Banners

যে লোক হুসাইনকে মুহাব্বাত করে, আল্লাহ তাকে মুহাব্বাত করেন। Whoever loves Hussein, God loves him.

অনুচ্ছেদঃ ৩১।। আল-হাসান ইবনু ‘আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা

জান্নাতী যুবকদের সরদার এর মর্যাদা, ইমাম হাসান ও হুসাইন, সহীহ আত্-তিরমিযী,
৩৭৬৮। আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল-হাসান ও আল হুসাইন (রাযিঃ) প্রত্যেকেই জান্নাতী যুবকদের সরদার।
সহীহঃ সহীহাহ্ (৭৯৬)

৩৭৬৯। উসামাহ্ ইবনু যাইদ (রাযিঃ) বলেন, এক রাতে আমা কোন দরকারে নাবী (সাঃ)-এর কাছে গেলাম। অতএব নাবী (সাঃ) এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে, একটা কিছু তাঁর পিঠে জড়ানো ছিল যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার দরকার সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানোর এটা কি? তিনি পরিধেয় বস্ত উন্মুক্ত করলে দেখা দেল তাঁর দুই কোলে হাসান ও হুসাইন (রাযিঃ)। তিনি বললেনঃ এরা দু’জন আমার পুত্র এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ! আমি এদের দু’জনকে মুহাব্বাত করি। সুতরাং তুমি তাদেরকে মুহাব্বাত কর এবং যে ব্যক্তি এদেরকে মুহাব্বাত করবে,  তুমি তাদেরকেও মুহাব্বাত কর।
হাসানঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬১৫৬)।

৩৭৭০। ‘আবদুর রহমান ইবনু আবী নু‘ম (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে এক ইরাকবাসী মাছির রক্ত কাপড়ে লাগলে তার বিধান প্রসঙ্গে ইবনু ‘উমার (রাযিঃ)-এর কাছে জানতে চায়। ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) বললেন, তোমরা তার প্রতি লক্ষ্য কর, সে মাছির রক্ত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছে। অথচ তারােই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পুত্রকে (নাতি হুসাইন) হত্যা করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন দু’জন এই পৃথিবীতে আমর দু’টি সুগন্ধময় ফুল।
সহীহঃ মিশকাত (৬১৫৫), সহীহাহ্ (৫৬৪), বুখারী সংক্ষিপ্তভাবে।

৩৭৭৩। আবূ বাক্‌রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (মাসজিদে নাববীর) মিম্বারে উঠে বললেনঃ আমার এ পুত্র (হাসান) নেতা হবে এবং আল্লাহ তা‘আলা তার মাধ্যমে (মুসলমানদের) দু’টি বিবদমান দলের মাঝে সমঝোতা স্থাপন করাবেন।
সহীহঃ রাওযুন্ নাযীর (৯২৩) ইরওয়া (১৫৯৭), বুখরী।

৩৭৭৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ্ (রাযিঃ) বলেন, আমি আমার পিতা বুরাইদাহ্ (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ হাসান ও হুসাইন (রাযিঃ) লাল বর্ণের জামা পরিহিত অবস্থায় (শিশু হওয়ার কারণে) আছাড় খেতে খেতে হেঁটে আসেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মিম্বার হতে নেমে তাদের দু’জনকে তুনে এনে নিজের সম্মুখে বসান, তারপর বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা সত্যই বলেছেন, “তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের পরীক্ষা বিশেষ”- (সূরা তাগাবূন ১৫)। আমি তাকিয়ে দেখলাম এই শিশু দু’টি আছাড় খেতে খেতে হেঁটে আসছে। আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, এমনকি আমার বক্তৃতা বন্ধ করে তাদেরকে তুলে নিতে বাধ্য হলাম।
সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৬০০)।

৩৭৭৫। ইয়া‘লা ইবনু মুর্‌রাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ হুসাইন আমার হতে আমি হুসাইন হতে। যে লোক হুসাইনকে মুহাব্বাত করে, আল্লাহ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হুসাইন।
হাসানঃ ইবনু মাজাহ (১৪৪)

৩৭৭৬। আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, লোকদের মাঝে দৈহিক কাঠামোয় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে আল-হাসান ইবনু ‘আলীর তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিল না।
সহীহঃ বুখারী।

