তিনি তাঁর
খাদেম মিঞা মহম্মদ রমজানের মারফতে স্বয়ং অন্ন ব্যঞ্জনাদি পরিবেশন করতে লাগলেন। ফল হল এই যে, কেবরমাত্র দর্শনার্থী ও সহচর বৃন্দের যে পরিতৃপ্তি সমেত আহার হল তাই নয়,
যা উদ্ধৃত্ত রইল তাতে আরও কয়েক জনের উদর পূর্ণকারে ভোজন হতে পারত।
১১. খানকা শরীফে আসা
অতিথিদের এবং আধিবাসীদের প্রতরাশ পরিবেশন ভার ছিল মুন্সি আব্দুল রব সাহেবের উপর। তাই আগের দিন রাত্রে
মিষ্টি আনিয়ে তা হুজরাপাকে রাখা হত। পরদিন হুজুর স্বয়ং তাঁর ইচ্ছামত তিনি অথবা চারটি
করে এক এক ভাগে মিষ্টি দেবার আদেশ দিতেন এবং কোনও দিনই কোনও বাবে মিষ্টি কম বা বেশি
হত না কিন্বা বিতরণ শেষ হলে কোনও মিষ্টিও উদ্ধৃত থাকত না। একদিন একভাগ বেশী হওয়ার সে ভাগে কী করতে হবে তা
স্থির করতে না পেরে মুন্সি সাহেব তা হুজুরের কাছে নিয়ে গেলেন। তখন হুজুর উত্তর দিলেন- এ ভাগ রেখে দাও, এটা যার প্রাপ্য
সে স্বয়ং এসে চেয়ে নেবে। আর হলও তাই,
ইউসুফ নামে এক খাদেম স্নান করতে গিয়েছিল, অনতিবিলম্বে
সে ফিরে এসে তার ভাগের মিষ্টি চাইল।
১২. রমজান মাসে খানকা শরীফে সরবত বিতরনের ভার ছিল মুন্সি কেরামত হোসেন সাহেবের ওপর। তাঁকে প্রতি রোজদারে সামনে আগে থেকেই সরবতের গ্লাস প্রস্তুত রাখতে হত। এই কাজ শেষ হলে হুজুর তাঁকে আরও কায়েক গ্লাস সরবত তৈরী করে রাখতে বলতেন কারণ সেগুলি ইফতারে সময় দরকার হতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, রোজদার সবদিন সামান না হলেও হুজুর সেদিন যত গ্লাস বেশি সরবত তৈরী রাখতে বলতে সেদিন তারে চেয়ে কম বা বেশী রোজদার কখনাই দেখা যেত না।
১৩. সালারের কুঁয়ার সাহেবদের খুব অনুরোধে তাঁদের বাড়ীতে মাওলাপাক কয়েকদিন অবস্থান করেন। মওলাপাক বিশেষ অনুচর মিঞা মহম্মদ রমজান শিকার খুব ভাল বাসতেন। কুঁয়ার সাহেবদের কাছ থেকে একটি বন্দুক চেয়ে নিয়ে মীর মুযাজজিম নামে একজন ভাল শিকারীর সাথে তিনি গ্রামের বাইরে শিকার করতে যান। কিন্তু প্রয়োজনের সময় গুলি বের হল না কারণ নলের ভিতরে প্রচুর ধূলো ময়লা জমে ঠিল। কাছের নদীর তীরে কতকগুলি খেজুর বাগান ছিল। রমজান মিঞা নদীর তীরে বসে একটি খেজুরের ডাল নিয়ে বন্দুক পরিষ্কার করতে লাগলেন। কিন্তু কিন্তু পরিষ্কার করতে করতে বন্দুকের নিপলটি টুক করে খসে জলে পড়ে গেল। রমজান মিঞা খুব লঞ্চল হয়ে পড়লেন, কারণ বন্দুকটি তাঁর নিজের নয়, নিপলটির জন্য পানিতে অনেক খোঁজা খুজি করলেন বটে কিন্তু কোনই ফল হল না। হতাশ ও বিষন্নভাবে লজ্জায় মাথা অবনত করে তার গ্রামের দিকে ফিরলেন। গ্রামের এমন একজনও মিস্ত্রি নেই যে, তাকে দিয়ে নিপলটি তৈরী করিয়ে নেবেন। হে আল্লাহ! যদি কলতায় থেকে এমন কোন একজন দক্ষ মিস্ত্রি এসে নিপলটি তৈরী করে দেয়, (মাঝে মাঝে কলকাতা থেকে এরকম মিস্ত্রি আসত) আমি তা হলে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পাই।
সেদিন ভীষন গরম। তাঁর কাছে একটি আম বাগান দেখে গাছের ছায়ায় গিয়ে বসলেন। ক্নিতু মতে তাঁর শান্তি নেই; শুধু সেই এক চিন্তা যদি কলকাতা থেকে এসে নিপলটি বন্দুকে লাগিয়ে দিয়ে যায়। হুজুর ইচ্ছা করলে এমনটি তো আদৌ অসম্ভব নয়। কিন্তু রমজান মিঞা বলে উঠলেন- ইয়া আল্লাহ, এখন আমার মরণ হলে লজ্জার হাত থেকে বাঁচি। এমন সময় হঠাৎ গাছের ওপর খড় খড় শব্দ হয়ে ঠিক তাঁর সামনে কছিু একটা পড়ল। কৌতুহল বশত রমজান মিঞা সেটিহাতে তুলে নিলেন। আরে- এটাই তো সে হারিয়ে যাওয়া নিপপলটি। চোখের কোনায় তাঁর আনন্দ অশ্রু চিকচিক করছে। হে গুরু! তোমার এ অপার করুণা আজ কীসে পরিমাপ করি।
কিতাবঃ মাওলা পাক (আঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনী
No comments