আদম সৃষ্টি। Description of the creation of Adam.

আদম সৃষ্টি

          আল্লাহ্ কঠিন, কোমল, মধুর ও তিক্ত মৃত্তিকা সংগ্রহ করলেন। তিনি এ মৃত্তিকায় পানি দিয়ে কর্দমে পরিণত করলেন এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পতন ঘটালেন এবং আঠাল না হওয়া পর্যন্ত আদ্রতা দ্বারা পিন্ড প্রস্তুত করলেন। এ পিন্ড হতে তিনি আদল, জোড়াসমূহ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বিভিন্ন অংশসহ একটি আকৃতি তৈরী করলেন। একটা নির্দিষ্ট সময় ও জ্ঞাত স্থায়িত্ব পর্যন্ত তিনি এটাকে শুকিয়ে কাঠিন্য প্রদান করলেন। অতঃপর এর আকৃতির মধ্যে তিনি তাঁর রূহ্ ফুৎকার করে দিলেন। ফলে এটা প্রাণ-চৈতন্য লাভ করে মানবাকৃতি ধারণ করলো এবং এতে মন সন্নিবেশ করা হলো যা তাকে নিয়ন্ত্রণ করে, বুদ্ধিমত্তা দেয়া হলো যা তার উপকারে আসে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেয়া হলো যা তার কাজে লাগে, ইন্দ্রিয় দেয়া হলো যা তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এবং জ্ঞান দেয়া হলো যা সত্য-অসত্য, স্বাদ-গন্ধ ও বর্ণ- প্রকারের প্রর্থক্য বুঝাতে শেখালো। আদম হলো বিভিন্ন বর্ণের, আসঞ্জক পদার্থের, বিভিন্ন পরস্পর বিরোধী উপকরণের এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন- উষ্ণতা, শীতলতা, কোমলতা, কাঠিন্য, খুশী- অখুশী ইত্যাদির সংমিশ্রনের কর্দম।

          আল্লাহ্ তখন ফেরেশতাদের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণার্থে এবং তাদের প্রতি তাঁর নির্দেশের আনুগত্য পরিপূরণ করণার্থে আত্মসমর্পণের স্বীকৃতি স্বরূপ ও তাঁর মহিমার প্রতি সম্মান স্বরূপ সেজদাবনত হতে বললেন। তিনি বলেনঃ

          আদমকে সেজদা কর এবং ইবলীস ব্যতীত সকলেই সেজদা করলো। (কুরআন- ২:৩৪, ৭:১১, ১১:৬১, ১৮:৫০, ২০:১১৬)

          আত্মম্ভরিতা ইবলীসকে আল্লাহ্‌র আদেশ পালনে বারিত করলো এবং ঔদ্ধত্য দ্বারা সে আক্রান্ত হয়েছিল। সুতরাং সে আগুনের তৈরী বলে অহংবোধ করলো এবং মাটির তৈরী বলে আদমের প্রতি আবজ্ঞাভরে ব্যবহার করলো। ফলে আল্লাহ্ ইবলীসকে তাঁর রোষর পূর্ণ প্রতিফল প্রদানের এবং মানুষকে পরীক্ষা করার ও শয়তানের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট সময় দিলেন। আল্লাহ্ বলেনঃ

          তা হলে নিশ্চয় তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত- নির্ধারিত সময় দিন পর্যন্ত (কুরআন – ১৫:৩৭-৩৮, ৩৮: ৮০-৮১)

          তৎপর আল্লাহ্ আদমকে একটি ঘরে অধিষ্ঠান করলেন যেখানে তিনি মহানন্দে ও পূর্ণ নিরাপত্তায় বসবাস করতে লাগলেন। তিনি আদমকে ইবলীস ও তার শত্রুতা সম্পর্কে সাবধান করে দিলেন। কিন্তু ইবলীস আদমের বেহেশ্‌ত-বাস ও ফেরেশতাদের সংসর্গের জন্য ঈর্ষান্বিত হলো। সুতরাং সে আদমের ‘ইয়াকিন’ শিথিল করলো এবং তার প্রতিশ্রুতি দুর্বল করলো। এতে  আদমের আনন্দ ভয়ে পরিণত হলো এবং মর্যাদা লজ্জায় পরিণত হলো। তখন আল্লাহ্ আদমকে ‘তওবা’ করার সুযোগ দিলেন এবং তাঁর রহমতের বাক্য শিখালেন। তিনি আদমকে বেহেশ্‌তে প্রত্যাবর্তনের ওয়াদা দিলেন এবং তাঁকে কষ্টভোগ করা ও বংশ বিস্তারের স্থলে আবতরণ করালেন।

নাহ্‌জ আল-বালাগা

মূলঃ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব

সংঙ্কলনঃ আশ-শরীফ আর-রাজী

ইংরেজি অনুবাদঃ সৈয়দ আলী রেজা

বাংলা অনুবাদঃ জেহাদুল ইসলাম