মাওলা পাকের কারামত
মাওলাপাকের কারামত
১. এলাহাবাদের এক বিখ্যাত
মহাপুরুষ শাহ মাহমুদী সাহেব তাঁর বাসভবনে মাঝে মাঝে ধূমধাম করে হালকালের মজলিস করতেন। হুজুর একবার এলাহাবাদে
এলে ঐ রকম মজলিসের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে হুজুর তাঁর শিষ্য, স্থানীয় উকীল মৌলভী এনামূল কবীরের সঙ্গে গিয়ে উপস্থিত
হন। হুজুর উকির সাহেবকে আদেশ দেন যে তাঁর মুখমন্ডল আড়াল করে দিয়ে তাঁর পরিচয়
যেন সম্পূর্ণ রূপে গোপন রাখা হয়। এই রমক ব্যবস্থা করে হুজুর উকীল সাহেবের সাথে সেখানে
গেলেন এবং মজলিস আরম্ভ হলে হুজুর এক কোণে গিয়ে বসলেন। শাহ সাকে এক বন্ধ ঘরের মধ্যে শয়ন করেছিলেন; কিন্ত কয়েক মিনিট পরেই তিনি মজলিস বন্ধ করে এবং এবং
হুজুর চলে এলেন।
-পরদিন খুব সকালে শাহ
মাহমুদী সাহেবের দুজন শিষ্য উকীল সাহেবের দরজায় করাঘাত করতে লাগলেন। উকলি সাহেব বাইরে এলে
তাঁরা তাঁদের পীরের পক্ষ থেকে বার বার হুজুরের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতে লাগলেন এবং বললেন, তাঁদের পীর সাহেব বলেছেন, “হুজুর
স্বয়ং হজরত গওস্ পাক্। তাঁর চরণধূলি দানে আমার গৃহ পবিত্র করেছিলেন কিন্ত
বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার ও অসুস্থতার কারণে শয্যাগত থাকায় তাঁর নিকট উপস্থিত হতে পারি
নি। এই
মূহূর্তে তাঁর কাছে গিয়ে আমার পক্ষ থেকে তাঁর শত
– সহস্র সালাম জানাও এবং আমার এই কর্তব্য পালনের ক্রটির জন্য অনুনয় বিনয়
সহকারে তাঁর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা কর। তিনি মেঝের ওপর সবে রইলেন এবং আমি খাটের উপর শুয়ে
রইলা, - বাস্তবিকই এ আমার ভয়ানক বেয়াদবি। তাই আমি মজলিস থামিয়ে
দিলাম, সাহস হল না। হুজুর কোথায় আছেন, তা অনুসন্ধান করতে বের করতেই আমাদের এত বিলম্ব
(দেরি) হল- এই বলে শিষ্যরা
দাঁড়িয়ে রইলেন। হুজুরকে এ বিষয়ে জানান হলো। তিনি বলনে –
“না, না এতে মনে করা কিছু নেই। তিনি অসুস্থ”।
একদিন এক জৈনিক মহাপুরুষ
খানকা শরীফের পাশ দিয়ে যাবার সময় মস্তক অবনত করে উচ্চঃ স্বরে বললেন- “এই বাড়ি হজরত গওস পাকের পবিত্র বাসস্থান”।
২. হুজুর তাঁর পূর্বপূরুষ
হজরত গওস পাকের মত একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে দর্শন দিতে পারতেন। একবার এক জমিদার
হত্যার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতে অবরুদ্ধ হন। হুজুরের আর্শীবাদ
প্রার্থনার জন্য তিনি হাজি মহম্মদ আহসানকে হুজুরের নিকট প্রেরণ করেন। সে সময় হুজুর ইস্ত্রিগঞ্জে ছিলেন। তখন রেলপথ ছিল না
সুতরাং সেখানে পৌঁছাতে হাজি সাহেবের কয়েকদিনই লেগেছিল। পরে হুজুরের কাছে
তাঁর বন্ধুর যাবতীয় বিপদের কথা জানিয়ে তিনি হুজুরের দয়া ভিক্ষা করেন। কিন্তু হুজুর বললেন-
“হত্যার অপরাধের কোন প্রায়শ্চিত নেই তার কোন ক্ষমা নেই। হত্যাকরী কখনও যোগ্য নয়।”
হুজুরের রাগ কমানেরা
জন্য হাজি সাহেব হুজুরের কাছে জমিদারের শোচনীয় অবস্থার মর্মাতাত্ত বর্ণনা করলেন। তাঁর নিঃসহায় অবস্থা, নৈরাশ্যভাব, কারাগারে কষ্টময় জীবনযাপন এবং অনির্বপনীয়
যন্ত্রনাভোগ প্রভৃতি সকল বিষয় হুজুরের কাছে বর্ণনা করার পর তাঁর কোমল হৃদয় দয়াদ্র হল;
কিন্তু পরক্ষনেই হত্যার কথা মনে পড়াতেই হুজুর রাগান্বিত হয়ে হাজি সাহেবকে
হুজরা খানা থেকে বের করে দিলেন।
হাজি হতবাক হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পরেই পুনরায় হুজুরের সামনে হাজির হাজির হয়ে তাঁর পায়ে পড়লেন
এবং করুণভাবে বললেন, “হুজুর
দয়া ব্যতীত গন্তব্য নেই।” আবার তিনি হুজুরের কাছে নির্জন কারা বাসের কষ্ট, ঘাতকের
