জান্নাতি মহিলাগণের নেত্রী মা ফাতিমা (রা) ফযীলত।Mother Fatima (RA) is the leader of the women of Paradise.
অনুচ্ছেদ: ৫০
ফাতিমার (রা) ফযীলত।
৬১২৬। মিসওয়ার ইবনে
মাখরামা (রা) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় একথা বলতে শুনেছেন, হিশাম ইবনে মুগীরার আওলাদগণ আমার কাছে
এ অনুমতি চেয়েছে যে তারা তাদের কন্যাকে আলী ইবনে আবু তালিবের নিকট বিয়ে দিবে কিনা?
আমি কখনও তাদেরকে এ অনুমতি দিবনা, কখনও এ অনুমতি দিব না, কখনও এ অনুমতি দিব না। হাঁ
যদি আলী ইবনে আবু তালিব আমার কন্যাকে তালাক দিয়ে তাদের কন্যাকে বিয়ে করতে আগ্রহী হয়
(তবেই তা সম্বব) কেননা, আমার কন্যা আমার কলিজার টুকরা, তার কলঙ্ক আমারই কলঙ্ক এবং তার
কষ্ট আমারই কষ্ট।
৬১২৭। মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফাতিমা আমারই কলিজার টুকরা, তার প্রতি যা কষ্টকর
তার আমার প্রতিও কষ্টদায়ক।
৬১২৮। ইবনে শিহাব (রা) বর্ণনা করেছেন যে, আলী ইবনে হুসাইন (রা) তাঁর
নিকট বর্ণনা করেছেন, হুসাইন ইবনে আলীর শাহাদাতের বছর তাঁরা যখন ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়ার
নিকট থেকে মদীনায় পৌঁছলেন, তখন তাঁর সাথে (আলী ইবনে হুসাইনের সঙ্গে) মিসওয়ার ইবনে মাখরামা
দেখা করলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কি আমার কাছে কোন কাজ আছে? তাহলে আমাকে
আদেশ করতে পারেন। আলী ইবনে হুসাইন বলেন, আমি উত্তর দিলাম, না (কোন কাজ নেই)।
মিসওয়ার তাকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরবারিটা
আপনি কি আমাকে দিবেন? আমার খুবই আশঙ্কা হচ্ছে বিরোধী দল তা জোরপূর্বক আপনার থেকে ছিনিয়ে
নিবে। খোদার কসম! তা যদি আমাকে দিয়ে দেন, তবে তা সহজে কিছুতেই নিতে সক্ষম হবে না। পরিশেষে
আমার মনে পড়ল যে, একবার ইবনে আবু তালিব ফাতিমার উপর আবু জেহেলের কন্যার জন্য বিয়ের
প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অতঃপর এ মিম্বারের উপর এ বিষয়ে লোকসমক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভাষণ দিতে শুনেছি। ঐ সময় আমি বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ত) ছিলাম। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জেনে রাখ ফাতিমা আমারই অংশ। আমি আশঙ্কা বোধ
করছি যে ফাতিমা এমতাবস্থায় তার দীন সম্পর্কে বিভ্রান্ত হবে। রাবী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনি আবদে শামস গোত্রের তাঁর এক জামাতার (আবুল আস) উল্লেখ
করে তার জামাতা সুলভ আচরণের প্রশংসা করলেন। তিনি তার সুনাম করে বললেন, সে আমার সাথে
কথাবার্তা বললে সত্য সত্য বলেছে, আমার সাথে ওয়াদা করে তা পুরা করেছে। আমি অবশ্য হালালকে
হারাম মনে করি না এবং হারামকে হালাল জানিনা। তবে, খোদার কসম! আল্লাহর রাসূলের কন্যা
ও আল্লাহর দুশমনের কন্যা একই স্থানে কখনও একত্র হতে পারে না।
৬১৩১। উরওয়া ইবনে যুবায়ের (রা) বর্ণনা করেছেন যে, আয়েশা (রা) তাঁকে একথাটা
বর্ণনা করে শুনিয়েছেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয়তমা
কন্যা ফাতিমাকে (রা) ডেকে তাঁর সাথে গোপন কিছু কথা বললে তিনি কেঁদে ফেললেন। এরপর আবার
কিছু আলাপ করলে তিনি হাসলেন। আয়েশা (রা) বলেন, আমি ফাতিমাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা বলুন
