Banners

হজরত সৈয়দশাহ এরশাদ আলী আল-কাদেরী (আঃ) (পীর ও মুর্শেদ)

সংক্ষিপ্ত জীবনী

হজরত এরশাত আলী আল-কাদেরী জন্ম কলকাতায় ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ৪ঠা ডিসেম্বর মোতাবেক ৩রা মহরম ১৩০১ হিজরী। তিনি ছিলেন আমাদের নবী করীম হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর ৩৩ তম বংশধর এবং বড়পীর আব্দুল কাদেরজিলানী (রাঃ)-এর ২১ তম বংশধর। শৈশবে তিনি শিক্ষা লাভ করেন কোলকাতা মাদ্রাসার সে যুগের প্রখ্যাত শিক্ষকের কাছে তাঁর গৃহ শিক্ষক ছিলেন মৌলানা বিলায়েৎ হোসেন ও প্রফেসার আবু তাহেরের মত সে যুগের প্রসিদ্ধ পণ্ডিত তিনি অতি অনায়সেই কোরান শরীফ, হাদীস শরীফ,  তাফসীর, ফেকাহ প্রভৃতি আয়ত্ত করে ফেলেন তার বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষনতায় ছুটে আসতেন জ্ঞানী গুনী পণ্ডিত ব্যক্তিগণ ধর্ম্মের গঢ়তত্ত্ব বিশ্নেষণের জন্য তাঁর পাবিবারিক বিশাল লাইব্রেরী যা পশ্চিম বাংলায় আরবী, ফারসী, উর্দ্দু পুস্তকের এক বিপুল সংখ্যাক কোন লাইব্রেরীতে অদ্যবধী নেই- সেখানে তিনি জ্ঞানের জগতে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন যথেষ্ট তাঁর মাতৃভাষা উর্দ্দু হলেও আরবী ও ফারসী ভাষায় যথেষ্ঠ দখল ছিল তিনি সুন্দর বাংলা বলতে পারতেন
তাঁর জীবন যাপন ছিল অতি সরল তিনি কখনই দুটির বেশী পিহান একসঙ্গে ব্যবহার করেন নি। তিনি মাটির প্লেটে খেতেন। চা খেতেন মাটির ভাঁড়ে। শূণ্য মেঝেতে বসতে তিনি বেশী ভালবাসতেন। তিনি স্বহস্তে খাদ্য পরিবেশন করতেন অতিথিদের। সকল শ্রেণির মানুষ তাঁর কাছে পেত সমান ময্যাদা। সে যুগে খানকা শরীফ ছিল বিপদগ্রস্থ  ও পথভ্রান্ত মানুসের কাছে আশা ও সান্ত্বনার আবাসস্থল। হাজার হাজার মানুষ এখানে পেয়েছে পথের নিশানা। তছার সময়কাল তিনি ছিরেন একমাত্র কুতুব। কঠোর সাধনার মাধ্যমে তিনি আরোহণ করে ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের শীর্ষস্থানে। কতশত অলৌকিক ঘটনার যে তাঁর মুরিদ ও ভক্তের মধ্যে ছড়িয়ে আছে তার হাদশ পাওয়া মুস্কিল। এখানে মাত্র একটি ঘটনা উল্লেখ করব। বীরভূম জেলার সিউঢ়ীতে বাস করতেন হুজুরের কনিষ্ঠ ভ্রাতা, হজরত সৈয়দশাহ খুরশিদ আলি আল-কাদেরী। একদিন কোলকাতার খানকাশরীফে বহু মুরিদানের সম্মুখে হঠাৎ বলে উঠলেন –আঃ আমার ভাই, আমার পীরজাদা দুনিয়া থেকে চলে গেল। সকলে তখন জিজ্ঞাসা করলেন কোন সংবাদ এসেছে কি না। তিনি বললেন – না সংবাদ কিছু আসে না। তার পরদিনই সিউড়ী থেকে খবর এসে পৌঁছাল যে তাঁর ছোট ভাইয়ের বেশালপাক  হয়েছে। আর ও জানা গেল যে গতকাল ঠিক যে সময় খানকা শরিয়ে হুজুর তাঁর মুরদানের এই দঃসংবাদ দিয়েছিলেন, ঠিক সেই সময়ই সিউড়ীতে তাঁর ভ্রাতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ছিলেন।
 