ব্যবহার, ফাঁসি কাঠের বিভীষিকা প্রভৃতি মর্মস্পর্শী করুন কাহিনী
বর্ণনা করে হুজুরের করুণা প্রার্থনা করতে লাগলেন।
করুণার সাগর হুজুরের
চিত্ত (মন) বিগলিত (নরম) হল। কিছুক্ষণ তিনি নীরব রিইলেন,
পরে মস্তক উত্তোলন করে বললেন, “তাকে ক্ষমা করা
গেল এবং সে মুক্ত হয়েছে। এই মূহুর্তে সে তার কৃতকার্যের জন্য অনুতাপ করে
তওবা করেছে।
“হাজি
সাহেব বললেন, “হুজুর, মোকদ্দমাটি বড়উ কঠিন,
তার জন্য আশংকা হয়।” হুজুর তদুত্তরে ভ্রকুটি প্রদর্শন করে বললেন- “আমি যা বললাম তা স্বয়ং হজরত গওস পাকের হুকুম। এখন জগতের যাবতীয় শক্তির সকল রাজা, বাদশাহ মিলিত হলেও তার কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।” হাজি
সাহেবের মনে আনন্দ আর
ধরে না। তাঁর পরম বন্ধু মুক্ত হবেন এই আনন্দ সংবাদ কতক্ষণে বন্ধুকে দিতে পারবেন এরূপ চিন্তা করতে করতে তিনি পথে হাঁটতে লাগলেন। কিন্তু বাড়ি পৌঁছাতে তিনি যা দেখলেন
ও শুনলেন, তাকে খুব আশ্চর্য হয়ে পড়লেন। তিনি দেখলেন তাঁর বন্ধু প্রফুল্ল চিত্তে বাড়িতে বসে রয়েছেন, যেন কিছুই হয়নি। হাজি সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন- আপনি কি
জামীনে খালাস পেয়েছেন? উত্তর শুনে হাজি সাহেব স্থম্ভিত। বন্ধু বললেন- “বিচারের দিন
অসহ্য মানসিক যন্ত্রনায় আমি সমস্তই অন্ধকার দেখতে লাগলাম।” কিন্তু আশ্চযের
বিষয় দেখি, হুজুর আমার নির্জন কারাগৃহে এসে উপস্থিত। আমি তাঁর চরণ প্রান্তে পতিত হলাম। হুজুরের আদেশ
হল – তখন হুজুর
বললেন – “যাও, তোমাকে ক্ষমা
করলাম। তুমি নিশ্চই মুক্তি লাভ করবে।” তার পরেই
হুজুর অন্তর্হিত মিলিয়ে গেলেন।
হাজি সাহেব সময়ও তারিখ মিলিয়ে দেখলেন যে বহুদূরে হুজুর যখন তাঁকে বলেছিল – “এই মূহূর্তে সে
তওবা করেছে তাকে মুক্তি দেওয়া হল”এও ঠিক সেই সময়েরই কথা। হুজুর একই সময়ে দুটি ভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছিলেন।
৩. বীরভূম জেলার শাহকুলীপুর
গ্রামের জমিদার মৌলভী জিয়াউল রহমান একবার হুজুরের কাছে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করে তাঁর
অনুমতির জন্য তাঁকে একটি পত্র লেখেন। উত্তরে হুজুর এক আশ্চর্য রকমের পত্র লিখলেন।
পত্রে তিনি আদেশ দিলেন – “তুমি এখন আমার কাছে আসার কোন চিন্তাই করো না,
কারণ তুমি এখন বহুদিন বাঁচবে। তোমার শেষ সময় উপস্থিত
হলে আমি নিশ্চয়ই তোমাকে তা জানাতাম। যে পীর,
মুরিদের মৃত্যুর সময় জানতে না পারেন, তিনি সম্পূর্ণ
পীর নন”।
রহস্যময় চিঠি রহমান সাথে দেখে খুবই আবাক হয়ে পড়লেন। তিনি এর কোনও অর্থও বুঝতে
পারলেন না। এরপর তিনি কলকাতায় যাবার ইচ্ছা ত্যাগ করলেন। এর কিছুদিন পরে তিনি মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে
পড়লেন, অসুস্থতায় তাঁর এমন অবস্থা হল
যে তাঁর চিকিৎসক তাঁর জীবনের সকল আশা ত্যাগ করলেন। কিন্তু একমাস জ্বর ভোগের পর তিনি আস্তে আস্তে সুস্থ
হতে লাগলেন। তখন হুজুরের পত্রের অর্থ তিনি অনুধারন করতে পারলেন।
৪. একবার হুজুরের পিতৃদেরব
হজরত আলা হুজুরের (আঃ)-এর শিষ্য (মুরিদান) হুজুরের চরণে
(পায়ে) প্রনাম (সালাম)
করে বললেন – “হুজুর, ধ্যান
যোগে আমার মৃত্যু দিন জানতে পেরেছি, তাই আপনার নিকট বিদায় গ্রহণ
করতে এসেছি।” তখন হুজুর বললেন –
“তোমার ধ্যান ধারণায় কোন ভুল নেই সত্য, তবে ঐ দিনটা
অশুভ। ২৭ রমজান তারিখই প্রশস্ত দিন।” আর সত্যিই তা ঘটল। শিষ্য বাড়ি ফিরলেন এবং কয়েক মাস পরে ঠিক ২৭ রমজান তারিখে তাঁর মৃত্যু
হল। আরো জানতে...
কিতাবঃ মাওলা পাক (আঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনী (আবুল হাসনাত কাদেরী) জিলানী প্রকাশনী
No comments