৩৭৭৮। আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) বলেন, আম ইবনু যিয়াদের নিকট হাযির ছিলাম। সে সময় আল-হুসাইন (রাযিঃ)-এর শির (কারবালা হতে) এনে হাযির করা হল। সে তার নাকে ছড়ি মারতে মারতে (ব্যঙ্গোক্তি করে) বলতে লাগল, এর ন্যায় শুশ্রী আমি কাউকে তো দেখিনি! বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় আমি বললাম, সতর্ক হও! লোকদের মাঝে (দৈহিক কাঠামোয়) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে আল-হুসাইন ইবনু ‘আলীর তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিল না।
সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬১৭০), বুখারী।

৩৭৮০। ‘উমরাহ্ ইবনু ‘উমাইর (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ ও তার সাথীদের ছিন্ন মস্তক এনে কূফায় আর-রাহ্‌বা নামক জায়গায় মাসজিদে স্তূপিকৃত করা হলে আমি সেখানে গেলাম। সে সময় লোকেরা এসে গেছে, এসে গেছে বলে চেচামেচি করতে লাগল। দেখা গেল একটি সাপ এসে ঐসব মাথাসমূহের অভ্যস্তরে ঢুকে পড়ছিল। এমনকি সাপটি ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদের নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করল, তারপর বের হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।লোকেরা আবারও চীৎকার করে বলতে লাগলো, এসে গেছে এসে গেছে। এরূপে সাপটি দু’বার অথবা তিনবার এসে তার নাকের ছিদ্রে ঢুকে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর বের হয়ে যায়।
সনদ সহীহ।

৩৭৮১। হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) হবে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমার  মা আমাকে প্রশ্ন করেন, নাবী (সাঃ)-এর নিকট তুমি কখন যাবে? আমি বললাম, আমি এতদিন হতে তাঁর নিকট উপস্থিত পরিত্যাগ করেছি। এতে তিনি আমার উপর নারাজ হন। আমি তাকে বললাম, নাবী (সাঃ)-এর সঙ্গে আমাকে মাগরিবের নামায আদায় করতে ছেড়ে দিন। তাহলে আমি তাঁর কাছে আমার ও আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা আবেদন করব। অতএব নাবী (সাঃ)-এর নিকট আমি হাযির হয়ে তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। তারপর তিনি নফল নামায আদায় করতে থাকলেন, অবশেষে তিনি এশার নামায আদায় করলেন। তারপর তিনি বাড়ির দিকে যাত্রা করলেন এবং আমি তাঁর পিছু পিছু গেলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি কে, হুযাইফাহ্? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমার কি দরকার, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে এবং তোমার মাকে ক্ষমা করুন। তিনি বললেনঃ একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে অনুমতি চেয়েছেনঃ ফাতিমাহ্ জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা।
সহীহঃ তা‘লীকুর রাগীব (২০৫, ২০৬), মিশকাত (২১৬২), সহীহাহ্ (২৭৮৫)।

৩৭৮২। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) হাসান ও হুসাইনকে দেখে বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি এ দু‘জনকে মুহাব্বাত করি, সুতরাং তুমিও তাদেরকে মুহাব্বাত কর।
সহীহঃ সহীহাহ্ (২৭৮৯)।

৩৭৮৩। ‘আদী ইবনু সাবিত (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আল-বারাআ ইবনু ‘আযির (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ নাবী (সাঃ)-কে ‘আলীর পুত্র হাসানকে তাঁর কাঁধে তুলে নিয়ে আমি বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি মুহাব্বাত করি, অতএব তাকে তুমিও মুহাব্বাত কর।
সহীহঃ সহীহাহ্ (২৭৮৯), বুখারী ও ‍মুসলিম।

সহীহ আত্‌-তিরমীযী [ষষ্ঠ খণ্ড] হাদিস নং ৩৭৬৮, ৩৭৬৯, ৩৭৭০, ৩৭৭৩, ৩৭৭৪, ৩৭৭৫, ৩৭৭৬, ৩৭৭৮, ৩৭৮০, ৩৭৮১, ৩৭৮২ এবং ৩৭৮৩।
মূল: ইমাম হাফিয মুহাম্মদ বিন ঈসা সাওরাহ আত্‌-তিরমিযী (রহিমাহুমুল্লাহ)
তাহকীক: মোহাম্মদ নাছিরুদ্দীন আলবানী
অনুবাদক ও সম্পাদনায়: হুসাইন বিন সোহরাব, হাদীস বিভাগ- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনাহ্ সৌদীআরব এবং শাইখ মোঃ ঈসা মিঞা বিন খলিলুর রহমান মুনতাব শররীআহ্ বিভাগ- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনাহ্, সৌদী আরব। 

No comments

Powered by Blogger.