নবী করিম (সাঃ) এর একজন মনের মানুষের গল্প ?
অপূব আল্লাহ্ প্রেমিক, শেষ্ঠ সাধক, মহাজ্ঞানী,
সংসারত্যাগী, সরবোজনপ্রিয়, শ্রেষ্ঠ বুযুগ এবং ওলীয়ে কামেল হযরত ওয়ায়ে ক্বরনী(রহঃ)-এর
পুণ্যময় জীবন কাহিনীর আলোচনা করছি। প্রত্যেক
মুসলমানের জন্য এ
পুতঃচরিত্র, মহাপুরুষের পূন্যময় জীবন কাহিনী শুনার ও জানার আমাদের
প্রয়োজন আছে, কেননা তাঁর মত মহাপুরুষের জীবনাদর্র কিছুটাও যদি কেউ নিজের জীবনে প্রতিফলিত
করতে পারেন, তবে তাঁর জীবন হবে ধন্য, স্বাথক ও সুন্দর।
হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) ছিলেন রাসূল্লাহ
(সাঃ)-এর তাবেয়ীদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। তবুও সহাবা ও তাবেয়ীদের মধ্যে কেউ তাঁর সম্বন্ধে আগে কিছু জানতেন না, কারণ
তিনি কখনও রাসূল (সাঃ) এর দরবারে আসেননি।
তিনি লোকালয়ে থেকে অনেক দূরে নিজনে জঙ্গলে
বসে সব সময় আল্লাহর ইবাদত লিপ্ত থাকতেন বলে অনেক লোকই তাঁর সংবাদ জানত না এবং যারা
জানত তারাও তাঁকে একজন পাগল বলেই জানত। তিনি পাগলই ছিলেন বটে, কিন্তু দুনিয়ার
সাধারণ পাগল নন, তিনি ছিলেন আল্লাহ ও তার রাসূলের (সঃ) এর প্রেমের পাগল।
আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ
ভক্তি ও অকৃত্রিম প্রেম, আর এ প্রেমকে তিনি স্থান দিয়েছিলেন দুনিয়ার সবকিছুর উদ্ধে।
সে জন্যই তো আজ পযন্ত দুনিয়ার প্রতিটি
মুসলমানের কাছে এত অধিক প্ররিচিত ও শ্রদ্ধার পাত্র।
হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-এর নাম শুনেনি
এরকম লোক মুসলমানের মধ্যে খুব কমই আছে। তাঁর সম্বন্ধে সব কাথা জানা না থাকলেও
মুসলমানদের ঘরে ঘরে প্রবাদ বাক্যের মতো প্রচলিত আছে যে, ওহুদের যুদ্ধে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম-
এর পবিত্র দন্ত হবার সংবাদ শুনে হযরত ওয়ায়েস
ক্বরণী (রহঃ) একে একে তাঁর সবগুলোই দাঁতই ভেঙ্গে ফেলেছিলেন।
এর ফলে হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)- এর পবিত্র
জীবন অত্যন্ত বিচিত্র ও রহস্যময় এবং এটিই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বেশি বৈশিষ্ট্যপূণ। একদিন হুজুর আকরাম (সাঃ) আল্লাহর প্রেমের
মহাত্ম্য বণনা করতে করতে কথা প্রসঙ্গে সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, “ইন্নিলা আজিদু
রিহার রাহমাতি মিন ক্বাব্বালিল ইয়ামানি” অথ্যাৎ আমি ইয়ামেনের দিক থেকে রহমতের হাওয়া
পাচ্ছি।
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূল আল্লাহ
কে সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি?
