একজন আর্দশ পিতা তার পূত্রের প্রতি উপদেশ। An ideal father advises his son.
সিফফিন হতে ফেরার পথে হাযিরিন নামক স্থানে ক্যাম্প করার পর হাসান ইবনে আলীর উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন
এ পত্র এমন পিতা হতে যিনি
সহসাই মৃত্যুবরণ করবেন, যিনি সময়ের কষ্টের সারবত্তা স্বীকার করেন,
যিনি জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, যিনি সময়ের দুর্দশার কাছে নিজেকে
সমর্পণ করেছেন, যিনি দুনিয়ার পাপরাশিকে অনুধ্যান করতে পারেন,
যিনি মৃতের আবাসস্থলে বাস করছেন এবং যিনি যেকোন দিন পৃথিবী হতে প্রস্থানের
অপেক্ষায় আছেন।
এমন পুত্রের প্রতি যিনি যা
অর্জিত হয়নি তা পাবার আকুল আকাঙ্খা করে, যিনি পদচারণা করছেন তাদের
পথে যারা মরে গেছে, যিনি যন্ত্রণার শিকার, যিনি সময়ের উদ্বগ্নতার সাথে সম্পৃক্ত, যিনি দুর্দশার
লক্ষ্য, যিনি দুনিয়ার বঞ্চনার শিকার, যিনি
নৈতিকতার কাছে বন্দি, যিনি শোক ও কষ্টের আত্মীয় এবং মৃতদের উত্তরসূরী।
এ দুনিয়াকে আমা হতে
ফিরিয়ে দিয়ে আমি যা শিখতে পেরছি এখন তুমি তা জেনে রাখো। আমার ওপর সময়ের
আক্রমণ ও আমার প্রতি পরকালের আগমনই আমার নিজকে ছাড়া অন্য কাউকে স্মরণ করা বা অন্য কিছু
চিন্তা না করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যখন অন্যদের কথা ত্যাগ করে আমার নিজের উদ্বিগ্নতার মধ্যে ডুবে যাই তখন আমার জ্ঞান-বুদ্ধি আমাকে আমার কামনা-বাসনা হতে রক্ষা করে। আমার বিবেক আমার কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা
করে এবং আমাকে দৃঢ়তার দিকে পরিচালিত করে যাতে কোন চাতুরি ও মিথ্যা দ্বারা কলুষিত হবার
কিছু নেই। এখানে আমি তোমাকে আমার অংশ হিসাবে দেখেছিলাম। কিন্তু অন্য বিষয়ে তোমাকে আমার সম্পূর্ণ হিসাবে দেখেছিলাম। তাতে তোমার ওপর কিছু আপতিত হলে মনে হতো
যেন আমার ওপর আপতিত হয়েছে এবং যদি তোমার কাছে মৃত্যু আসে তবে মনে হতো যেন আমার কাছে
এসেছে। ফলে তোমার কর্মকান্ড
আমার বলে মনে হতো যেমন করে আমার বিষয়াবলী আমার বলে মনে হতো। সুতরাং আমি তোমাকে এ লেখাটা দিয়েছি যাতে তুমি এতে সাহায্য পেতে
পার, আমি বেঁচে থাকি আর না থাকি।
আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি
আল্লাহ্কে ভয় করতে, হে আমার পুত্র, তাঁর
আদেশ মেনে চলতে, তাঁর জেকেরে তোমার হৃদয় পূর্ণ করে রাখতে এবং
তাঁর আশায় লেগে থাকতে। কোন কিছুর সাথে সম্পর্ক এত বিশ্বাস্ত নয় যা আল্লাহ্ ও তোমার মধ্যকার সম্পর্কের বেলায়, যদি তুমি তা ধরে রাখ। উপদেশ দ্বারা হৃদয়কে প্রাণচঞ্চল কর, আত্মেৎসর্গ দ্বারা এটাকে হত্যা কর, দৃঢ় ইমান দ্বারা এটার
শক্তি যোগাও, প্রজ্ঞার দ্বারা এটাকে ঔজ্জ্বল্য দান কর,
নৈতিকতার প্রতি এটাকে বিশ্বাসী কর, মৃত্যুর কথা
স্মরণ করিয়ে এটকে অবদমিত কর, দুনিয়ার দুর্ভাগ্য এটাকে দেখিয়ে
দাও, কালের কর্তৃত্বে
দিবা ও রাত্রির পরিবর্তন দিখিয়ে এটাকে ভীত কর, অতীব লোকদের ঘটনাবলী
স্মরণ করিয়ে এটাকে ভীত কর। অতীব লোকদের শহর ভ্রমণ কর এবং লক্ষ্য কর তারা কি করেছিল, কি রেখে গেয়েছে, কোথায় তারা গেঝে এবং কোথায় তারা আছে। তুমি দেখবে তারা বন্ধু-বান্ধব সব রেখে একাকীত্বে চলে গেছে। সহসাই তুমিও তাদের মত চলে যাবে। সুতরাং তোমার থাকার স্থানের পরিকল্পনা কর এবং দুনিয়ার কাছে পরকালের
জিন্দেগীকে বিক্রি করো না।
যা তুমি জান না সে বিষয়ে আলোচনা পরিহার
করো এবং যে বিষয়ে তুমি সম্পৃক্ত নও সে বিষয়ে কথা বলো না। যে পথে গেলে পথভ্রষ্ট হবার সম্ভবনা থাকে
তা হতে দূরে থেকো। কারণ যে পথে ভয় থাকে সে পথে না চলাই উত্তম। কল্যাণকর কাজ করতে অন্যদের বলো। তাতে তুমি সুলোকদের মাঝে থাকতে পারবে। তোমার কর্মে ও বক্তব্যে পাপ হতে অন্যদের বিরত রেখো। যারা পাপ করে তাদের থেকে দূরে থাকার জন্য
সাধ্যমত চেষ্টা করো। আল্লাহ্র জন্য সংগ্রাম করো। যেহেতু এটা তাঁর প্রাপ্য। যারা গালাগালি করে তাদের গালি যেন তোমাকে
আল্লাহ্র ব্যাপারে নিবৃত্ত না করে। যে কোন বিপদই হোক না কেন ন্যায়ের খাতিরে ঝাঁপিয়ে পড়ো, অন্তর্দৃষ্টি দ্বীনের বিধানের মধ্যে আবদ্ধ রেখো। কষ্ট সহ্য করার অভ্যাস করো কারণ ন্যায়ের
ব্যাপারে ধৈর্য্য চরিত্রের একটি উত্তম বৈশিষ্ট্য। তোমার সকল কাজে নিজকে আল্লাহ্র উপর সোর্পদ করো; কারণ এতে তুমি এক শক্তিশালী রক্ষাকর্তা
