Banners

রাসূল (সাঃ) এর জুব্বা কে পেয়েছিল?


রাসূল (সাঃ)-পৃথীবি থেকে আড়াল হওয়ার আগেই তার জুব্বা কাকে দিবে তার নামটি সাহাবীগণের বলে গিয়েছিলেন পরে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)-এর খিলাফতকালে হযরত ওমর এবং আলী (রাঃ) কুফা নগরীতে তসরীফ নিলেন।

হযরত ওমর (রাঃ) কুফার মসজিদে খুত্‌বা পাঠের সময় বলনেন, হে কুফার আধিবাসিগণ! তোমরা কেউ কি ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-কে চেন?

ইসলামিক জ্ঞান, আবদুল কাদের জীলানী, বড়পীর, বেলায়েতের সম্রাট, গাউসে আজম, ওলীউপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে দু’চারজন উত্তর করল, জ্বী-না, আমরা চিনি না। তারপর খলিফা আবার বললেন, এখানে ক্বরণের আধিবাসী কেউ থাকলে দাঁড়াও। এক ব্যাক্তি দাঁড়ালে তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‍তুমি ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-কে চিন?

সে উত্তর করল-হুজুর সে  তো একজন পাগল, লোকালয়ে বাস করে  না, সে জঙ্গলে উট চরিয়ে বেড়ায়। দিনের শেষে শুকনা রুটি খায়। লোক যখন হাসে, তখন সে কাঁদে আর লোক যখনা কাঁদে তখন সে হাসে, সে এক অদ্ভুত লোক।

সেই লোকটির নিকট থেকের আরও একটু ভালবাভে সন্ধান জেনে নিয়ে ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-এর খোজ করার জন্য বের হলো।

সাহাবা দু’জন ক্বরণের জঙ্গলে ও তার পাশ্ববর্তী স্থানসমূহে অনেক খোঁজ করার পর ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) সাক্ষাত লাভ  করলেন। কিন্তু দেখতে পেলেন ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) নামাযে লিপ্ত আছে তাই তার কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।

তাঁদের আসার ভাবগতি বুঝতে পেরে ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) নামাজ শেষ করে তাঁদের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, আচ্ছালামু-আলাইকুম।

হযরত ওমর ও আলী (রাঃ) সালামের জবাব দিলেন। তার তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তরে করলেন, আবদুল্লাহ। ওমর (রাঃ) বললেন আমরা সবাই  তো আবদুল্লাহ বা আল্লাহর বান্দা কিন্তু আমরা জানতে চাই আপনার মা-বাবার  দেয়া একটি নির্দিষ্ট নাম। এবার তিনি বলনেন, “ওয়ায়েজ”

হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, দয়া করে আপনার যান হাতখানা দেখান। সে প্রসারিত করলো। তাঁর দেখতে পেল রাসূল (সাঃ)-এর বলা সেই ডান হাতের তালুতে এক দিরহাম পরিমিত স্থান শুভ্রবর্ণ। এর পর তাদের আর সন্দেহ থাকল না এনি ই  হলো ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) সেই পরম পুণ্যাত্মা আল্লাহর প্রেমিক। তাঁরা উভয়ে তাঁর পবিত্র হতে চুম্বুন করলেন।

তারপর আলী (রাঃ) বললেন, রাসূল (সাঃ) আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং তাঁর পবিত্র দেহের জুব্বা মোবারক আপনাকে দিতে আদেশ করেছেন। আর আপনাকে তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া করতে বলেছেন।

তিনি উত্তরে বললেন, দোয়া করার জন্য আপনারাই সবচেয়ে অধিক উপযুক্ত, কেননা আপনারা আল্লাহ ও রাসূলের অধিক প্রিয়পাত্র। ওমর (রাঃ) বললেন আমরা তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া করে থাকি, তবুও আপনি রাসূল (সাঃ) – এর  ওছিয়ত পাল করুন।

হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) বললেন, হে ওমর (রাঃ) আপনি হয়তো ভূল করছেন, রাসূল (সাঃ)  হয়তো অন্য কোন ওয়ায়েসের কথা বলে থাকবেন, কার তাঁর সাথে আমার কখনও সাক্ষাত হয়নি এবং  আমার এমন কোন যোগ্যতাও নেই যে, আমি তাঁর পবিত্র জুব্বার  মযাদা  রক্ষা করতে পারি।

ওমর (রাঃ) বলেন, আমরা মোটেই ভুল করেনি। রাসূল আমাদের আপনার সম্পর্কে  যা যা  বলেছিল তার সবকিছুই আপনার মধ্যে দেখতে পারছি সুতরাং আমার বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই তাঁর পবিত্র জুব্বা আপনাকেই দান করেছেন।

হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) বললেন,  বেশ, তা হলে জুব্বাখানা দিন তা  নিয়ে আমি হুজুরের উম্মাতের জন্য দোয়া করব। ওমর  (রাঃ) জুব্বা দিলেন। ‍তিনি জুব্বাটি নিয়ে একটু দুলে গিয়ে সেজদায় পতিত হয়ে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করতে লাগলেন, হে পরম করুণাময় আল্লাহ। আপনার হাবীব তাঁর পবিত্র জুব্বা আমাকে দান করেছেন, কিন্তু যতক্ষণ না আপনি রাসূল (সাঃ)-এর সব উম্মতের গোনাহ মাফ না করবেন,  সে পযন্ত আমি হুজুরের এ পবিত্র জুব্বা পরিধান করব না। হযরত রাসূল (সাঃ), ওমর (রাঃ), আলী মুর্তজা (রাঃ) সহ প্রত্যেকেউ নিজ নিজ কাজ শেষ করেছেন,  এখন হে আমার রব! শুধু আপনার কাজই বাকি আছে।

গায়েব থেকে আওয়াজ এল, যে ওয়াজেস! তুমি  সেজদাহ থেকে মাথা ওঠাও! তোমর প্রার্থনার  সম্মানে আমি তাঁর কিছু সংখ্যাত উম্মতের গোন মাফ করে দিব।

হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) আবার আরজ করলো, গে গাফুরুর রাহীম। আমি রাসূল (সাঃ)-এর সব উম্মতের গোনাহ্‌ মাফের জন্য প্রার্থনা, জানাচ্ছি- কিছু সংখ্যক নয়।

আল্লাহর তরফ থেকে আবার আদেশ এল ওয়ায়েস! তোমার প্রার্থণা অনুযায়ী আমির আমার পিয়ারা হাবীরের এক-চতুর্থাংশ উম্মতের গোনাহ মাফ করে দিলাল।

বর্ণিত আছে, হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) তাতেও সন্তুষ্ট হলেন না, সেজদা থেকে মাথা না ওঠিয়ে আবার আরজ করলেন, হে আল্লাহ পরমকরুণাময়। সব উম্মতের গোনাহ্‌ মাফ না করা পযন্ত আমি জুব্বা পরিধান করবো না এবং সেজদা হতে মাথা উচু করব না।

আল্লাহ তাঁকে জানালেন, যে ওয়ায়েস! তুমি সেজদা হতে মাথা উঠাও এবং আমার পিয়ারা হাবীরে পবিত্র জুব্বা পরিধান কর! আমি তোমার খাতিরে আমার হাবীরের অর্ধাংশ পাপী উম্মতের মাফ করে দিলেন।

ঠিক ঐ মুহুতে তারা হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) নিকটবর্তী হলেন।
উল্লেখ্ আছে, তাঁরা অনেক্ষণ হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-এর অপেক্ষায় থেকে অবশেষে ধৈয্যহারা হয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হওয়ারমাত্র হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-এর একাগ্রতা ভঙ্গ হয়ে গেল। তাঁদের দিকে লক্ষ্য করে অত্যন্ত দুঃখিত কণ্ঠে বললেন, আপনার সর্বনাশ করলেন! কেন আপনার আমার কাছে এলেন? আপনার যদি আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন, তবে আমি রাসূলের (সাঃ) এর সব উম্মতের গোনাহ্‌ মাফ করিয়ে নিতে পারতাম।