 

পীর ও মুর্শেদ হুবহু মাওলাপাক

পীরও মুর্শেদ, সৈয়দশাহ এরশাদ আলী আল-কাদেরী, ওলী আল্লাহ, ওলী আল্লাহর জীবনী,

বর্ধমান জেলারা পাঁচতুপি গ্রাম নিবাসী মাওলানা জনাব সৈয়্যদ সাদুল্লা সাহেব যিনি হুজুর মাওলাপাকের একনিষ্ঠ মুরিদ ছিলেন এবং হুজুরের উর্দু লেখার ‘কাতিব’ ছিলেন তিনি বর্ণনা করেন – “হুজুরপুর নূর মাওলাপাক (আলাঃ) বেসালের পরে একদিন কলকাতা খানকাহপাকে কোন এক জরুরী কাজে হুজুর পীর ও মুর্শেদের কামরায় যেখানে বসতেন দ্রুত প্র্রবেশ করলাম। প্রবেশ মাত্র একটি ‍দৃশ্য চোখে ধাঁধা লেগে গেল। নিজের চোখেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একী স্বপ্ন না কী বাস্তব সত্য? দেখলেন হুজুর পীর ও মুর্শেদ যে স্থানে বসতেন সেই স্থানে বসে আছেন স্বয়ং মাওলাপাক। সেই চেহেরাপাক, সেই রূপ, সেই ব্যক্তিত্ব, কোন ভুল নেই, বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেন না উঠতেই দেখলাম তিনি আর নেই, সেই স্থানে বসে আছেন তাঁরই নূরে জাতপাক হুজুর পীর ও মুর্শেদপাক এবং স্মিত হাস্যে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। (বাংলা ও কাদেরীয়া সিলসিলা, পৃ:২৩)

পীর ও মুর্শেদ পাক এর একটি কারামত

পীর ও মুর্শেদ পাকের অনেক কারামত পাক রয়েছে তার মধ্যে একটি এখানে বর্ণনা করা হলোঃ রাজবাড়ী ফরিদপুর নিবাসী জনাব হাশমত আলী সাহেব বর্ণনা করেন যে, আমরা ১৯৪৯ সালে ৪ঠা ফাল্গুনে মেদেনীপুরে মাওলাপাকের উরুসপাক উপলক্ষ্যে পূর্ব পস্তুতিতে মাযারাক মসজিদপাক ঘেরাপাক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও চুনকাম ঘষা-মাজার কামপাকের জন্য কলকাতার রওনা হই। সঙ্গে ছিলেন ওয়াহি আলী, তমিজুদ্দিন, আসগর, মোহন এবং সকল মিস্ত্রি ও সহকারীরা ছিলেন।
কলকাতায় হুজুরপাক কেবলার খিদমতে হাজির হতেই মেদেনীপুরে রওনা হ’বার আদেশ দান করেন এবং আমরা মেদেনীপুরে পৌঁছে কামপাক যথারীতিত শুরু করে দিলাম। একদিন বিকালে মসজিদপাকের গুম্বুজের ‍উপর রং করার জন্য আমি কার্নিশের উপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকি। তখন আমার হাতে রঙেন টিন ছিল।
মসজিদপাকের উপরে যে “হাইটেনশন তার” চলে গিয়েছে তাতে সকাল হতে বিকাল ২টা পর্যন্ত কারেন্ট সাপ্লাই বন্ধ থাকে। দু’টো কখন বেজে গেজে তা আমার খেয়াল ছিলনা। কাজের মধ্যে ভুল করে বাঁ-হাত দিয়ে যেমনেই তারটা ধরলাম সাথে সাথে বিদ্যুৎ আমাকে ধরে নিল। ভয়ে আমি চিৎকার করা শুরু করি। আমার ঘাড় হেলে যায় এবং অজ্ঞান হয়ে ঝুলতে থাকি।