ও নিরাপদ আশ্রয় পাবে। শুধুমাত্র তোমার প্রভুর কাছে যাচনা করো; কারণ দেয়া
না দেয়া শুধুমাত্র তাঁরই হাতে। আল্লাহ্র কাছে যত পার মঙ্গল প্রার্থনা করো। আমার উপদেশ বুঝতে চেষ্টা করো এবং এর প্রতি
অমনোযোগী হয়ো না; কারণ সর্বোত্তম বাণী উহা
যা হতে উপকার পাওয়া যায়। মনে রেখো, যে জ্ঞান কোন উপকারে আসে না তাতে কোন কল্যাণ
নেই এবং জ্ঞান উপকারে না আসলে তা অর্জনের কোন যৌক্তিকতা নেই।
হে আমার পুত্র, যখন আমি লক্ষ্য করলাম যে, আমি যথেষ্ট বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছি
এবং ক্রমেই আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি তখনই আমি তাড়াতাড়ি করে তোমার জন্য আমার উইল করা মনস্থ
করে উহার বিশিষ্ট পয়েন্টগুলো লিখলাম পাছে আমি যা তোমার কাছে প্রকাশ করতে চাই তার পূর্বেই
অতর্কিত মৃত্যু আমাকে পাকড়াও করে অথবা আমার দেহের মত বুদ্ধিমত্তাও দুর্বল হয়ে পড়ে অথবা
তোমার আবেগ অথবা দুনিয়ার ফেতনা তোমাকে অদম্য উট-শাবকের মত করে
তোলে। নিশ্চয়ই, একজন যুবক হৃদয় অকর্ষিত ভূমির মত। এতে যে কোন বীজ বপন করা যায়। সুতরাং আমি তোমার মনকে ঢেলে-ছেঁচে যথাযথভাবে তৈরী করার জন্য তড়িঘড়ি করে লিখলাম যাতে তোমার হৃদয় অনমনীয়
হবার আগে এবং তোমার মন অন্য কিছুতে পূর্ণ হবারা আগে তুমি তোমার জ্ঞান-বুদ্ধির
মাধ্যমে অন্যদের অভিজ্ঞতার ফসল আয়ত্ত করতে পার এবং এসব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজের কর্মপন্থা
নির্ধারণ করতে পার। এতে তুমি অভিজ্ঞতার অনুসন্ধানে কষ্ট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার
বিপদ এড়িয়ে যেতে পারবে। এভাবে আমরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তা তুমি জানতে পারছো। এমনকি আমরা যে সব জিনিস হারিয়ে ফেলেছি তাও তোমার কাছে স্পষ্ট
হয়ে যাচ্ছে।
যে আমার পুত্র, যদিও আমি আমার পূর্ববর্তীগণের বয়সে এখনো উপনীত হইনি তবুও আমি তাদেরকে গভীরভাবে
পর্যবেক্ষণ করেছি এবং তাদের জীবনের ঘটনা প্রবাহের ওপর গভীর চিন্তা করেছি। আমি তাদের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ভ্রমণ করেছি। বস্তুতঃ তাদের যেসব কর্মকাণ্ড
আমি জ্ঞাত হয়েছি তাতে
মনে হলো যেন আমি প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত তাদের সাথে ছিলাম। সে জন্যই আমি অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা এবং ক্ষতি হতে উপকার আলাদা করতে সমর্থ হয়েছি। সেব বিষয়ের সর্বোত্তম অংশ তোমার জন্য বেছে দিয়েছি। একজন জীবিত পিতা যতটুকু করা দরকার আমি তোমার কর্মকাণ্ডের
জন্য ততটুকু চিন্তা করি এবং তোমাকে প্রশিক্ষণ দেয়াই আমার লক্ষ্য। আমি মনে করি এটাই যথার্থ সময় সেহেতু তুমি
বয়ঃপ্রাপ্ত হতে যাচ্ছো এবং এ দুনিয়ার মঞ্চে নতুন। অপরদিকে তোমার নিয়্যত ন্যায়পরায়ণ ও তোমার হৃদয় স্বচ্ছ। কাজেই আল্লাহ্র কিতাব হতে তোমার শিক্ষা শুরু করা দরকার। তিনি সর্বশক্তির
আধার ও মহামহিত। তাঁর কিতাবের ব্যাখ্যা, এর আদেশ-নিষেধ,হালাল-হারাম এবং ইসলামের
বিধি-বিধানের বাইরে আমি যাব না। তৎপরও আমার ভয় হয় অন্য লোকেরা যেভাবে তাদের কামনা-বাসনা ও ভিন্ন মতের কারণে বিভ্রান্ত হয়েছে তুমিও তেমনটি হও কিনা। সুতরাং তোমাকে সতর্ক করা আমার অপছন্দীয়
হলেও আমার এ অবস্থানকে শক্ত করা আমি ভাল মনে করি। কারণ আমার দৃষ্টিতে যে অবস্থা তোমার ধ্বংস হতে নিরাপদ নয় যে
অবস্থার দিকে তোমাকে যেতে দিতে পারি না। আমি আশা করি সরল-সিঠক পথে চলতে আল্লাহ্
তোমাকে সাহায্য করবেন এবং তোমার স্থির
সংকল্পে তিনি তোমাকে পথ-প্রদর্শন করবেন। ফলে আমার এ উইল তোমার জন্য লিখলাম।
বৎস, জেনে রাখো, আমার এ উইল থেকে যা তুমি গ্রহণ করলে। আমি সব চাইতে খুশী হবো তা হলো আল্লাহ্কে ভয় করা, আল্লাহ্ তোমার উপর যা অত্যাবশ্যকীয় করেছেন
তাতে নিজকে আবদ্ধ রাখা এবং তোমার পূর্ব-পুরুষগণের আমল অনুসরণ করা ও তোমার আহলুল বাইতের
আমলে প্রতিষ্ঠিত থাকা। কারণ তারা কখনো তাদের পথে বিভ্রান্ত হয়নি এবং তাদের কর্মকাণ্ড সঠিক ও আলোকপূর্ণ
ছিল। তাদের চিন্তা শক্তি দায়িত্ব পালনের দিকে
তাদেরকে পরিচালিত করেছে
