Banners

মধু

মধুর উপকারিতা কি কি, মৌমাছি, মধু খাওয়ার নিয়ম, মধু ব্যবহার,

মধু

আল্লাহ য়ালা মধুক্ষিকার উদর বা পেট হতে বিভিন্ন রঙের পানীয় এবং মধু বের করে থাকেন, যার মধ্যে মানুষর শেফা রোগমুক্তি রয়েছে অনত্র আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেনমধুতে রোগ মুক্তির বিশেষ প্রভাব রয়েছে
অন্রত্র আল্লাহ আরো এরশাদ করেছেন, তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে উহার অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেন, গৃহ নির্মাণ করে পাহাড়ে, বৃক্ষ মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাহাতে ইহার পর প্রত্যেক ফল হইতে কিছু কিছু আহার কর, অতঃপর তোমার পানীয়, যাহাতে মানুষের জন্য রহিয়াছে আরোগ্য অবশ্যই ইহাতে রয়েছে নিদর্শন, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য (সূরা-নাহল, আয়াত ৬৮-৬৯)
অন্যত্র এরশাদ হয়েছেজান্নাতে স্বচ্ছ মধুর নহর প্রবাহিত হবে” (সূরা-মুহাম্মদ, আয়াতঃ ১৫-৮৭)

হাদীস পাকে মধু গুনাবলি

 মধু সম্পর্কিত হাদীস পাকে বিভিন্ন রেওয়াতে-অর্থঃমধু কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের  চিকিৎসা নেওয়া উচিত (সুননে ইবনে মজাহ, হাকেম)
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সকালে মধু চেটে খাবে, তার কোন বড় রোগ হবে না” (মিশকাত শরীফ)
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলে আকরাম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “তোমরা দুটি শেফাদানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নাও, একটি মধু এবং অপরটি আল-কোরান (মিশকাত  শরীফ)
হযরত আবু নঈম, মা আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, “রাসূলে পাক (সাঃ)-এর নিকট মধু অত্যন্ত প্রিয় সুস্বাদু জিনিস ছিলো
রাসূলে পাক (সাঃ)-এর নিকট মধু প্রিয় খাদ্য বস্তু ছিলো কারণ আল্লাহ পাক সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেছেন, যার মর্ম কথা হলো, “মধুতে রোগ মুক্তির বিশেষ প্রভাব রয়েছে

মধু সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কিত হযরতে ওলামায়ে কেরামগণের এক বর্ণনায় এসেছে মধু হাজার-হাজার ফুল ফুলের নির্যাসের সাহায্যে তৈরি দুনিয়ার কোন প্রযুক্তি ব্যবহারে মাধ্যমে ইহা তৈরী করা যাবে না একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই স্বীয় কর্ম-কৌশলের মাধ্যমেই নিজ বান্দার জন্য ইহা সৃষ্টি করেছেন

মধুর মাধ্যমে শেফা সম্পর্কিত হাদীস সমূহ

হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি রাসূলে পাক (সাঃ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে, আরজ করলেন, আমার ভাই-এর পেটে ব্যাথা অথবা একথা বললেন যে, সে আমাশয়ে ভুগছে রাসূলে পাক (সাঃ) এরশাদ করলেন, “তাকে মধু পান করাও সে ব্যক্তি চলে গেল তবে আবার ফিরে এসে বলল, “আমি তাকে মধু পান করিয়েছি, কিন্তু মধুতে কোন উপকার আসে নাইএভাবে দু তিনবার সে ব্যক্তি রাসূলে পাক (সাঃ)-এর নির্দেশ অনুসারে একই কাজ করল চতুর্থবার এসে বলল, তার আমাশয় অথবা পেটের পীড়া থামছে না
রাসূলে পাক (সাঃ) এরশাদ করলেন, “আল্লাহ য়ালা সত্যই বলেছেন, হয়তো তোমমার ভাই-এর পেট মিথ্যাসুতরাং সে ব্যক্তি তার ভাইকে পুনরায় মধু পান করাল এবং সে সুস্থতা লাভ করল হাদীসের শেষ শব্দ হলো, সে মধু পান করাল এবং সুস্থ হয়ে গেল (বুখারী, মিশকাত, মুসলিম, তিরমিযীর, সুনামে আহমেদ)

