মুনাফিক্বরাই ইমাম আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে! Hypocrites will hate Imam Ali !
অনুচ্ছেদঃ ২০।। ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা।
৩৭১২। ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) এক সময় ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-কে তাদের সেনাপতিা নিযুক্ত করেন। তিনি
সেনাদলের একটি খণ্ডাংশের (সারিয়্যা) পরিদর্শনে যান এবং এক যুদ্ধবন্দিনীর সঙ্গে মিলিত
হন। কিন্তু তার সাথীরা তার এ কাজ পছন্দ করলেন না। অতএব রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চারজন
সাহাবী শপথ করে বললেন, যখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দেখা পাব, তাঁকে তখন ‘আলীর কার্যকলাপ
প্রসঙ্গে জানাব। মুসলিমদের নিয়ম ছিল যে, তারা কোন সফর বা অভিযান শেষে ফিরে এসে সর্বপ্রথম
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে সালাম করতেন, তারপর নিজ নিজ গৃহে ফিরে
যেতেন। সুতরাং উক্ত সেনাদল ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সালাম জানায় এবং চার সাহাবীর
একজন দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! লক্ষ্য করুন, ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব এই এই
করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার দিক মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি দাঁড়িয়ে
পূর্বোক্ত ব্যক্তির মতো বক্তব্য পেশ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার হতেও মুখ ফিরিয়ে
নিলেন। এবার তৃতীয় দাঁড়িয়ে পূর্বোক্তজনের একই রকম বক্তব্য পেশ করেন এবং রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) তার হতেও মুখ ফিরিয়ে নেন। অবশেষে চতুর্থজন দাঁড়িয়ে পূর্বোক্তদের একই রকম বক্তব্য
পেশ করেন। এবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টি ভাব নিয়ে তাদের দিকে মনোনিবেশ
করে বললেনঃ ‘আলী প্রসঙ্গে তোমরা কি বলতে চাও? তোমরা ‘আলী প্রসঙ্গে তোমরা কি বলতে চাও?
(বংশ, বৈবাহিক সম্পর্ক, অগ্রগণ্যতা, ভালবাসা ইত্যাদি প্রসঙ্গে) ‘আলী আমার হাতে এবং
আমি ‘আলী (রাযিঃ) হতে। আমার পরে সে-ই হবে সমস্ত মু’মিনের সঙ্গী ও পৃষ্ঠপোষক।
সহীহঃ সহীহ
(২২২৩)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র জা‘ফার
ইবনু সুলাইমানের সনদে অবগত হয়েছি।
৩৭১৩। আবূ সারীহাহ্ অথবা যাইদ ইবনু আরক্বাম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে
যে, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ আমি যার সাথী বা পৃষ্ঠপোষক, ‘আলীও তার সাথী বা পৃষ্ঠপোষক।
সহীহঃ সহীহাহ্
(১৭৫০), রওযুন্ নাযীর (১৭১), মিশকাত (৬০৮২)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস শু‘বাহ্ আবূ ‘আবদুল্লাহ
মাইমূন হতে, তিনি যাইদ ইবনু আরক্বাম (রাযিঃ) হতে, তিনি নাবী (সাঃ) হতে একই রকম রিওয়ায়াত
করেছেন। আবূ সারীহাহ্ হলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাহাবী হুযাইফাহ্ ইবনু আসীদ আল-গিফারী
(রাযিঃ)।
অনুচ্ছেদঃ ২১।। [মুনাফিক্বরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী]
৩৭১৬। আল-বারাআ ইবনু
‘আযির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নাবী (সাঃ) ‘আলী (রাযিঃ)-কে বললেনঃ তুমি আমা হতে,
আর আমিও তোমা হতে। অর্থাৎ আমরা পরস্পরে অভিন্ন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
সহীহঃ সহীহাহ্
(৩/১৭৮), সহীহ আল-জামি’ (১৪৮৫)। এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
৩৭১৯। হুবশী ইবনু জুনাদাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেনঃ ‘আলী আমার হতে এবং আমি ‘আলী হতে। আমার কোন কাজ থাকলে আমি নিজেই সম্পন্ন
করি অথবা আমার পক্ষ তে তা ‘আলীই সম্পন্ন করে।
হাসানঃ ইবনু মাজাহ্
(১১৯)।
আবূ ‘ঈসা বলেন,
এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব।
৩৭২৪। ‘আমির ইবনু সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাহঃ) হতে তার পিতার সনদে
বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আবিয়াহ্ ইবনু আবী সুফ্ইয়ান (রাযিঃ) সা‘দ (রাযি)-কে আমীর নিযুক্ত