এবং যা তাদের জন্য করণীয় ছিল না তা হতে তাদেরকে বিরত রেখেছে। জ্ঞানার্জন ছাড়া যদি তোমার হৃদয় এটা গ্রহণ
করতে না চায় তবে তোমার তবে তোমার প্রথম অনুসন্ধান বোধগম্যতা ও শিক্ষার মাঝে হতে হবে- সংশয়ে পতিত হয়ে বা ঝগড়ায় জড়িয়ে হবে না। এ অনুসন্ধান চালাবার পূর্বে আল্লাহ্র সাহায্য প্রার্ণনা করো এবং অনুসন্ধানের উপযুক্ততা অর্জনের জন্য তাঁর কাঝে নিজকে সমর্পণ করো এবং সেসব
বিষয়ে হতে নিজকে সম্পূর্ণ
দূরে সরিয়ে নিতে হবে যা তোমাকে সন্দেহ ও
বিভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করে। যখন তুমি নিশ্চিত হবে যে, তোমার হৃদয় স্বচ্ছ ও বিনয়ী হয়েছে এবং তোমার
চিন্তা শক্তি একটি বিষয়ের এক বিন্দুতে (আহলুল বাইত) স্থির হয়েছে তখন আমি যা ব্যাখ্যা করেছি তুমি তা
দেখতে পাবে। কিন্তু সে সন্দর্শনের শান্তি যদি তুমি লাভ করতে সমর্থ না হও তবে জেনে রাখো,
তুমি শুধু
অন্ধ উষ্ট্রীর মত মাটিতে পদাঘাত করছো এবং অন্ধকারে নিপতিত হচ্ছো অথচ একজন দ্বীনের অনুসন্ধানকারী
অন্ধকারে নিপতিতি হয় না বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না। এমন হলে এ পথ পরিহার করাই উত্তম।
বৎস, আমার উপদেশ মেনে চলো এবং মনে রেখো
যিুন মৃত্যুর প্রভু তিনি জীবনেরও প্রভু এবং স্রষ্টা মৃত্যুর কাণও ঘটান। যিনি জীবন ধ্বংসকারী তিনিউ আবার জীবন সংরক্ষণকারী এবং যিনি রোগে নিপতিন
করে তিনি আরোগ্য দানকারী। এ পৃথিবী সে পথেই চলছে যেভাবে আল্লাহ্ তৈরী করছেন। এতে তিনি আনন্দ, বিচার,
শেষ বিচারের পুরস্কার ইত্যাদি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী দিয়েছেন এবং তুমি তা
জান না। যদি তুমি এ উপদেশ কোন কিছু বঝতে না পার তবে মনে করো এটা তোমার অজ্ঞতার কারণে হচ্ছে। কারণ যখন তুমি জন্মগ্রহণ করেছিলে তখন তুমি অজ্ঞ ছিলে। তৎপর তুমি জ্ঞান লাভ করেছিলে। এমন অনেক বিষয় আছে যে বিষয়ে তুমি অনবহিত
এবং এসবে তোমার দৃষ্টি বিস্মিত হয়ে যায় এবং তোমার চক্ষু বিচলিত হয়ে যায়। তৎপর তুমিতা দেখ। সুতরাং তার প্রতি ঝুঁকে থাক যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে আহার দিচ্ছেন এবং তোমাকে সুন্থ রেখেছেন। তোমার ইবাদত তাঁরই জন্য হবে, তোমার একাগ্রতা তাঁর প্রতি থাকবে এবং তাঁকেই ভয় করবে। বৎস, জেনে রাখো,
রাসুল (সঃ) যেভাবে মহিমান্বিত
আল্লাহ্র বাণী গ্রহণ করেছিলেন সেবাবে আর কেউ পায়নি। সুতরাং তোমার মুক্তির জন্য তাঁকেই নেতা
ও অগ্রণী হিসাব মনে রেখো। নিশ্চয়ই, তোমাকে উপদেশ দিতে আমি আমার চেষ্টার ক্রটি করবো
না এবং নিশ্চয়ই তুমি চেষ্টা করেও সে অন্তর্দৃষ্টি তোমার কল্যাণের জন্য লাভ করতে পারবে
না যা আমি তোমাকে দিতে পারবো।
বৎস, জেনে রাখো, তোমারা প্রভূর কোন অংশীদার নেই। যদি থাকতো তবে তার নবীও তোমার কাছে আসতো
এবং সে ক্ষেত্রে তুমি তার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা, কাজ ও গুণাবলী
জানতে পারতে। কিন্তু তিনি এক মাবুদ যেহেতু তিনি নিজেই তাঁর বর্ণনা করেছেন। তাঁর কর্তৃত্বে কেউ আপত্তি উত্থাপন করা
নেই। তিনি অনাদি অতীত হতে অনন্ত ভবিষ্যতে আছেন। তিনি সকল কিছুর পূর্বে আছেন এবং তাঁর কোন
প্রারম্ভ নেই। তিনি সব কিছুর পরেও থাকবেন, তাঁর কোন শেষ নেই। তিনি এত মহৎ যে চোখ আর হৃদয়ের সীমায় তাঁর
মহত্ব প্রমাণ করা যায় না। যদি তুমি এটা বুঝে থাক তবে তোমার উচিত হবে যে লোকের মত আমল করা যে হীন অবস্থা, কতৃত্বহীনতা, অক্ষমতা ও আনুগত্যের জন্য এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে, তাঁর
রোষের আশঙ্কায় সম্ভ্রস্ত থাকে। তিনি তোমাকে ধার্মিকতা
ছাড়া অন্য কিছুর আদেশ দেবেন না এবং পাপ ছাড়া অন্য কিছুতে বারণ
করবেন না।
বৎস, আমি তোমাকে এ দুনিয়ার অবস্থা, এর ধ্বংস এরবং এর বিদায় সম্বন্ধে অবহিত করেছি। পরকালেও দুনিয়ার মানুষের জন্য কি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে আমি তোমাকে
তাও অবহিত করেছি। আমি তোমার কাছে
এর নীতি-গর্ভ রূপক কাহিনী পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করেছি যাতে
তুমি উহা হতে উপদেশ গ্রহণ করেত পার এবং সেমত আমল করতে পার। যারা দুনিয়াকে বুঝতে পেরেছে তাদের উদাহরণ
হলো সে সব পর্যটকের মত যারা খরাপীড়িত স্থান থেকে শস্য-শ্যামল ও ফল-ফলাদিপূর্ণ স্থানে যাত্রা করে। তৎপর তারা তাদের কাঙ্খিত শস্যপূর্ণ স্থানে পৌঁছার
