মোমিনের গুণাবণী
হে আল্লাহ্র বান্দাগণ, সে ব্যক্তি আল্লাহ্র সব চাইতে প্রিয় যাকে কামনা-বাসনা প্রদমিত করার ক্ষমতা
অর্পন করেছেন যাতে তার বাতেন শোক-বিহ্বল ও জাহের ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। তার হৃদয়ে হেদায়েতের প্রদীপ সমুজ্জ্বল। সে সেদিনের আপ্যায়নোপকরণ সংগ্রহ করেছে যে দিনটি অবশ্যম্ভাবী (মৃত্যু)। যা দূরে তা সে নিকটে মনে করে এবং যা কঠিন তা সে সহজ মনে করে। সে দৃষ্টিপাত করে ও উপলদ্ধি করে; সে আল্লাহ্র জেকের করে ও আমলকে প্রসারিত করে। সে মিঠা পানি পান কর যার উৎসের দিক তার
পথ সহজ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং সে পরিতৃপ্ত হওয়া পর্যন্ত পান করে এবং সমতল পথ অবলম্বন করে। সে একটি (আল্লাহ্র সন্তোষ) ছাড়া অন্য সকল
আকাঙ্খার আচ্ছাদন খুলে ফেলে দিয়েছে এবং সকল উদ্বেগ হতে মুক্ত হয়েছে। সে কুপথে পরিচালিত হওয়া থেকে নিরাপদ এবং
যারা কামনা-বাসনার অনুসারী সে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করেছে। সে হেদায়েতের দুয়ারের চাবিতে পরিণত হয়েছে
এবং ধ্বংসের দুয়ারে তালায় পরিণত হয়েছে। সে তার পথ দেখেছে এবং সেপথেই হেঁটে যাচ্ছে। সে তার হেদায়েতের আলামত ও চিহ্নকে চিনেছে এবং গভীর জলাশয় অতিক্রম
করেছে। সে বিশ্বস্তমত
অবলম্বন ও শক্ততম রজ্জু ধরেছে। সে দৃঢ় প্রত্যায়ের এমন স্তরে যা সূর্যের দীপ্তির মত। সে নিজেকে মহিমান্বিত আল্লাহ্র জন্য নিয়োজিত করেছ এবং মহত্তম কর্মের জন্য সে যেকোন পরিস্থিতির মোকাবেলা
ও যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত। সে অন্ধকারের প্রদীপ। সে সকল প্রকার অন্ধত্ব অপনোদনকারী, গুপ্ত বিষয়ের
চাবি, টটিলতা অপসারণকারী এবং বিশাল মরুভূমিতে পথ প্রদর্শক। যখন সে কথা বলে তখন তা বুঝিয়ে বলে। আবার যখন সে চুপ থাকে তখন তা নিরাপদ বলেই করে। সে সবকিছু শুধুমাত্র আল্লাহ্র জন্যই করে। ফলে আল্লাহ্ও তাকের নিজের করে নেয়। সে আল্লাহ্র দ্বীনের খনিও তাঁর জমিনের পেরাক স্বরূপ। সে ন্যায়কে নিজের
জন্য ফরজ করে নিয়েছে।
তার ন্যায়ের প্রথম পদক্ষেপ হলো সে হৃদয় থেকে সকল
কামনা বিদূরীত করেছে। সে ন্যায়ের বর্ণনা যেখাবে করে ঠিক সেভাবে আমল করে। যা কিছু কল্যাণকর তা তার লক্ষ্য এড়ায় না এবং কুরআনের কোন স্থান
তার দৃষ্টির আড়াল হয় না। সুতরাং কুরআন তার পরিচালক ও ইমাম। অর্থাৎ সে সর্বদা কুরআননের সাথে থাকে, কখনো পৃথক
হয় ননা। তার দৈনিন্দিন কাজ কর্মেও সে কুরআনকে অনুসরণ করে।
বেঈমানের বৈশিষ্ট্য
অপরপক্ষে, অন্য প্রকৃতিরও মানুষ আছে যে নিজেকে জ্ঞানী মনে করে, আসলে সে তা নয়। সে অজ্ঞদের কাছ থেকে অজ্ঞতা এবং পথভ্রষ্টদের কাছ থেকে পথভ্রষ্টতা কুড়িয়ে নেয়। সে মানুষের জন্য মিথ্যা বক্তৃতা ও প্রতারণার
দড়ি দিয়ে ফাঁদ পাতে। সে নিজের অভিমত অনুযায়ী কুরআনকে এবং কামনা-বাসনার বশবর্তী
হয়ে ন্যায়কে গ্রহণ করে। সে মহাপাপকে নিরাপত্র এবং লঘু পাপকে গুরুতর অপরাধ বলে মনে বলে মানুষকে বুঝায়। সংশয়ে ডুবে থেকে সে বলে য, সে সংশয়ের ব্যাখ্যা জন্য অপেক্ষা করছে। সে বলে যে, সে বিদা’ত থেকে দূরে থাকে অথচ সে বিদা’তে নিমগ্ন রয়েছে। তার আকৃতি মানুষের মত কিন্তু তার চিত্তবৃত্তি
পশুর মত। হেদায়েরেতর দরজা তার অচেনা। কাজেই সে সৎপথ অনুসরণ করতে পারে না। এসব লোক জীবস্মৃত।
নাহ্জ আল-বালাগা
আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব
সংঙ্কলনঃ আশ-শরীফ আর-রাজী
ইংরেজি অনুবাদঃ সৈয়দ আলী রেজা
বাংলা অনুবাদঃ জেহাদুল ইসলাম
খোৎবা-৮৬ পৃষ্ঠা নং ১০০-১০২
No comments