মধুর বহুবিধ উপকারিতা

বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, মধুর অপরিসীম উপকারিতা রয়েছে
ভোরে খালি পেটে চেটে চেটে খেলে কফ দূরীভুত হয়, পাকস্থলী পরিষ্কার কারে, শরীরে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়, শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্র বৃদ্ধি করে, লালা কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে হৃদপিণ্ডকে সবল রাখে
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় চোখের যন্ত্রণা নিরাময় করে
মধু দাঁত শক্ত করে এবং দাঁতের রোগের জন্য বিশেষ ফরদায়ক
মধু রোগে-প্রতিরোধ বা শরীরের ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়ায় বলকারক, বীর্য বৃদ্ধিকারক জীবাণুনাশক (তিব্বে নব্বী)
খৃঃ পূর্ব ২৫০০ অদ্বে মিশরে পুরানো সংরক্ষণ লিপি থেকে জানা গেছে, সময়ে মধুকে ঘা সারানোর কাজে ব্যবহার করা হতো
কালিজিরার চূর্ণ, মধুসহ পান করলে ঠাণ্ডা কাশিজরিত সমস্যার পাশাপাশি মূত্র-কৃচ্ছতারয় খুব ভালো ফল পাওয়া যায়

রোগ নিরাময়ে মধু ব্যবহারের ইতিহাস

গ্রকি চিকিৎসক হিপোক্রেটাস বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে মধু ব্যবহার করতেন তিনি মধুকে অতিরিক্ত খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক বিজ্ঞান গ্যালেন মধুর ঔষধি গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন এবং এর বিষবিরোধী ধর্মও উল্লেখ করেছেন তাঁর মতে মধু আন্দ্রিক রোগে উপকারী বিশেষ করে দূর্বল শিশুদের মুখের আভ্যন্তরীণণ পঁচনশীল ঘাঁ-এর জন্য এটি খুবই উপকারী চিকিৎসা বিজ্ঞানের আরেক দিকপাল ইবনে সীনার মতে, মধু শরীরের বিভিন্ন ধরনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে এটি ক্ষুধা স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শোষক হিসেবে ব্যবহৃত হয় মধু পাকস্থলীর বিভিন্ন প্রকার রোগে বিশেষ উপকারি

আল-সমরকান্দী এভং ইবনে আল-নাসিফ বিভিন্ন প্রকার মুত্র রোগে মধু ব্যবহার করতেন আল-রাজী মুত্র পাথরীতে কালিজিরার সাথে মধু ব্যবহার করতেন ইউনানী মধ্য যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানী বিভিন্ন রোগে মধু ব্যবহার রতেন, (যেমন- পাকস্থলী অস্ত্রের রোগ, কোষ্টকাঠিন্য, অম্লাধিক্য, মুখের প্রবাহ, চোখের রোগ, চোখের পাতার প্রদাহ, কর্ণিয়ার ক্ষত, কর্ণিয়ার অস্বচ্ছতা, স্নায়ুরোগ, পক্ষাঘাত, রক্ত প্রবাহের অবরুদ্ধতাজতিন হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ, ত্বকের রোগ, সংক্রামনজনিত ক্ষত, সর্দ্দি, কাশি নিউমোনিয়া ইত্যাদি

মধু ব্যকটেরিয়া নির্মূল করে

গ্রাস্টিক আলসার অথবা ডিওডেনার আলসারে জন্যহেলিকো ব্যাকট-রপাইলরীনামক ব্যকটেরিয়াকে দায়ী করা হয় এই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে ক্যন্সার হৃদরোগ হয় রন্ডনে সেন্ট জর্জ হাসপাতালে পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে হৃদরোগের সম্ভবনা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি প্রভাবিত করে একটি গবেষণায় দেখা গছে, যে সব উঠতি বয়সের মেয়েদের দেখে ব্যকটেরিয়া নেই তাদের তুলনায় যাদের ব্যকটেরিয়া রয়েছে, তাদের দৈহিক অপেক্ষকৃত কম ৫৫৪ জন মেয়ের উপর গবেষণা চালিয়ে এই ফল পাওয়া গেছে এই ব্যাকটেরিয়া নির্মুলের জন্য এন্টি-বায়োটিক ব্যবহৃত হয় বর্তমানে এর আক্রমণে গ্যাস্টিক এবং ডিওডেনার আলসারে জন্য ট্রিপল থেরাপী ব্যবহৃত হয়

বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে মধুর ব্যবহার পদ্ধতি

পেটের রোগ-ব্যাধি, শরীরের পানি শুন্যতার, হাইপার হাইড্রোসিস, হার্ট থ্রম্বিং, শারীকিক দূর্বলতা, স্নায়ুবিক দূর্বলতা, কোষ্টকাঠিন্যতায় নিম্নোক্তভাবে মধূ ব্যবহার করতে হবে একেহানী ওয়াটার থেরাপীবলা হয়

তৈরীর পদ্ধতিঃ  

প্রথমে পরিষ্কার একটি কাঁচের গ্লাসে (এক) থেকে (তিন) চামচ মধু নিতে হবে এর পর এক গ্লাস অথবা পরিমান মত বিশুদ্ধ পনি গ্লাসে ঢালতে হবে এবং উক্ত মধু মিশ্রিত পানি পান করতে হবে

ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি, মুখের ঘা, শ্বাসকষ্টে, ফুসফুসীয় রোগে মধু নিম্নোক্তভাবে ব্যবহার করতে হবে
প্রত্যহ (এক) থেকে (তিন) চা চামচ মধু চেটে চেটে খেতে হবে সেই সাথে প্রয়োজনানুসারে / চা চামচ কালিজিরা তেল চেটে চেটে খেতে হবে অথবা প্রথম সকারে রাত্রে শয়নকালে এক টিমটি কালিজিরা চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে

মৌমাছির বিষের মাধ্যমে রোগ মুক্তি

বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, মৌমাছির হুলের বিষে কিছু কঠিন রোগ নিরাময়ের প্রতিষেধক রয়েছে মৌমাছির বিষ গেঁটেবাত রক্ত সংবহন তন্ত্রের রোগ Multiple Selerosis বা গেঁটেবাত নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে

বিজ্ঞানীরা মৌমাছির বিষে বেশ কিছু ধরনের প্রোটিন খুঁজে পেয়েছেন গবেষণায় দেখা গেছে, সব প্রোটিনের মধ্যকারফসফলিপাজ-নামক একপ্রকার এনজাইম থাকে; যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় সাধারণতঃ মধু সংগ্রহের জন্য মধু চাষ করা হলেও বিজ্ঞানীরা মৌমাছির বিষ সংগ্রহ করেছেন বিশেষ ধরনের কাগজের লাগামাত্রই বিদ্যুতের প্রভাবে মৌমাছি বিষ উগড়ে বা ঢেলে দেয় সম্প্রতি  মৌমাছির বিষ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এক র্দীঘ মেয়াদী গবেষণার কাজ শুরু করেছেন

ওয়াশিংটনের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল সেন্টারে বছরব্যাপী এই গবেষণা শুরু হয়েছে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মাইক্রোবায়োলজীর প্রফেসর জেসেফ বেলান্তি গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর মতে, মৌমাছির বিষের সাহায্যে রোগ নিরাময় ক্ষমতার ধারণা নতুন নয় বরং ইতিহাস থেকে জানা যায়, গ্রীক রোমানেরা মৌমাছির বিষের সাহায্যে রোগ নিরাময় সম্পর্কিত বিদ্যা সম্পর্কে জানত আর এই সূত্র ধরেই  সমকালীন বিজ্ঞানীরা বিষয়ে গবেষণায় আকৃষ্ট হন এরূপ আরেকটি ঘটনাতেই দেখা যায় গেঁটেবাত যাদের রয়েছে, এমন ব্যক্তি মৌমাছি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার রোগের দূর্ভোগ থেকে বিস্ময়করভাবে মুক্ত হয়ে গেছে
সংগ্রহঃ বিশ্বনবী'র (সাঃ) চিকিৎসা বিধান, ডাঃ আলমগীর মতি

No comments

Powered by Blogger.