ও থাকার জন্য পথের কষ্ট সহ্য করে, বন্ধু-বান্ধবের বিচ্ছেদ বেদনা সহ্য করে, ভ্রমণের কষ্ট ও অন্নকষ্ট সহ্য করে। ফলতঃ এসবে তারা কোন বেদনা অনুভব করে না
এবং এতে কোন ব্যয়কে অপচয় মনে করে না। তাদের কাছে সে জিনিস ছাড়া অধিক প্রিয় কিছু নেই যা তাদেরকে তাদের লক্ষ্যে কাছে নিয়ে যায় এবং
তাদের আবাস স্থানের কাছে নিয়ে যায়। অপরপক্ষে যারা এ দুনিয়া দ্বারা প্রতারিত হয় তাদের উদহারণ হলো সে সব লোকের মত যার
শস্যপূর্ণ স্থান থেকে বিরক্ত হয়ে খরাপীতি এলাকায় চলে গেছে। ফলে তাদের কাছে সে স্থান ত্যাগ করা অপেক্ষা বিস্বাদের আর কিছু
নেই যেখানে তাদের যেতেই হব।
বৎস, অন্য লোক ও তোমার মাঝে নিজেকেই আচরনের মাপকাঠি নির্ধারণ করো। এভাবে তুমি নিজের জন্য যা আশা কর অন্যের জন্যেও
তা আশা করো এবং নিজের জন্য যা ঘৃণা কর অন্যের জন্যও তা ঘৃণা করো। কখনো অত্যাচার
করো না যেহেতু তুমি কখনেনা অত্যাচরিত হতে চাও না। অন্যের কল্যাণ করো যেহেতু তুমি অন্যের
থেকে কল্যাণ পেতে চাও। তোমার নিজের জন্য যা মন্দ মনে কর অন্যের জন্য তা মন্দ মনে করো। অন্যদের কাছ থেকে যে রকম ব্যবহার গ্রহণ করো তোমার
কাছ থেকে তারা সে রকম ব্যবহার গ্রহণ করে। যা তুমি জান না সে বিষয়ে কথা বলো না, এমন কি যা তুমি অল্প জান সে বিষয়েও না। তোমার নিকট যা বলা তুমি অপছন্দ কর না সে রকম কথা অন্যদেরও তুমি
বলো না। মনে রেখো, আত্ম-প্রশংসা শোভনতার বিপরীত এবং মনের জন্য একটা দুযোর্গ। সুতরাং তোমার সংগ্রাম বৃদ্ধি কর এবং অন্যের
উত্তরাধিকারীধীন সম্পদের প্রেজারায় হয়ো না। যখন তুমি ন্যায় পথে পরিচালিত হবে তখন যতটুকু পার আল্লাহ্র কাছে আনত হয়ো। মনে রেখো, তোমার সম্মুখে অনেক দুরত্বের
ও কষ্টের রাস্তা রয়ে গেছে এবং সে রাস্তা তুমি এড়িয়ে যেতে পারবে না। তোমর বোঝা হালকা
করে সে রাস্তার রসদ নিয়ে যাও। তোমর ক্ষমতার বেশী পিঠে নিয়ো না। তাতে ওজন তোমর জন্য ফেতনা হয়ে দাঁড়াবে
। যখন কোন অভাবী লোকের দেখা পাবে তখনই সুযোগ
হত ছাড়া না করে তাকে তোমার বোঝা বহন করতে দিয়ো এবং বিচার দিনে অবশ্যই তুমি তা ফেরত
পাবে। সে রসদ তুমি
তোমার সাধ্য মত রেখে দিয়ো কারণ পরে তা তোমার প্রয়োজন হবে। যদি কোন লোক তোমার কাছ থেকে কর্জ করতে ইচ্ছা করে এবং তোমার প্রয়োজনে ফেরত
দিতে রাজী হয় তবে এ সুযোগ
হাত ছাড়া করো না।
বৎস জেনে রাখো, তোমার সামনে একটি দূরাতিক্রম্য উপত্যকা রয়েছে। এত ভারী বোঝা সম্পন্ন লোক অপেক্ষা হালকা বোঝা সম্পন্ন লোক অপেক্ষাকৃত
ভাল অবস্থায় থাকবে। দ্রুতগামীদের চেয়ে ধীরগামীগণ খারাপ অবস্থায় পড়বে। এ পথে তোমার প্রান্তিক স্থান হলো বেহেশত না হয় দোযখ। সুতরাং বসে পড়ার আগে পরীক্ষা দাও এবং নেমে যাবার
আগে স্থান তৈরী কর। কারণ মৃত্যুর পর কোন প্রকার প্রস্তুতি নিতে পারবে না এবং এ দুনিয়ার ফিরেও আসতে
পারবে না। মনে রোখো, যিুন স্বর্গ-মর্ত্যের
সমুদয় সম্পদের মালিক তিনি তোমাকে তাঁর কাছে প্রার্থনা করার অনুমতি দিয়েছেন এবং তোমার প্রার্থনা কবুল করার প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন। তিনি তোমাকে
আদেশ দিয়েছেন তাঁর কাছে যাচনা করতে যাতে তিনি তোমাকে দিতে পারেন
এবং তাঁর দয়া ভিভক্ষা করতে যাতে তিনি তোমার ওপর তার রহমত বর্ষণ করতে পারেন। তোমার আর তাঁর মদ্যে তিনি কোন কিছু রাখেননি
যাতে তাঁর ও তোমার মধ্যে পর্দা হতে পারে। তোমর ও তাঁর মধ্যে কোন মধ্যস্ততাকারীর প্রয়োজন তিনি রাখেননি এবং যদি তুমি ভুল কর
তিনি তওবা করতে তোমাকে বারণ করেননি। তিনি শাস্তি প্রদানে তাড়াহুড়া করেন না। তিনি তওবা করার জন্য বিদ্রূপ করেন না এবং যখন হৃতমান করা যথার্থ হয়ে পড়ে তখন তা
না করে ছাড়েন না। তওবা কবুল করতে কখনো তিনি কঠোরতা অবলম্বন করেন না। তোমার পাপ সম্পর্কে কখনো কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবদ করেন না। তাঁর দয়া হতে তিনি কখনো নিরাশ
করেন না। বরং পাপ হতে বিরত থাকাকে তিনি পূণ্য হিসাবে গ্রহণ করেন। তোমার একটি পাপকে
একটি হিসাব করেন; অপরপক্ষে একটি পূণ্যকে
দশটি হিসাবে গণনা করেন। তিনি তোমার জন্য তওবার দরজা খোলা রেখেছেন। কাজেই যখনই তুমি