রাসূল (সাঃ) উত্তর দিলেন, সে আল্লাহর একজন
শ্রেষ্ঠ প্রেমিক বান্দা এবং আমার তাবেয়ীগণের মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ তাবেয়ী। তাঁর নাম ওয়ায়েস
ইবনে আবদুল্লাহ আল ক্বরণী। কেয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশে রাবিয়া ও মোজার গোত্র ০২ টির
মেষপালের দেহে যত সংখ্যক পশম রয়েছে, আমার উম্মতের মধ্য থেকে ঠিক তত সংখ্যক গোনাহগার
লোককে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন।
বণী রবিয়া ও বনী মোজার সম্প্রদায়ের মেষের
সংখ্যার কত ছিল তা সঠিক বলা যায় না। তবে এ কথা সত্যি যে, সে সময়ে ঔ দুই সম্প্রদায়ের
মেষ পালের মত বড় মেষপাল দেশের অন্য কারও ছিল না। তাযকেরাতুল আউলিয়া কিতাবে উল্লেখিত
আছে যে, উক্ত দু’সম্প্রদায়ের মেষের সংখ্যা ছিল বিশ হাজারের বেশি। সুতরাং সে বিরাট মেষ
পালের মেষের লোমের সংখ্যা কোন মানবের সংখ্যাজ্ঞানের বাইরে। অতএব সে লোমের সমসংখ্যক
গোনাহগার উম্মত বলতে অগণিত গোনাহগার উম্মাত বলা ছাড়া আর গতি নেই।
হযরত রাসূল (সাঃ) এর উক্ত হাদিসটি সম্বদ্ধে
আমাদের কোনরকম ভূল ধারণা করা বা সন্দেহ পোষণ করা নিতান্তই অন্যায় হবে, কারণ সুবিখ্যাত
হাদিস গ্রন্থ মেশকাত শরীফের শরাহ মেরকাত কেতাবে এবং আরও কিছুসংখ্যক হাদিসের কেতাবেউক্ত
হাসদটিট উল্লেখ্য রয়েছে।
হযরত রাসূল (সাঃ) হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)
সম্বন্ধে বলেছেন, ওয়ায়েস ক্বরণী নেক আমলে ও আল্লাহ প্রেমে সমগ্র তাবেয়ীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
মাঝে মাঝে রাসূল (সাঃ) ইযেমেনের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেন, আমি ইয়েমেনের দিক থেকে রহমাতের
হাওয়া পাচ্ছি।
যারা রাসূল (সাঃ) নিজের চোখে দেখেছেন,
তাঁর উপস্থত থেকে তাঁর অমূল্যবাণী নিজেদের কানে শুনে সে অনুযায়ী নিজেদের জীবন গড়েছেন
এবং সম্পূনভাবে তাঁর আদশকে অনুসরণ করে চলেছেন তাঁদেরকে বলা হয় সাহাবা।
আর যারা কোন সাহাবীর আদেশ, উপদেশ ও আদশ
অনুযায়ী জীবন গঠন করেছেন, রাসূল (সাঃ) কে
নিজের চোখে দেখেননি এবং তাঁর অমূল্যবানী নিজের কানে শুনেননি, তাঁদেরকেবলা হয় তাবেয়ী।
হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রাঃ)-এর জীবনে কখনও
হযরত রাসূল (সাঃ)-কে নিজের চোখে দেখেননি, অথচ পরবতীকালে হযরত ওমর ফারুক এবং হযরত আলী
(রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত ও আলাপ-আলোচনা করেছিলেন। তিনি একবার হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহ
আনহু-এর সাক্ষাতকরেছেন। এজন্য রাসূল (সাঃ) তাকে তাবেয়ী বলে উল্লেখ করেছেন।
কেউ কেই হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-কে রাসূল
(সাঃ)-এর সাহাবী বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ যদিও তিনি স্বচক্ষে রাসূল (সাঃ)-কে দেখেননি,
তবুও রাসূল (সাঃ) এর পৃথিবীথেকে আড়াল হওয়ার
পরে ঘটনা প্রসঙ্গে এ কথা সুস্পষ্ঠভাবে বুঝতে পারা গিয়েছিল যে, তিনি জ্ঞানচোখে বা আধ্যাতিক দৃষ্টিতে রাসূল (সাঃ)-কে দেখেছিলেন।
কেননা তিনি রাসূল (সাঃ)-এর শরীরের গঠন,
আকৃতি, প্রকৃতি ও শরীরের চিহ্নগুলো সম্বন্ধে এত বেশি জানতেন যে, যে সব সাহাবী রাসূল (সাঃ)-এর
সাথে থাকতেন, তাঁরাও ঐসব বিষয় জানতেন না।
এজন্য কেউ কেউ তাঁকে সাহাবী বলেও উল্লেখ
করেছেন। কিন্তু হযরত রাসূল (সাঃ) যখন নিজেই তাঁকে তাবেয়ী বলে উল্লেখ করেছেন, তখন আমরা
তাঁকে তাবেয়ী ভিন্ন অন্য কিছু ভাবতে পারি না।
রাসূল (সাঃ) মুখে সাহাবীরা হযরত ওয়ায়েস
ক্বরণী (রহঃ) কথা শুনে সাহাবীরা আজর করলেন ইয়া রাসূল আল্লাহ আমরা তাঁর সম্বন্ধে আরও
কিছু জানতে চাই।
তার উত্তরে রাসূল (সাঃ) বলেন, কেয়ামতের
দিন আল্লাহ তায়ালা ওয়ায়েস ক্বরণীর আকৃতিতে ৭০ হাজার ফেরেস্তা সৃষ্টি করবেন। তারা হযরত
ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-কে চতুরদিকে বেষ্টন করে হাশরে ময়দানে উপস্থিত হবেন এবং সেখান থেকে
তাঁকে বেহেশতে নিয়ে যাবেন, যেন মানুষ তাঁকে চিনতে না পারে।
অবশ্য আল্লাহ তায়ালা যাকে দেখাতে ইচ্ছে
করেন যে ব্যক্তি ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-কে চিনতে পারবেন। এভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করার উদ্দেশ্য
এই যে, তিনি লোকচক্ষুর অন্তুরালে থেকে ইবাদত বন্দেগী করতে পছন্দ করতেন। যেন লোকেরা
তাঁকে নেককার বলে মনে না করে।
সুতরাং কিয়ামতের ময়দানেও আল্লাহ তায়ায়া
তাঁকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখবেন। আল্লাহ বলবেন, আমার বন্ধুগণ আমার কাবার আবরণে আবৃত!