করে বললেন, আবূ তুরাবকে গালি দিতে তোমার বাধা দিল কিসে? সা‘দ (রাযিঃ) বললেন, যতক্ষণ
পর্যন্ত আমি তিনি কথা মনে রাখব, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সে সময় পর্যন্ত আমি তাকে
গালমন্দ করব না। ঐগুলোর একটি কথাও আমার নিকটে লাল রংয়ের উট লাভের তুলনায় বেশি প্রিয়।
(এক) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আমি ‘আলী (রাযিঃ)-এর লক্ষ্যে একটি কথা বলতে শুনেছি, সে সময়
তিনি তাকে মদীনায় তাঁর জায়গায় নিয়োগ করে কোন
এক যুদ্ধভিযানে যান। সে সময় ‘আলী (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি আমাকে শিশু
ও নারীদের সঙ্গে কি রেখে যাচ্ছেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেনঃ হে ‘আলী! তুমি কি
এতে খুশি নও যে, তোমার মর্যাদা আমার নিকট মূসা (‘আ)-এর নিকট হারূন (‘আঃ)-এর মতই? কিন্ত
(পার্থক্য এই যে,) আমার পরবর্তীতে কোন নবী নেই। (দুই) আমি খাইবারের (যুদ্ধাভিযানের)
দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ এমন এক লোকের হাতে আমি (যুদ্ধের) পতাকা অর্পণ
করব যে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল ও তাকে
মুহাব্বাত করেন। বর্ণনাকারী বলেন, প্রত্যেককে তা লাভের আশায় অপেক্ষা করতে থাকলাম। তিনি
বললেনঃ তোমরা ‘আলীকে আমার নিকটে ডেকে আন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাঁর কাছে এসে হাযির
হন, তখন তার চোখ উঠেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার দুই চোখে স্বীয় মুখ নিঃসৃত লালা লাগিয়ে
দেন এবং তার হাতে পতাকা অর্পন করেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে বিজয়ী করলেন। (তিনি) এ আয়াত অবতীর্ণ হল (অনুবাদ): আমরা আহ্বান
করি আমাদের পুত্রদেরকে ও আমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে
…. ” (সূরা আল ‘ইমরাম ৬১)। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ‘আলী, ফাতিমাহ্, হাসান ও হুসাইন (রাযিঃ)-কে ডাকেন
(এবং তাদেরকে নিয়ে খোলা ময়দানে গিয়ে) বললেনঃ হে আল্লাহ! এরা সকলে আমার পরিবার- পরিজন।
সহীহঃ মুসলিম
(হাঃ ৭/১২০)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ গারীব।
৩৭৩০। জাবির ইবনু ‘আবদিল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী (সাঃ) ‘আলী
(রাযিঃ)-কে বললেনঃ আমার নিকটে তুমি মর্যাদায় মূসা (‘আঃ)-এর নিকট হারূনের মর্যাদার মত।
তবে আমার পরে কোন নবী নেই।
পূর্বের হাদীসের
সহায়তায় সহীহ।
আবূ ‘ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ অনুচ্ছেদে সা‘দ,
যাই ইবনু আরক্বাম, আবূ হুরাইরাহ্ ও উম্মু সালামাহ্ (রাযিঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে।
৩৭৩২। ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (মসজিদে)
‘আলী (রাযিঃ)-এর দ্বার ছাড়া সকল দ্বার বন্ধ করে দেয়ার হুকুম দিয়েছেন।
সহীহঃ যঈফাহ্
(৪৯৩২, ৪৯৫১) নং হাদীসের অধীনে।
আবু ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র শু‘বাহ্ হতে
উক্ত সনদে এভাবেই জানতে পেরেছি।
৩৭৩৪। ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, (ইসলাম গ্রহণ
করে) ‘আলী (রাযিঃ)-ই সর্বপ্রথম নামায আদায় করেন।
সহীহঃ যঈফাহ্
(৪৯৩২) নং হাদীসের অধীনে, মুসলিম।
৩৭৩৬। ‘আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, উম্মী নবী (সাঃ) আমাকে
এ ওসিয়াত করেন যে, মু’মিনরাই তোমাকে ভালবাসবে এবং মুনাফিক্বরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ
পোষণ করবে। আদী ইবনু সাবিত (রাযিঃ) বলেন, নাবী (সাঃ) সে যুগের জন্য দু’আ করেছেন, আমি
সে যুগেরই অন্তর্ভূক্ত।
সহীহঃ ইবনু মাজাহ
(১১৪), মুসলিম।
সহীহ আত্-তিরমীযী [ষষ্ঠ খণ্ড]
মূল: ইমাম হাফিয মুহাম্মদ বিন
ঈসা সাওরাহ আত্-তিরমিযী (রহিমাহুমুল্লাহ)
তাহকীক: মোহাম্মদ নাছিরুদ্দীন
আলবানী
অনুবাদক ও সম্পাদনায়: হুসাইন
বিন সোহরাব, হাদীস বিভাগ- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনাহ্ সৌদীআরব এবং শাইখ মোঃ
ঈসা মিঞা বিন খলিলুর রহমান মুনতাব শররীআহ্ বিভাগ- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনাহ্,
সৌদী আরব।
No comments