তো, সে কোন কথা যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার সাথে গোপনে বলার
পর আপনি কেঁদে ফেলেছেন? তারপর আবার গোপনে আলাপ করলে হাসলেন? ফাতিমা (রা) বললেন, তিনি
প্রথমে আমার সাথে গোপনে আলাপ করে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছেন তখন আমি কেঁদে ফেলেছি।
এরপর তিনি গোপনে আলাপ করে আমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁর পরিবারের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম
তাঁর পিছনে থাকব। একথা শুনে আমি হেসেছি।
৬১৩২। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ তাঁর
নিকটে ছিলেন। তাদের একজনকেও তিনি পশ্চাতে রাখেননি। এমন সময় ফাতিমা (রা) পায়ে হেঁটে
এগিয়ে আসলেন, তাঁর হাঁটা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাঁটার মাঝে
কোন ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখে
স্বাগতম জানালেন এবং বললেন, প্রিয় কন্যা তোমাকে মুবারকবাদ! অতঃপর তিনি তাঁকে নিজ ডানে
অথবা বামে বসালেন এবং তাঁর সাথে গোপন আলাপ করলেন। আলাপ শুনলে ফাতিমা চিৎকার করে কাঁদতে
শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর অস্তির অবস্থা দেখলেন,
তখন আবার তাঁর সাথে গোপনে আলাপ করলেন। এবার ফাতিমা হাসতে লাগলেন। তখনি আমি ফাতিমাকে
বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের মধ্য থেকে একমাত্র আপনাকে
বিশেষ করে গোপন আলোচনায় শরীক করেছেন, এরপরও আপনি কাঁদছেন? যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে গেলেন, তখনি আমি ফাতিমাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন? ফাতিমা বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপন কথা ফাঁস করতে
পারি না। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল হয়ে গেল, আমি বললাম,
আপনার উপর আমরা যে অধিকার আছে সে অনুযায়ী আপনাকে খোদার দোহাই দিয়ে বলছি আপনি আমাকে
জানিয়ে দিন যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে বলেছেন। তখন ফাতিমা
(রা) বললেন, হাঁ এখন বলতে পারি। প্রথমবার যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমার সাথে গোপন আলাপ করলেন, তখন তিমি আমাকে একথা জানিয়েছেন যে, ইতোপূর্বে জিবরাঈল আলাইহিস
সালাম প্রতি বছর একবার বা দু’বার তাঁর নিকট পবিত্র কুরআন তুলে ধরতেন, আর এ মুহূর্তে
তিনি দু’বার তা তুলে ধরেছেন। আরও জানিয়েছেন, আমার একান্ত ধারণা আমার মৃত্যু সন্নিকটে।
অতএব আল্লাহকে ভয় কর ও ধৈর্য ধারণ কর। মনে রেখ আমিই তোমার সর্বোত্তম পূর্বসূরী (পরাপারের
যাত্রী)। ফাতেমা বলেন, একথা শুনে এরূপ ক্রন্দন করলাম যা আপনি দেখলেন, তখন পুনরায় তিনি
গোপনে আমাকে বললেন, হে ফাতিমা! তুমি কি একথা পছন্দ কর না যে, তুমি হবে (পরকালে) সকল
ঈমানদার মহিলাদের সর্দার (নেত্রী) অথবা বলেছেন এ উম্মাতের মহিলা সম্প্রদায়ের নেত্রী।
ফাতিমা বলেন, একথা শুনে আমি হাসলাম যা আপনি দেখেছেন।
সহীহ মুসলিম
[সপ্তম খণ্ড]
ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল
হাজ্জাজ (র)
অনুবাদ: মাওলানা আফলাতুন
কায়সার; সম্পাদনা: মাওলানা মুহাম্মাদ মূসা
বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার,
ঢাকা
No comments