আমি ছাড়া অন্য কেউ তাঁকে চিনতে পারে না।
সাহাবীরা বললো, ইয়া রাসূল-আল্লাহ আপনি তাকে কি দেখেছেন?
রাসূল (সাঃ) উত্তর দিলেন, আমি স্বচক্ষে তাঁকে দেখিনি এবং সেও আমাকে দেখেনি বটে, কিন্তু অন্তদৃষ্টির মাধ্যমে তাঁর সাথে আমরা
দেখা সাক্ষাত ও কথোপকথন হয়।
রাসূল (সাঃ) মুখে এ কথা শুনে সহাবাগণ সবাই
বিস্মিত হলেন এবং কেউ কেউ প্রশ্ন করলেল, যিনি আপনার একজন প্রিয় বন্ধু তিনি আপনার সাথে
এখনো সাক্ষাত করলেন না কেন?
তিনি উত্তরে বললেন, আমার সাথে সাক্ষাত
না করার দুটি কারণ রয়েছে
প্রথমতঃ সে সব সময় আল্লাহ যিকিরে ও রাসূলের
প্রেমে মগ্ন থাকে।
দ্বিতীয়তঃ সে শরীয়তের যাবতীয় আদেশ সম্পূন
পালন করে থাকে। তাঁর অন্ধ, বৃদ্ধা, অচল মা জীবিত আছে। মার ভরণ পোষণ লালন-পালন ও সেবা
শুশ্রুষার দায়িত্ব তাঁর নিজের উপর ন্যাস্ত। সে উটের রাখালী করে সামান্য যা কিছু আয় করে
তা থেকে নিজের মা’র যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। কাজেরই অন্ধ-অচল ও বৃদ্ধা মাকে একাকী
ফেলে রেখে সুদূর মদীনায় এসে আমার সাথে সাক্ষাত করা তাঁর পক্ষে সম্বভ নয়।
সাবাগণ আবার আরজ করলেন, ইয়া রাসূল-আল্লাহ
আমরা কি তার সাক্ষাত করতে পারি?
তিনি উত্তর দিলেন না, আমি জীবিত থাকতে
তোমরা তাঁর সাক্ষাত পাবে না। তবে আমার মৃত্যুর পর ওমর ফারুক ও আলী (রাঃ) তাঁর সাথে
সাক্ষাত করবে।
তার পর তিনি ওমর ও আলী (রাঃ)-এর দিকে লক্ষ্যে
করে বললেন, তোমার যখন তাঁর সাক্ষাত করবে, তখন তাঁকে আমরা তরফ থেকে সালাম জানাবে এবং
তাঁকে আমার উম্মতের জন্য দোয়া করতে বলবে।
তখন ওমর (রাঃ) বললো, ইয়া রাসূল (সাঃ) তার
এমন কোন চিহ্ন আছে কি যা দিয়ে আমরা সহজে তাঁকে চিনতে পারি?
রাসূল (সাঃ)-বলেন, আল্লাহর তায়ালার বিশিষ্ঠ
বন্ধুগণ সব সময় প্রচ্ছন্ন ও অজ্ঞাত থাকেন। তিনি ইয়ামন দেশে উট চড়িয়ে থাকেন। তাঁর বাম
পাজরের ওপর ও হাতের তালুতে এক দেরহাম পরিমাণ একটি সাদা দাগ রয়েছে শ্বেতকুষ্ঠের চিহ্ন।
তারপর সাহাবাগণ রাসূল(সাঃ)-কে হযরত ওয়ায়েস
ক্বরণী (রহঃ) সম্বন্ধে আর কোন প্রশ্নকরেন নি।
যখন রাসূল (সাঃ) ওফাতের সময় নিকট হলো,
তখন সাহাবঘন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূল-আল্লাহ আপনার শরীরে পবিত্র জুব্বা মোবারক কাকে দান করবেন?
তিনি উত্তর দিলেন, ওয়ায়ে ক্বরণী (রহঃ)-কে।
সম্পাদনায়ঃ মুহাম্মদ নূর উললাহ আযাদ (এম.এম)
প্রাক্তন অনুবাদক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
আল্লাহু আকবার, সত্যিই অবিশ্বাস কোন মানুষের মধ্যে কি আছে বোঝা যায় না, এজন্য কোন পাগলদের সাথে বেয়াদবি না করাই ভাল। হতে পারে তার ভিতরে আছে আল্লাহর ও তার রাসূলে প্রেম ভালবাসা। আল্লাহ তুমি আমাদের কে তোমার রাসূলের ভালবাসা নিয়ে জীবনের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারি যেন সেই তৈফিক দান কর। আমিন।
ReplyDelete