আমি আল্লাহর নিকট আরজ জানিয়েছিলাম যে, হুজুরর যাবতীয় উম্মতকে মাফ না করা পযন্ত আমি সেজদা তুলব না এবং যেই পযন্ত আল্লাহ সেই আরজ কবুল না করতেন, সেই পযন্ত আমি আমার প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতাম।

তারপর হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) রাসূল (সাঃ) জুব্বা পরিধান করে দুই হাত তুলো দোয়া করলেন, হে আল্লাহ আপনি আপনার প্রিয় হাবীরে পবিত্র জুব্বার বরকতে নবী রবিয়া ও বনী নজর সম্প্রদায়ের যাবতীয় মেষপালের মেষের লোমের সমসংখ্যক উম্মতে মুহাম্মাদীর গোনাহ মাফ করেদিন। তারপর তাদের দুই জনের দিকে লক্ষ্য করে হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) বললেন, আল্লাহর মেহেবাণীতে আমার শেষ প্রার্থটি কবুল করেছেন, নবী রবিয়া ও বনী নজর সম্প্রদায়ের যাবতীয় মেষপালের মেষের লোমের উম্মতের গোনাহ মাফ করে দিতে রাজি হয়েছে।


ইতিমধ্যে ওমর (রাঃ) হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-এর কম্বলটি প্রতি দৃষ্টিপাত করে দেখলো যে,  বিশ্বের যাবতীয দন-দৌলত দেখা যাচ্ছে।  দেখে বিস্মিত হলেন  এবং নিজের খিলাফতের প্রতি তাঁর ঘৃণার উদ্রেক হলো। তিনি নিজের অজান্তে বলে উঠলেন, এমন কেউ আছে কি যে, মাত্র একখানা রুটির বিনিময়ে আমার খেলাফত কিনে নিতে পারে।

বর্ণিত আছে, এ কথা শুনে হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) একটু অবজ্ঞার সুরে বললেন, নিতান্ত কাণ্ডজ্ঞানহীন ছাড়া অন্য কোন লোক আপনার এটি খরিদ করে নিতে রাজী হবে না। আপনার যদি খেলাফতের প্রতি সত্যিই ঘৃণার উদ্রেক হয়ে থাকে তবে আপনি তাকে দূরে নিক্ষেপ করে দিলেই তো পারেন, যার ইচ্ছে সে  কুড়িয়ে নিবে, আর না হয় পড়ে থাকবে।  অমূল্য তুচ্ছ জিনিসের আবার ক্রয়-বিক্রয়ের প্রয়োজন কি? আপরার এই কথার ভেতরেও তো পার্থিব গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

হযরত ওমর (রাঃ) এ কথা শুনে কেঁদে ফেললেন। তারপর একটু প্রকৃতিস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন আপনি হুজুরের প্রতি এত অধিক মহব্বত রাখেন অথচ কোনদিন তাঁর সাথে সাক্ষাত করলেন না কেন?

হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) তাঁর কথার সোজাসুজি কোন উত্তর না দিয়ে পাল্টা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি হুজুরের স্বচক্ষে দর্শন করেছেন? উত্তরে বললো, নিশ্চই, আমরা তো সব সময় তাঁর সাথে উঠাবসা করতাম। তাহলে তাই যদি হয়, তবে বলুন তো দেখি, হুজুর (সাঃ)-এর চোখের ভ্রুযুগল যুক্ত ছিল কি পৃথক ছিল?

