Banners

বেলায়েতের সম্রাট গাউসুল আজম বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ)

মাওলা আলী শেরে খোদা কাররামুল্লাহি ওয়াজহাহুল করিম হতে বর্ণিত, দয়াল নবীজি (সাঃ) কোন এক সময় মহান আল্লাহপাকের দরবারে হাত উঠিয়ে আরজ করলেন, ওগা দয়াময়। তুমি আমার সেই প্রতিনিধির ওপর রহমত ও করুণা বর্ষ কর, যে আমার পরে পৃথিবতে আগমন  করবে এবং আমার হাদিস যথাথ ও সঠিকভাবে বণনা করবে। আমার মৃতপ্রায় দ্বীন ইসলামকে নবজীবন দান করবে।

আবদুল কাদের জীলানী, গাউচ পাক, ওলী, গাউসে আজম, বড়পীর, বেলায়েতের সম্রাট, দয়াল নবিজীর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তারই প্রতিনিধিরূপে পৃথিবীতে ৪৭১ হিজরির ১ রমজানের সোমবার সুবহে সাদিকে তাশরিফ আনেন খান্দানে নবুওয়াত তথা আহলে বাইতের সদস্য, মাওলা আলীর বেলায়েতী ক্ষমতার প্রতিভূ, আউলিয়াকুলের শিরোমণি, গাউসুস সাক্‌লাইন, হযরতে পীরানে পীর দস্তগীর শায়েখ মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী।


গাউসে পাকের পবিত্র দেহ মোবারকে কখনোই মশা-মাছি বসত না। লোকেরা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন, আমার কাছ না দুনিয়ার মিষ্টি, না আছে কোন মধু! গাইসে পাক এক মজলিস মাহফিলে ঘোষণা করলেন, “বিশ্বজগতের সব ওলির গরদানের উপর আমার কদম স্থপিত।” এই মহা বাণী উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উপস্থিত ৩১৩ জন ওলির মধ্যে ৩১২ জন নিজ নিজ কাঁধ নত করে গাউসে পাকের অনুগত্য স্বীকার করে নেন। একজন স্বীকার করেনি, মুহুতে মধ্যে তার বেলায়েতি শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীকালে সে এক খ্রিস্টানের বাড়িতে শূকর চরানোর কাজে নিয়োজিত হয়। একদিন শূকর পাল নিয়ে নদী পার হওয়ার সময় একটি বাচ্চা শূকরেকে কাঁধে করে পার করার পর তার হুঁশ আসে। হায়! গাউসে পাকের কদম কাঁধে নিতে অস্বীকার করায় আজ আমার এই কাধে শুকর আমার এই পরিণতি। অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করার পর এবং গাউসে কর্তৃক স্বীকার করার পর তার লুপ্ত বেলায়েতি ফিরে পায়।

গাউসে পাকের ওই ঘোষণার সময় খঞ্জরের পাহাড়ে তখন ইবাদতরত ছিল হযরতে খাজা গরীবে নেওয়াজ (রাহঃ) এ বাণী শ্রবণ করে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন; হে গাউসে পাক! আপনার বেলায়েতের দু’টি কদম আমার শুধু কাঁধেই নয়, বরং আমার দু’টি নয়নের ওপর এবং মাথার ওপর। সঙ্গে সঙ্গে বাগদাদের মজলিসে গাউসে পাক বলেন- হ ইবনুল গিয়াস! আদব ও মহব্বতের কারণে আল্লাহ ও তাঁর রসূল(সাঃ) তোমরা ওপর খুশি হয়েছেন। তোমাকে ‘সুলতানুল হিন্দ বা হিন্দুস্থানের আধ্যাত্মিক সম্রাট বানিয়ে দেয়া হল। (লাতায়েফূল গারায়েব) তাই খাজা মাঈনুদ্দীন চিশতী হাসান সান্‌জারী (রা.) গাউসে পাকের তারিফ করে বলেন- “ইয়া গাউসে মোঃ আজম নূরে হুদা, মোখতারে নবী মোখতারে খোদা! হযরতে মুজাদ্দেদ আলফেসানী (র.) তার বিখ্যাত ‘মকতুবার শরীফে লিখেছেন’ হযরত আবদুল কাদের জিলালী (র.) এর থেকে কেয়ামত পযন্ত যত আউলিয়া, আবদাল, আফতাব, আওতাদ, নুজাবা, নূক্বাবা, গাউস, কুতুব বা মুজাদ্দেদের আবির্ভাব হবে, তারা সবাই তরিকতের ফয়েজ, বরকত ও বেলায়েত অজনের বেলায় গাউসুল আজম হযরত বড়পীরের মুখাপেক্ষী। তাঁর মাধ্যমে বা উসিলা ছাড়া কেয়ামত পযন্ত কোন ব্যক্তি ওলি হতে পাবেন না।