তাকে ডাক তিনি তোমার ডাক শুনতে পান এবং তুমি ফিসফিস করে বলো তিনি তাও শুনতে পান। তুমি তাঁর সম্মুখে
তোমার অভাব উপস্থাপন কর, নিজকে তাঁর সম্মুখে উম্মেচিত
কর, তোমর দুঃখের বিষয়ে অভিয়োগ কর, তোমর
কষ্ট দূরীভূত করার জন্য বিনীত প্রার্থনা কর, তোমার কাজে তাঁর
সাহায্য যাচনা কর এবং তাঁর রহমতের ভাণ্ডারের চাবি তোমার হতে দেবেন অর্থাৎ তাঁর কাছে
যাচনা করার পথ তোমাকে প্রদর্শন করবেন। সুতরাং যেখানে ইচ্ছা, সালাতের দ্বারা তাঁর আনুকূল্যের দরজা খোল এবং তাঁর রহমতের বারিধারা তোমার উপর পতিত হতে দাও। তোমার প্রার্থনা
মঞ্জুর হতে বিলম্ব হলে হতাশ হয়ো না কারণ প্রার্থনার মঞ্জুরী তোমার নিয়্যতের মাপকাঠিতে
হয়। কখানো কখনো প্রার্থনা বিলম্বে মঞ্জুর হয় এটা যাচনাকারীর অধিক পুরস্কার ও উন্নত
দানের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। কখনো তুমি হয়ত একটা জিনি যাচনা করেছো তা তোমাকে দেয়া হয়নি। তুমি দেখবে পরবর্তীকালে হয় তোমাকে যাচনাকৃত জিনিসটি অপেক্ষা উত্তম কিচু
দেয়া হয়েছে, না হয় তোমার কাছে থেকে এমন কিছু সরিয়ে নিয়ে গেছে
যা সরিয়ে নেয়া প্রকৃত পক্ষেই তোমার জন্য কল্যাণকর ছিল। কাজেই প্রভুর কাছে এমন কিছু চাইতে হবে যার সৌন্দর্য স্থায়ী হবে
এবং যার বোঝা তোমর কাছ থেকে দূরে থাকে। সম্পদের বিষয়টি
ধরা যাক- এটা তোমার জন্য স্থায়ী নয় এবং তুমি এর জন্য বেঁচেও থাবে
না।
বৎস, মনে রেখো, পরকালের জন্য তোমাকে সৃষ্টিকরা হয়েছে-
ইহকালের জন্য নয়। তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এ দুনিয়া হতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার জন্য- স্থায়ীভাবে থাকার জন্য নয়- মৃত্যুর জন্য- জীবত থাকার জন্য নয়। তুমি এমন এক স্থানে আছো যা তোমর নয়- এটা প্রস্তুতি
নেয়ার ঘর এবং পরকালের দিকের একটি পথ। তোমাকে মৃত্যু দ্বারা পাকড়া করা হবে এবং এ থেকে দৌড়ে পালিয়ে নিস্তার পাবার কোন
উপায় নেই। কারণ যে কাউকে পরাভুত করতে মৃত্যু ক্ষমতাবান। সুতরাং সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এ জন্য যে পাপাবস্থায় উহা যেন
তোমাকে পরাভূত না করে এবং তওবা কারার বিষয় চিন্তা করার সময় উহা যেন বাধার সৃষ্টি না
করে। এমনটি হলে তুমি
নিজকেই ধ্বংস করবে।
পুত্র আমার! মৃত্যুকে বেশী করে স্মরণ করো। মৃত্যু আসার পর হঠাৎ তোমাকে কোন্ স্থানে চলে যেতে হবে সে বিষয়ে
সর্বদা চিন্তা করো। এরূপ করলে তোমার প্রস্তুতির কারণে মৃত্যুর হঠাৎ আগমন তোমার কাছে দুঃখজনক হবে না। সাবধান, জাগতিক আকর্ষনের
শিক্ষার দ্বার তুমি প্রতারিত হয়ো না। এ বিষয়ে আল্লাহ সতর্ক করে দিযেছেন। দুনিয়ার নৈতিক চরিত্র তোমাকে অবহিত করা হয়েছে এবং কুফল তোমার কাছে উম্মেচন করা
হয়েছে। নিশ্চয়ই, যারা দুনিয়ার পেছনে দৌড়ায় তারা ঘেউ-ঘেউ করার কুকুরের মত অথবা মাংমাশী হিংসুক প্রাণীর মত, যারা একে অপরের ঘৃণা করে। উহাদের শাক্তিশালীগণ
দূর্বলগেণকে খেয়ে ফেলে এবং বড়গুরো ছোটগুলোকে পদদলিত করে। তাদের কতেক বাঁধা গরুর মত, আর কতেক বন্ধনহীন
করুর মত যারা দিগ্বিগিদ জ্ঞান হারা হয়ে অজানার উদ্দেশ্যে ছুটছে। তারা অসমতল উপত্যকায় ভ্রাম্যমান দুযোর্গগ্রস্থ
দল। তাদের চারণভূমিকে
রশ্মি হতে তাদের চোখ ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। সে জন্য তারা বিভ্রান্তিতে ঘুরপাক খাচ্ছে এবং দুনিয়ার আনন্দে ডুবে আছে। তারা দুনিয়কে খোদা মনে করে এবং দুনিয়ার
বাইরের সব কিচু ভুলে এর সাথে
তদ্রূপ খেলা করে। অন্ধকারাচ্ছন্নতা ক্রমশঃ দূরীভূত হয়ে যাচ্ছে। এখন এটা এরূপ যেন ভ্রমণকারী নীচে নেমে
যাচ্ছে এবং দ্রুতগামী সহসা মোলাকাত করবে। হে বৎস, জেনে রাখো, রাত ও দিনের
বাহনে যারা চড়ে যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকেই দিবারাত্র দ্বারা তাড়িত হচ্ছে যদিও সে স্থির
রয়েছে বলে দেখা যায় এবং সে একই স্থানে থেকে দুরত্ব অতিক্রম করে চলছে।
নিশ্চিতভাবে চেনে রাকো,
তুমি আমার আকাঙ্খা পূরণ করতে পারবে না এবং নির্দিষ্ট জীবন অতিক্রান্ত করতে পারবে না। তোমার পূর্বে যারা ছিল তুমি
তাদের পথেই আছো। সুতরাং চাহিদায় নমনীয় ও অর্জনে মধ্যপন্থী হও। কারণ অনেক সময় চাহিদা বঞ্চনার দিকে নিয়ে
যায়। জীবিকার প্রত্যেক