সাহাবা দুই জন উত্তর দিতে না পেরে বললো, আমরা তো কখনো তা লক্ষ্য করিনি। তখন হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) বললো, সম্ভবতঃ আপনার রাসূল (সাঃ)-কে দেখেনি, তার জুব্বা দেখেছেন মাত্র।

তারপর হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ) আবার বললেন, আপনার তো হুজুরের প্রিয় বন্ধু এবং তাঁর সহচর ছিলেন বলে দাবী করেন, বলুন দেখি ওহুদের যুদ্ধে তাঁর কোন্‌ দাঁতটি শহীদ হয়েছিল? এবং সেই সময় তাঁর প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনে জন্য নিজের মুখের কয়টি দাত ভেঙ্গে ফেলেছিলেন?

তিনি এ কথা বলে নিজের মুখ  হাঁ করে তাঁদের দেখিয়ে বললেন, এই দেখুন, আমার মুখে একটি দাঁতও নেই।

আমি  যখনই শুনতে পেলাম, ওহুদের যুদ্ধে কাফেরগণ পাথর মেরে হুজুরের পবিত্র দন্ত শহীদ  করেছে। তখন আমি নিজেই পাথর দিয়ে আঘাত করে আমার মুখের একটি দাঁত ভেঙ্গে ফেললাম। একটু পড়েই সন্দেহ হলো যে, হুজুরের এই  দাঁতটি শহীদ হয়নি তাই মারা সন্দেহ দূর করা জন্য অন্য আরেকটি দাঁত ভেঙ্গেছি। তার পর আবার সন্ধেহ হলো এই দাঁত যদি না হয় তাই এক এক করে সবগুলোই দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছি। তখনই আমার মনে কিছুটা শান্তি লাভ করলাম।

হযরত ওয়ায়েস ক্বরণী (রহঃ)-এর কথা শুনে সাহাবী অত্যন্ত লজ্জিত ও বিষ্মিত হলেন এবং উভয়ের অন্তরে দুরু দুরু করে কেঁপে উঠল এবং সহ্য না করতে পেরে কেঁদে ফেললেন।

হযরত ওমর (রাঃ) বললো আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন। উত্তরে করলেন, আমি প্রত্যেক নামাজ শেষে (হে আল্লাহ!  যাবতীয় মুমিম পুরুষ ও নারীদের আপনি মাফ করুন) বলে দোয়া করে থাকি। তাই আপনারা যদি প্রকৃত মুমিন অবস্থায় কবরে যেতে পারেন, তবে আমার এই দোয়াই আপনাদের  জন্য যথেষ্ট।

হরতম ওমর (রাঃ) আরজ করলেন, দয়া করে আমাদেরকে কিছু নছীহত করুন। তিনি বলেন, হে ওমর আপনি আল্লাহ চিনেন? হ্যাঁ চিনি। তাহলে এর পর আপনি যদি অন্য কাউকেও না চিনেন তবেই আপনার পক্ষে সবচেয়ে উত্তম।

তারপর ওমর (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহ কি আপনার কথা জানেন? উত্তরে হ্যাঁ নিশ্চই জানেন। তিনি বললেন, তাহলে তিনি এখন থেকে তিনি ছাড়া অন্য কেউ যদি আপনার বিষয়ে না জানে, তবে তাই হবে আপনার পক্ষে সবচেয়ে বেশি  মঙ্গলজনক।

ওমর (রাঃ) বললো আমি আপনাকে কিছু নজর দিতে ইচ্ছে করি। হযরত ওয়ায়েজ ক্বরণী (রহঃ) নিজের পকেটে হতে দুই দিরহাম বের করে বললেন, আমি উটের রাখালী করে এটি রোজগার করেছি। যদি আপনি নিশ্চয়তা দিতে পারেন আমি এটি ব্যায় করার পযন্ত নিশ্চই দুনিয়াতে বেঁচে থাকব, তবে আমার নজর দিতে পারেন। তবে আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে, এ দুটি দিরহাম আমার প্রয়োজনে খরচ করার সুযোগ আমি পাব। হয়তো এখনও হতে পারে যে, এটি আমার পকেটে থাকতেই আমি আখেরাতের সফরে  রওনা হয়ে যাব।

কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর তিনি সহাবী দুজনের বললেন, আপনার অনেক কষ্ট  সহ্য করে  দেখার করতে এসেছেন, এখন মেহেরবাণী করে আপনার বিদায় হোন।  কেয়ামত সম্মুখে, তখন হাশরের ময়দানে আপনাদের সাথে সাক্ষাত হবে, সেখানে দীর্ঘকাল আলাপ করার সুযোগ পাব। এখন আমি আখেরাতে সফরে যাবার পথেয় সংগ্রহ করার ব্যাপারে খুবই ব্যীতবস্ত আছি! কাজেই আপনাদের সাথে আমার অধিক আলাপ করার সময় নেই। বলে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত হলেন। সাহাবী গণ বুঝতে পারলেন তার থাকে আর কথা বলার সুযোগ হবে না, তাই সেখান থেকে চলে গেলেন।

ঠিক ঘটনা সম্বন্ধে অন্য একটি রেওয়াতে বর্ণান পাওয়া যায়, হযরত ওমর ও আলী (রাঃ) প্রথম বারের মতো যখন রাসূল (সাঃ) অনুমতিক্রমে তাঁর সাথে সাক্ষত করতে বের হয়েছিলেন,  জুব্বা দেওয়ার উদ্দেশ্য নয়। তার পর রাসূলের ওফাতের জুব্বা দেওয়ার উদ্দেশ্য সাক্ষাত করেছিলেন বর্ণনটি নিম্নরূপঃ
রাসূলে (সাঃ)-এর মুখে হযরত ওয়ায়েজ ক্বরণী (রহঃ) প্রশংসা শুনে একদিন ওমর ও আলী (রাঃ) তার সাথে সাক্ষাত করার জন্য অনুমতি চাইলেন, তিনি অনুমতি দিয়ে বললেন, তাঁর ডান হাতের তালুতে একটি সাদা দাগ আছে; তাই তাকের চেনার প্রধান উপায়।

তারপর তারা হযরত ওয়ায়েজ ক্বরণী (রহঃ) সন্ধানের বের হলেন ইয়ামেনে গমন করে একে একে অনেক লোকে আছে জিজ্ঞেস করেও তাঁর কোন সন্ধান করতে পারলেন না।

অবশেষে জনৈক বৃদ্ধ লোক তাদের বললো, আপনার যার খোজ করছেন, লোকালয়ে সন্ধান করে  তার সাক্ষাত পাবেন না। ক্বরণ নামক গ্রামের  নিকটবর্তী একটি গভীর জঙ্গলে তিনি একটি কুটির নির্মাণ করে তার বৃদ্ধা মাতাস্থ নিয়ে সেখানে বাস করে। সকালে ও বিকালে জঙ্গলের কাছে অবস্থিত প্রান্তরে তিনি উট চরিয়ে থাকেন, কিন্তু মাগরিবের আগেই জঙ্গলের ভেতরে চরে যান। তারপর মাগরিব নামাজ শেষে ছদ্মবেশে দরবেশী পোশাকে অনেক সময় অত্র এলাকায় চলাফেরা করে।

বৃদ্ধ লোকটি সংবাদ শুনে প্রথমে হযরত বেলাল (রাঃ)-কে তার সন্ধানে প্রেরণ করলেন। তিনি জঙ্গলের নিকটবর্তী এলাকায় এক ব্যাক্তিকে দরবেশী পোশাক পরিহত অবস্থায় উট চরাতে দেখতে পেলেন। তার নিকটবর্তী  হয়ে সালাম করতের তিনি হুয়া শব্দ উচ্চারণ করলেন, আর  সেই শব্দ  শুনে হযরত বেলাল (রাঃ) অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। অনেক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এসে তাড়াতাড়ি করে ওমর ও আলী (রাঃ)  সংবাদ দিলেন। তারা উভয়েই তাড়াতাড়ি করে সে স্থানে ছুটে এসে দেখলেন হযরত ওয়ায়েজ ক্বরণী (রহঃ) তার আগেই সেখান থেকে চলে গেছেন।