বিশ্বখ্যাত ওলি শায়খ আবুল বরকাত বিন ছখরামবী (রাহ.) বলেছেন, “হযরত সৈয়্যেদুনা গাউসে পাক প্রত্যেক ওলির জাহেরি ও বাতেনি অবস্থাদির ওপর দৃষ্টি রাখেন। কোন অলী তার অনুমতি ছাড়া জাহেরী ও বাতেনি অবস্থাদির ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। এমন অলি আল্লাহ যার আল্লাহর সঙ্গে কথার বলার সৌখঅগ্য লাভ করেছেন তারাও গাউসে পাকের অনুমতি ছাড়া এক কদম এগিয়ে যেতে পারেন না। এসব অলির ওপর ইন্তেকালের আগে এবং পরেও তাঁর হস্তক্ষেপ বজায় থাকে।

হযরত শাখ আবু মুহাম্মদ কসিম বিন ওবাইদ বসরী (র.) বলেছেন, “আমি হযরত খিজির (আঃ)-এর কাছে হযরত সৈয়্যেদেনা গাউসুল আজম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলছেন আল্লাহ তায়ালা কোন অলিকে উচ্চ মযাদা দান করেন না, যতক্ষণ পযন্ত গাউসে পাক মনজুর না করেন। নৈকট্যপ্রাপ্ত কোন আল্লাহর ওলিকে বুজুর্গি প্রদান করা হয় না, যতক্ষণ পযন্ত গাউসুল আজমের বুজুর্গি মেনে নেয়া না হয়।

গাউসে পাক বলেন,“আমি আমার প্রতিপালকের ইজ্জতের শপথ করে বলছি, সব নেক্‌কার ও বদ্‌কারকে আমার সামনে পেশ করা হয়ে থাকে। আল্লাহর কসম! লওহে মাহফুজ আমর চোখের সামনে। আমি এ পৃথিবতে রাসূল (সাঃ) এর প্রতিনিধি। আমি ওই সময় পযন্ত কথা বলি না যতক্ষণ আমাকে নিশ্চিত করা না হয়। আমি ওসব  বিষয় বন্টন করতে থাকি, যেসব বিষয়ে আমাকে এখতিয়ার দেয়া হয়। যখন আমাকে হুকুম দেয়া হয়, তখন আমি সেটা পালন করি। আমার হুকুমদাতা হলেন আল্লাহ! যদি তোমরা আমাকে অস্বীকার কর, তাহলে এটা তোমাদের জন্য প্রাণনাশক বিষতুল্য হবে। তোমাদের এ নাফরমানী আচরণ তোমাদের মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে দেবে। (বাহজাতুল আস্‌রার)

হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত মোল্লা আরী ক্বারী (রহ.) তার গ্রস্থ ‘নুজ্‌হাতুল খঅতির’-এ উল্লেখ করেন- গাউসে পাক বলেছেন, যে কোন ব্যক্তি মুসিবতে পড়ে আমার নাম ধরে ডাকবে, তার বিপদ দূর হয়ে যাবে। আর যে কোন ব্যক্তি কঠিন বিপদের পড়ে আমার উসিলা ধরে সাহায্য প্রার্থণা করবে, তার বিপদ খোলসা হয়ে হযয় যাবে। আর যে কোন ব্যক্তি আমার উসিলা ধরে কোন মনোবঞ্চনা জন্য দোয়া করবে, তার মনোবাসনাও পূণ হয়ে যাবে।

গাউসে পাকের তাই তারিফ করে আলে গাউস হযরতে সৈয়্যেদুনা মুরশেদ আলী আল-ক্বাদেরী আল বাগদাদী আল মেদনীপুরী (আঃ) তার দিওয়ান পাকে বলন, “আনাল জিলী মুহিউদ্দিন ইসমী’কা ওজিফা হায়, আজল ছে ম্যায় বানা হো নাম লেওয়া গাউসে আজম কা।” ৫৬১ হিজরির ১১ রবিউস সানিতে হযরতে গাউসুল আজম বেছালে হক্ব (ইন্তেকাল) প্রাপ্ত হলেন। পবিত্র এই মহামিলনকে চিরজাগ্রত রাখার উদ্দেশ্যে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব প্রতি বছর ঐ তারিখে “পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম শরীফ পালন করে। এই দিনে খান্দানে নবুওয়াত তথা তরিকাতে কাদেরীয়া অসংখ্য পীর-মাশায়েখ এবং অন্যান্য তরিকতের পীর-মাশায়েখগণসহ লাখো-কোটি ভক্ত-মুরিদান, আশেকান ওরস, ফাতেহা উদযাপন করে থাকেন। এই মহান দিবসে, পরম প্রেমময় রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রাথনা- হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে নবীয়ে দোজাহানের পবিত্র বংশধর হযরত গাউসে পাকের উসিলায় তাঁর গাউসিয়াতের ফুয়ুজাত নসিব করুন। আমিন। (সংগ্রহঃ মুরিদের প্রতি গাউসে পাকের দয়া)

No comments

Powered by Blogger.