অনুসন্ধানকারী এটা পায় না এবং কোন মধ্যপস্থী অনুসন্ধানকারী বিঞ্চিত হয় না। প্রতিটি নীচ জিনিস থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে
রেখো যদিও বা এসব নীচ জিনিস তোমাকে তোমার ইন্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে; কারণ তুমি নিজের যে সম্মান ব্যয় কর তা আর ফিরে পাবে না। অন্যের গোলাম হয়ো না; কারণ আল্লাহ তোমাকে মুক্ত করে দিয়েছেন। যে ‘ভাল’ মন্দের মাধ্যমে অর্জিত হয় তাকে কোন কল্যাণ নেই এবং কষ্টের মাধ্যমে যে আয়েশ অর্জিত হয় তাতেও কোন কল্যাণ নেই। সাবধান, লোভীরা যেন তোমাকে নিয়ে ধ্বংসের ঝরণায় নামিয়ে না দিতে
পারে। যদি তুমি তাদের থেকে নিজকে সংযত রাখতে পার তবে তোমার নিজের ও আল্লাহ্র মাঝে আর কোন সম্পদশালী থাকবে না। কাজেই সংযত থেকো তাকে তোমার জন্য যা নির্ধাতিত তা দেখতে পাবে
এবং তোমর অংশ তুমি পাবে। যদিও সবকিছু আল্লাহ্
হতেই প্রাপ্ত তবুও মনে রেখো, মহিমান্বিত
আল্লাহ্র কাছ
থেকে সরাসরি সামান্য কিছু পাওয়া তাঁর বান্দার কাছ থেকে অনেক পাওয়া
অপেক্ষা অনেক বেশী মর্যাদার্শীল।
যা তুমি নীরব থেকে হারিয়েছো
তা সঠিক করে নেয়া অনেক সহজতর, কথা বলে যা বেশী হারিয়েছো তা অর্জন
করা অপেক্ষা। কোন পাত্রে যা থাকে ঢাকনা লাগিয়ে দিলে তা থেকে যায়। তোমার হাতে যা আছে তা রক্ষা করা অন্যের হাতে যা আছে তা চাওয়া
অপেক্ষা উত্তম ও পছন্দনীয়। অনেন্যর কাছ যাচনা করা অপেক্ষা নৈরাশ্যের তিক্ততা অনেক ভাল। সততার সাথে কায়িক শ্রম করা জ্বালাময় জীবনের
সম্পদ অপেক্ষা অনেক ভাল। একজন লোক তার বাতেনের সর্বোত্তম প্রহরী। অনেক সময় যা তার জন্য ক্ষতিকর মানুষ উহার জন্য সংগ্রাম করে। যে বেশী ক্থা বলে সে বোকার মত কথা বলে। যে কেউ ভেবে দেখে সে উপলদ্ধি করতে পারে। ধার্মিক লোকদের সাথে মেলামেশা করো; তাতে তুমিও তাদের একজন হয়ে যাবে। পাপী লোকদের থেকে দুরে সরে থাকো তাতে তুমি তাদের থেকে নিরাপদ
থাকতে পারবে। হারাম খাদ্য নিকৃষ্টতম বস্তু। দুর্বলের প্রতি অত্যাচার নিকৃষ্টতম অত্যাচার। কোমলতা যেখানে অচল সেখানেই কঠোরতাই কোমলাতা। অনেক সময় চিকিৎসাই পীড়া আর পীড়াই চিকিৎসা। অনেক সময় অশুভাকাঙ্খী সঠিক উপদেশ দেয় এবং শুখাকাঙ্খীও প্রতারণা
করে আশার ওপর নির্ভরশীল হয়ো না, কারণ আশা হচ্ছে বোকাদের প্রধান
অবলম্বন। কারো অভিজ্ঞতা সংরক্ষণ করা জ্ঞানের পরিচায়ক। তোমার সর্বোৎকৃষ্ট অভিজ্ঞতা হলো তা যা তোমাকে শিক্ষা
দেয়। অবসর শোকে রূপান্তরিত হবার আগে এর সৎব্যবহার করো। প্রত্যেক যাচনাকারীউ যা চায় তা পায় না এবং কোন প্রস্তানকারী
আর ফিরে আসে না। বিচার দিনের ব্যবস্থা না করা এবং পাপ অর্জন করা মানেই হলো ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়া। প্রত্যেক বিষয়ে একটা পরিণতি আছে। যা তোমার জন্য নির্ধারিত তা সহসাই তোমার
কাছে আসবে। একজন ব্যবসায়ী ঝুঁকি গ্রহণ করবেই। অনেক সময় ক্ষুদ্র পরিমাণও বৃহৎ পরিমাণ অপেক্ষা উপকারী। ইতর লোকের সাহাহ্য ও সন্দিহান বন্ধুত্বে
কোন মঙ্গল আশা করা যায় না। দুনিয়া যতক্ষণ তোমার মুষ্টিগত থাকে ততক্ষণ শুধু এর বিরুদ্ধে অভিযোগী হয়ো। কোন কিছু বেশীর আশায় নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলো
না। সাবধান থেকো, না হয় শত্রুতার অনুভূতি তোমাকে পরাভূত করবে।
তোমার ভ্রাতার সঙ্গে এমনভাবে
থেকো, যখন সে তোমার জ্ঞাতিত্ব অস্বীকার করে তখন তুমি তার জ্ঞাতিত্ব
স্বীকার করো। যখন সে ফিরে আসে তার প্রতি সদয় থেকো এবং তার কাছে গিয়ে বসো। যখন সে দিতে না চায় তখনা তার জন্য ব্যয়
করো। যখন সে বেরিয়ে
যেতে চায় তখন তাকে থাকার অনুরোধ করো। যখন সে কঠোর হয় তখন তুমি কোমল হয়ে যোয়ো। যখন সে ভুল করে তখন উহার ওজর বের করার চিন্তা এমনভাবে করো যেন তুমি তার একজন দাম
এবং সে তোমার সদাশয় প্রভু। কিন্তু এসব যেন অযথা না হয় সে দিকে যত্নবান হয়ো এবং কোন অবাঞ্চিত ব্যক্তির প্রতি
এরূপ আচরণ করো না। তোমার বন্ধুর শত্রুকে কখনো বন্ধু মনে করো না। এটা তোমার বন্ধুকে ক্ষেপিয়ে তুলবে। তোমর ভাইকে সত্য ও সঠিক উপদেশ দিয়ো- এটা ভাল হোক আর তিক্তই হোক। ক্রোধকে গিলে ফেলো কারণ পরিণামে এর চেয়ে মধুর আর কোন কিছু আমি দেখিনি এবং এর চেয়ে