তারপর দ্বিতীয় দিনও বেলাল (রাঃ) পাঠালেন কিন্তু সেদিন আর সাক্ষাত পেলেন না। তৃতীয় দিনের সন্ধার আগে বেলাল (রাঃ) আবার হযরত ওয়ায়েজ ক্বরণী (রহঃ)-এর সাক্ষাত পেলেন। তিনি তার নিকটবর্তী হয়ে সালাম জানাবার পর  বললেন, রাসূল (সাঃ) দুই জন সাহাবা ওমর ও আলী (রাঃ) আপনার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছেন। আপনার অনুমতি পেলে আপনার নির্দিষ্ট সময় অনুয়ায়ী তারা আপনার সাক্ষাত করবেন।

হযরত ওয়ায়েজ ক্বরণী (রহঃ) বললেন, আগমী শুক্রবার দিন ভোরে এসে আমার সাথে ফজরের নামাজ পড়বেন। তারা আসার সময় ইয়ামনের আমীরকেও যেন সাথে নিয়ে আসেন।

তারপর নির্দিষ্ট দিনে তার সেই স্থানে উপস্থিত হয়ে হযরত ওয়ায়েজ ক্বরণী (রহঃ)-কে দেখতে পেলেন। তিনি তাদের সাথে কোন রকম কথাবার্তা না বলে ইঙ্গিতে নামাজে যোগদান করতে বলেই নামাজে দাড়ালেন। পাগাড়ের আড়ালে একটি নির্জন প্রশন্ত স্থানে সবাই একত্রে ফজরের নামাজ পড়লেন। নামায শেষে কিছুক্ষণ ধ্যানমগ্ন থাকার পর তিনি পেছনে ফিরে সাহাবাদের সালাম করলেন।

তারপর ওমর ও আলী (রাঃ) কিছুক্ষণ নানা বিষয়ে আলোচনা করার পর হযরত ওয়ায়েজ ক্বরণী (রহঃ) বললেন, আপনার মেহেরবানী পূর্বক এখন বিদায় নিন এবং নেক কাজে লিপ্ত থাকুন। নেককাজে লিপ্ত থাকুন, কিয়ামত অতি নিকটে, আবার আপনাদের সাথে সেখানে সাক্ষাত হবে। আমি এখন কিয়ামতের রাস্তা পরিষ্কার করার কাজে খুবই ব্যাস্তআছি। অতএব, বিদায় বলে অতি দ্রুতবেগে জঙ্গলে দিকে প্রসাথান করলেন এবং সাহাবা আজমাইনগণ হতাশ হয়ে ফিরে এলেন।
সম্পাদনায়ঃ মুহাম্মদ নূর উল্‌লাহ আযাদ (এম.এম), প্রাক্তন অনুবাদক, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ।

5 comments:

  1. দলিল জানতে চাই, কোন হাদীসে এর বর্ননা আছে, হাদীস গ্রন্থের নাম বলুন।

    ReplyDelete
  2. এসব আজাইরা গপ্প যে কোথায় পায় এরা!

    ReplyDelete
  3. ভিত্তিহীন গল্প

    ReplyDelete
  4. সম্পূর্ণ ভিত্তিহিন, বানোয়াট, কিচ্ছাকাহিনি এটা।
    যদি সত্যবাদি হন তাহলে দলিল পেশ করুন।
    অন্যথায় জাহান্নামের ভয় করুন, কারন যে ব্যাক্তি নবীর নামে মিথ্যাচার করে তার স্থান জাহান্নামে।

    ReplyDelete
  5. ফালতু কিচ্ছা লিখছে বেয়াদব

    ReplyDelete

Powered by Blogger.