ইসলামের আলোকে যুদ্ধের বিধি-বিধান। Rules of war in the light of Islam.
সিফফিনে শত্রুর সাথে যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে সেনাবাহিনীকে এ নির্দেশ দিয়েছিলেন

টীকাঃ ১। সিফফিনের যুদ্ধ আমিরুল মোমেনিন ও মুয়াবিয়ার
মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধের জন্য মুয়াবিয়া এককভাবে দায়ী। কারণ সে উসমানের হত্যার জন্য আমিরুল মোমেনিনকে মিথ্যা দোষারোপ করে যুদ্ধ সংঘটিত
করেছিল। প্রকৃতপক্ষে
কে বা কারা এবং কি কারণে হত্যা করেছিল তা মুয়াবিয়ার অজানা ছিল না। সে তার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য উসমানের
রক্তের বদলা য়োর ধুয়া
তুলে বিদ্রোহ ও যুদ্ধের
পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু শরিয়তের বিধান মতে মুসলিমদের ঐকমত্যে
প্রতিষ্ঠিত সত্যের অনুসারী ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অবৈধ, যেমন-
শাসনকার্যে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো না। তাদের কোন কার্য্ ইসলাম বিরোধী এটা নিশ্চিত
না হয়ে তাদের কাজে বাধার সৃষ্টি করো না। যদি তোমার দৃষ্টিতে তাদের কোন কাজ মন্দ
বলে মনে হয় তবে সে বিষয়ে সত্য কথা বলে দিয়ো; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে উত্থান বা যুদ্ধ ঘোষণা
মুসলিমদের ইজমায় নিষিদ্ধ (নাওয়াবী ৮২, ২য় খন্ড, পৃঃ ১২৫; বাকিলানী ৯১,
পৃঃ ১৮৬; তাফতাজানী ৭৩, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৭২)।
মুসলিমদের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত-কোন ইমামের বিরুদ্ধে যে কেউ বিদ্রোহ করে সে সত্যত্যগী খারিজী বলে পরিচিত হবে। সাহাবীদের যুগে এটা প্রচলিত ছিল এবং তাদের
পরেও একথা প্রযোজ্য (শাহরাস্তানী ১৩৪,
১ম খন্ড, পৃঃ ১১৪)।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে,
মুয়াবিয়ার কর্মকান্ড ছিল আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে উন্থান ও তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। একজন বিদ্রোহীর অগ্রগতী প্রতিরোধ করার
জন্য অস্ত্রধারণ করা শান্তির পরিপন্থী কিছু নয়। বরং এটা মজলুমের স্বাভাবিক অধিকার। এ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করলে জুলুম
ও স্বেচ্ছাচারিতা
প্রতিহত করার এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করার আর কোন পথ খোলা থাকবে
না। সে কারণেই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করার অনুমতি আল্লাহ্ নিজেই দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেনঃ
যদি বিশ্বাসীগণের দু’দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়ে তবে তোমরা তাদের উভয় দলের মধ্যে মীমাংসা করে শান্তি স্থাপন করে দেবে; কিন্তু যদি তাদের একদল অপর দলকেক আক্রমণ করে তবে তোমরা সকলে মিলে আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা
আল্লাহ্র নির্দেশের দিকে ফিরে না আসে- যদি তারা ফিরে আসে তবে তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত মীমাংসা করে দিয়ো এবং এতে সুবিচার
করো। নিশ্চয়ই, আল্লাহ, সুবিচারকারীকে ভালবাসেরন (কুরআন- ৪৯:৯)।
এ কারণেই আমিরুল মোমেনিন-
“আল্লাহ্র ফজলে তোমরা ন্যায়ের পথে আছো”- মর্মে দাবী করেছিলেন। এতদসত্বেও তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনীকে উপদেশ দিয়েছিলেন যেন তাদের পক্ষ হতে যুদ্ধ সূচনা
না হয়। কারণ তিনি শুধু
আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ
করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু
যখন শান্তি-শৃংখলার জন্য তাঁর সকল প্রচেষ্টা
ব্যর্থতার পর্যবসিত হলো এবং শত্রু কোন কথা না শুনে যুদ্ধের দিকেই এগিয়ে গেল তখন জুলুম
ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিহত করার জন্য তাদের মোকাবিলা করা তাঁর দায়িত্ব হয়ে পড়েছিল যা
মহান আল্লাহ্ স্পষ্টভাবে অনুমোদন করেছেনঃ
যারা তোমাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করে, তোমরাও আল্লাহ্র পথে তাদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালঙ্ঘন করো না। আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘনকারীকে
ভালবাসেন না। (কুরআন-২:১৯০)।
এছাড়াও আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করা মানেই হলো রাসুলের (সঃ) বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করা। রাসূল
(সঃ) বলেছেণঃ
হে আলী, তোমার শান্তিই আমার শান্তি, তোমার যুদ্ধই আমার যুদ্ধ
(হাদীদ ১৫২,১৮শ খন্ড,পৃঃ২৪)।
এ কারণে রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অপরাধে যে শাস্তি প্রাপ্য আমিরুল মোমেনিনের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও এককই শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবার শাস্তি মহান আল্লাহ্ নির্ধারণ
করে দিয়েছেনঃ
যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ফেতনা সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি হলো-
তাদের হত্যা করা হবে অথবা ক্রশ বিদ্ধ করা হবে অথবা বিপরীত দিকে হতে তাদের
হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদের দেশ হতে নির্বাসিত করা হবে। ইহকালে এটাই
তাদের শাস্তি এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি (কুরআন- ৫:৩৩)।
এরূপ অনুমতি থাকা সত্বেও পলায়নোন্মুখ
ও আহত শত্রুকে হত্যা না করার জন্য আমিরুল মোমেনিন তাঁর সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর এহন নির্দেশ নৈতিক মূল্যবোধ ও জিহাদের
একটি মহোত্তম নিদর্শন। এ নির্দেশ তিনি শুধু মুখে বলেননি লিখেও দিয়েছেন। বস্তুতঃপক্ষে যুদ্ধে পলায়নপর ও অসহায় শত্রু এবং নারী হত্যা তিনি
সহ্য করতে পারতেন না। জামালের যুদ্ধে তাঁর শত্রুপক্ষের নেতৃত্বে নারী থাকা সত্বেও তিনি নীতি পরিবর্তন
করেননি। পরাজিত হবার পর তিনি আয়শাকে দেহরক্ষী দ্বারা
মদিনা প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে হাদীদ ১৫২, ১৭শ খন্ড, পৃঃ
২৫৪) লিখেছেনঃ
আমিরুল মোমেনিনের সাথে
আয়শা যেরূপ আচরণ করেছে উমরের সাথে যদি সেরূপ আচরণ করা হতো তাহলে জয়লাভের পর উমর তাকে
কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতো।
নাহ্জ আল-বালাগা
আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব
সংঙ্কলনঃ আশ-শরীফ আর-রাজী
ইংরেজি অনুবাদঃ সৈয়দ আলী রেজা
বাংলা অনুবাদঃ জেহাদুল ইসলাম
নির্দেশনামা -১৪
পত্রের শেষে ব্যাখ্যাগুলো শিয়া মতাবলম্বীদের দৃষ্টিকোণে লেখা। এগুলো সম্বন্ধে সুন্নীদের ভিন্নমত আছে। ফলে গবেষণার অনেক সুযোগ আছে। অনুবাদকের নিবেদন পড়লে আশা করি আপনারা প্রকৃত ঘটনাটি বুঝতে পারবেন।
No comments