আনন্দদায়ক ও ফলদায় আর কিছু নেই। যে তোমর প্রতি কঠোর তার প্রতি কোমল থেকো। কারণ এত সে শীগ্রই
তোমার প্রতি কোমল হয়ে যেতে পারে। আনুকূল্যের সাথে তোমার শত্রুর প্রতি ব্যবহার করো। এতে দু’টো কৃতকার্যতার ফল তুমি
পাবে- একটি হলো প্রতিশোধের কৃতকার্যতা এবং অপরটি হলো আনুকূল্য
করার কৃতকার্যতা। যদি তুমি মনে কর কোন বন্ধু র সাথে
বন্ধুত্ব ছিন্ন করবে তবে তোমার দিক হতে তাকে কিছু সুযোগ দিয়ো যাতে সে পুনরায় কখনো যেন
বন্ধুত্ব পুররুজ্জীবিত করতে পারে। যদি কেউ তোমার সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করে তবে তা সত্যে প্রমাণ
করো। তোমার ভাইয়ের
সাথে তোমার সম্পর্ক বিবেচনা করে তার স্বার্থের প্রতি কোন অবজ্ঞা প্রদর্শন করো না। কারণ তার স্বার্থের প্রতির অবজ্ঞা করলে
সে তোমার ভাই থাকবে না। তোমার ঘরের লোকেরা যেন তোমার দ্বারা দুর্দশাগ্রস্থ না হয়। যে তোমার দিক হতে ফিরে চলে গেছে তার কাছেও যেয়ো না। তোমার ভ্রাতার যেন তোমার জ্ঞাতিত্ব অস্বীকারে
ততটুকু দৃঢ়তা তুমি তার জ্ঞাত্বিত্বে রাখবো। তুমি সর্বদা তার প্রতি মঙ্গলকার
কাজে মন্দকে অতিক্রম
করে চলবে। যে ব্যক্তি তোমাকে
অত্যাচার করে তার অত্যাচার বড় একটা কিছু মনে করো না কারণ সে শুধুমাত্র নিজের ক্ষতি
ও তোমার উপকারেই প্রবৃত্ত আছে। যে তোমাকে খুশী
করে তার পুরস্কার যেন তাকে অখুশী করার মধ্যে না হয়।
বৎস, আমার! জেনে রাখো, জীবিকা দুই প্রকার-এক প্রকার জীবিকা যা তুমি অনুসন্ধান কর এবং অন্যপ্রকার জীবিকা যা তোমাকে অনুসন্ধান
করে। শেষোক্তটা এমন যে, যদি তুমি উহার কাছে পৌঁছতে
না পার তবে উহার তোমার কাছে পৌছাবে। প্রয়োজনের সময় কুঁকড়ে পড়া এবং সম্পদ পেলে কঠোর হওয়া কতউ না মন্দ। এ দুনিয়া হতে তোমার শুধু সেটুকু পাওয়া
উচিত যা দিয়ে তুমি তোমার স্থায়ী আবসা সাজাতে পার। যা তোমার হাত ছাড়া হয়ে গেছে তার যদি তুমি জের চান তা হলে যা
মোটেই তোমর কাছে আসেনি তার আশা কেরা। যা ঘটে গেছে এবং যা এখানো ঘটেনি এ দুটোর মধ্যে সিন্ধান্ত গ্রহণ করো, কারণ ঘটনাপ্রবাহ প্রায় একই রকম। কষ্ট না দিলে উপদেশ যাদের কোন উপকার
আসে না তাদের মতো হয়ো না, কারণ জ্ঞানীগণ শিক্ষা হতে উপদেশ গ্রহণ
করে আর পশুরা আঘাত করলে শিখে। ইমানের পবিত্রতাপ ও ধৈর্যের দৃঢ়তা দ্বারা উদ্বিগ্নতা ও অস্তিরতার আক্রমণ হতে নিজকে
রক্ষা করো। যে মধ্যপথ পরিহার করে সে সীমালঙ্ঘন
করে। সহচর আত্মীয়ের মত। সে ব্যক্তিই বন্ধু যার অনুপস্থিতি বন্ধুত্বের প্রমাণ করে। কামনা (খাহেশ)
দুঃখের অংশীদার। অনেক সময় নিকটবর্তী দুরবর্তীগণ অপেক্ষা দূরের হয়ে পড়ে আবার দূরবর্তী অপেক্ষাও নিকটতর
হয়। সেই ব্যক্তি
আগন্তুক যার কোন বন্ধু নেই। যে ব্যক্তি অধিকার লঙ্ঘন করে সে নিজের পথ সংর্কীর্ণ করে। যে নিজের অবস্থায় স্থির থাকে সে তার পথেও স্থির। যা তোমরা নিজেদের ও মহিমান্বিত আল্লাহ্র মধ্যে গ্রহণ
করেছো তা সর্বাপেক্ষা বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থাতাকারী। যে তোমার স্বার্থের বিষয়ে উদাসীন সে তোমর
শত্রু। যখন লোভ ধ্বংসের দিক নিয়ে যায় তখন বঞ্চনা হয় অর্জন। প্রত্যেক ক্রটি-বিচ্যুতি পুনরীক্ষণ
করা যায় না এবং প্রত্যেক সুযোগ-সুবিধা বারবার আসে না। অনেক সময় চক্ষুস্মান লোকও
পথ হারায়ে ফেলে আবার অন্ধলোক সঠিক পথের সন্ধান পায়। মন্দ কাজে সর্বদা জ্ঞাতিত্বের প্রতি অবজ্ঞা জ্ঞানীদের জ্ঞাতিত্বের
প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সমান। যে কেউ দুনিয়াকে নিরাপদ
মনে করবে তার সাথেই দুনিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করবে। যে দুনিয়াকে মহৎ মনে করবে সে দুনিয়া দ্বারা
অবনমিত হবে। যারা তীর ছোড়ে তাদের সকলেই লক্ষ্যভেদ করতে পারে না। যখন কর্তৃত্বে বদল হয় তখন সময় বদল হয়ে যায়। কোন বিষয়ে সিন্ধান্ত নেয়ার নেয়ার আগে বন্ধুদের
সাথে আলোচনা করো এবং বাড়ী করার আগে প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করো। সাবধান, তোমরা বক্তব্যে
এমন কিচু বলো না যাতে অন্যরা উপহাস করবে; এমনকি তা যদি অন্য কারো
বক্তব্যও হয়। নারীর সাথে কোন বিষয়ে পরামর্শ করো না। কারণ তারা দূরদৃষ্টিতে দুর্বল এবং তাদের
দৃঢ়চিত্ততা নেই। ঘোমটা দিয়ে তাদের
চোখ বন্ধ করে দিয়ো, কারণ ঘোমটা দেয়ার বাধ্য
বাধকতা তাদেরকে দীর্ঘদিন করে রাখবে। তাদের সাথে কোন অবিশ্বস্ত লোকের সাক্ষাত
করতে দেয়া আর তাদের বাইরে আসতে দেয়া সমার্থবোধক। তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে না জানা যদি তুমি ব্যবস্থা করতে পার
তবে তাই করো, কারণ নারী ফলো ফূল- প্রশাসক
নয়। তার নিজের বাইরে তাকে সম্মান দিয়ো না। অন্যের জন্য মধ্যস্থতা করায় তাকে উৎসাহিত করো না। নারীর প্রতি অযথা সন্দেহ পোষণ করো না। এতে একজন সঠিক নারীও খারাপ হয়ে যায় এবং সতী নারীও বিপথগামী হয়ে
যায়।
তোমার অধীনস্থ সকল কর্মচারীর
কাজ নির্ধারিত করে দিয়ো যাতে তাদেরকে আলাদাভাবে দায়ী করা যায়। এ রকম করলে তারা একজনের কাজের দায়িত্ব
অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না। তোমার আত্মীয় স্বজন ও জ্ঞাতিগণকে সম্মান প্রদর্শন করো; কারণ তারা হলো তোমারা পাখা যা দিয়ে তুমি উড়বে, তোমার
আসল ভিত্তি যে দিকে তুমি ফিরে যাবে এবং তোমার হাত যা দিয়ে তুমি আক্রমণ করবে। তোমার দ্বীন ও দুনিয়াকে আল্লাহ্র ওপর ছেড়ে দিয়ো এবং নিকটের ও দূরের ইহকাল ও পরকালে যা তোমার জন্য সর্বোত্তম
তা নির্ধারণ করার জন্য প্রার্থনা করো। এখানেই শেষ করলাম।
বাহারানী ১০১ (পম খন্ড, পৃঃ ২) লিখেছেন যে,
আমিরুল মোমেনিন এ উপদেশাবলী তাঁর পুত্র ইবনে হানাফিয়াকে লিখেছেন। অপরপক্ষে শরীফ রাজী লিখেছেন, যে এ উপদেশ ইমাম হাসাসের জন্য লিখেছেন। প্রকৃতপক্ষে আমিরুল মোমেনিন আরো একটা উপদেশ পত্র লিখেছিলেন যার
কিয়দংশ এখানেও উল্লেখিত হয়েছে। সেটা ছিল ইমাম হাসানকে সম্বোধন করে (আশরাফ ১৪,
পৃঃ১৫৭-১৫৯, মসলিসী ১০৩,
পৃঃ ১৯৬-১৯৮)।
আমিরুলে মোমেনিন এ উপদেশাবলীর
তাত্বিক দিক লক্ষ্য করলে প্রতিয়মান হয় যে, এটা মুহাম্মাদ হানাফিয়াকেই
লিখা হয়েছিল। ইমাম হাসানকে তিনি যেভাবে গড়ে তুলেছিরেন, তদুপরি রাসুলের
(সঃ) সংস্পর্শের কারণে ইসলামের বাহ্যিক ও গুপ্ত
বিষয়সমূহ তিনি অবহিত ছিলেন। তার ইঙ্গিত মাওলা আলী বহুবার করেছেন যা এ গ্রন্থেও উল্লেখিত হয়েছে। তদুপরি সিফফিনের যুদ্ধের সময় ইমাম হাসান
বয়ঃপ্রাপ্ত ছিলেন। কাজেই এ উপদেশাবলী হানাফিয়ার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে বলে দৃঢ় বিশ্বাস – বাংলা অনুবাদক।
আমরা একজন মহৎ পিতার উপদেশাবলী
সম্বলিত পত্র দেখলাম। কিন্তু মুয়াবিয়া তার দুশ্চরিত্র পুত্র ইয়াজিদকে খলিফা বানানোর জন্য বিভিন্ন অপকৌশল
ও মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে কতিপয় লোকের বায়াত ইয়াজিদের নামে গ্রহণ করেত বাধ্য করেছিলেন। তিনি মৃত্যুশর্যায় থাকাকালে ইয়াজিদ দামস্কের
বাইরে মৃগয়ারত ছিল। সে কারণে তিনি ইয়াজিদের জন্য যে উপশেশ নামা লিখে দিয়েছিলেন তা ১৯৯২ সনের ৪ জুলাই, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল যা নিন্মে উদ্ধৃত করা হলোঃ
প্রিয় বৎস! আমি তোমার পথের সব কাঁটা অপসারণ করে পথ সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিয়েছি;
দুশমনের পরাস্থ করে আরববাসীদের গর্দান তোমার কাছে নত করে দিয়েছি। তোমার জন্য অঢেল
ধন-সম্পদ জমা করে রেখেছি। তোমার প্রতি
আমার উপদেশ, আমার এসব উকারের কৃতজ্ঞতা
স্বরূপ তুমি হেজাজবাসীদের প্রতি দয়াপ্রবণ থাকবে, তারা তোমার আসল
ভিত্তি। যারা তোমার কাছে আসবে তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করবে। ইরাকবাসীদের
প্রতিও অনুগ্রহ করবে। তারা প্রতিদিন নয়া শাসনকর্তা দাবী করলে
তাই করবে। সিরীয়দেরকে তোমার উপদেষ্টা নিয়োগ করবে। দুশমনের সাথে মোকাবেলা করতে হলে সিরীয়দের
সাহায্য গ্রহণ করো। কামিয়াব হাবার পর সিরীয়দেরকে তাদের শহরে
ফেরত আনত। কেননা অন্যস্থানে অধিক অবস্থানের ফলে তাদের নৈতিক পরিবর্তন হবার আশঙ্কা থাকে। তোমার চারজন
শত্রু এখনো
রয়ে গেল। এরা হলো- হোসাইন ইবনে আলী,
আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর, আবদুর রহমান ইবনে আবুবকর
ও আবদুল্লাহ্ ইবনে জুবায়ের। এদের মধ্যে হোসাইন তোমার জন্য অধিক বিপদজ্জনক।
নাহ্জ আল-বালাগা
আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব
সংঙ্কলনঃ আশ-শরীফ আর-রাজী
ইংরেজি অনুবাদঃ সৈয়দ আলী রেজা
বাংলা অনুবাদঃ জেহাদুল ইসলাম
পত্র-৩১ পৃষ্ঠা-৩২৪-৩৩২
No comments