ওয়ায়িদ আলি বর্ণনা করেন যে, হাশমত যখন তারের সঙ্গে ঝুলে পড়ে তখন আমরা নীচে ছিলাম। তার চিৎকার শুনে আসগর মিস্ত্রি একটা বাঁশ দিয়ে আঘাত করতেই হাশমতের তার হাত ছেড়ে যায় এবং সে মাটিতে পড়ে যায়। সকলে গিয়ে দেখলাম তার জিহ্বা বের হয়ে পড়ে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। মোটকথা সে মারা যায়। তার দেহ ধরাধরি করে বাইরে নিয়ে এলাম। লোকজন ছুটে এল। দায়েরাপাকের ম্যানেজার কলকাতায় হুজুর পীর ও মুর্শেদ (আলাঃ) কে ফোন করলেন। আদেশ হল হাশমতকে এখনি হাসপাতালে নিয়ে যাও। আমরা দেখলাম সে তো মারা গিয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে কী হবে। তথাপি মালিকের আদেশ। সকলে মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার দেখে বললেন, এ তো মারা গেছে। চিকিৎসা করার কোন দরকার নেই। পুনরায় মালিকপাককে জানানো হল, ডাক্তার বলছে রোগীর দেহে প্রাণ নেই। ঔষধ দিয়ে কী হবে? আমার হুজুরপাক হুকুম দান করলেন ডাক্তারকে চিকিৎসা তো করতে বলো। আমাদের কথায় ডাক্তার আবার বললেন, কোন লাভ নেই। তখন আমরা বললাম আমাদের পীরের আদেশ মরুক আর বাঁচুক আপনি দয়া করে চিকিৎসা করুন। তখন রাত প্রায় আটটা বাজে। আর ঘটনাটা ঘটে বিকেল ৪টায়। ডাক্তার হুজুরপাকের আদেশ পেয়ে ভাবছেন এ মৃতের কী চিকিৎসা করবেন। রাত তখন প্রায় ৯ টা অনিচ্ছা সত্বেও ডাক্তার হাশমতের লাশের কাছে এলেন ও দেখতে লাগলেন হঠাৎ আবাক হয়ে বলে উঠলেন আরে রোগী তো বেঁচে আছেন। তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করা হলো। আমরা চিন্তামুক্ত হলাম এবং হুজুরপাকের দেওয়ায় ৯ টার সময় তার মৃতদেহে প্রাণ ফিরে এল। এরপর ৭/৮ দিন পরে সুস্থ হয়ে সে ফিরে এল। কিন্তু তার শরীরের চামড়া পুড়ে যায়। তখন রওজাপাকের খাদেম সাহেব তাকে বললেন, রোজ মাযারপাকের ধুলা বালি শরীরে মাখো, ঠিক হয়ে যাবে। অবশেষে তাই হল। তার পুড়ে যাওয়া চামড়া নতুনভাবে তৈরি হল এবং এই ভাবে সে নবজীবন লাভ করল।

হুজুরের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৫৩ খ্রীঃ ৬ ই ফেব্রুয়ারী মোতাবেক ২১ শে জামাদিয়াল আউয়াল ১৩৭২ হিজরী। যথারীতি তাঁর মাজার শরীফ নির্ম্মিত হয়েছে মেদিনীপুর পারিবারিক সমাধি ক্ষেত্রে। অর্থাৎ মাওলাপাকের মাজার শরিফের ভেতরে।

কিতাবঃ মাওলা পাক (আঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনী (আবুল হাসনাত কাদেরী) জিলানী প্রকাশনী এবং বাংলার বুকে নাজাতের তরী আওলাদে গওসুল আজম (মাওলানা মোহাম্মদ জামির হোসেন কাদেরী সাক্কাফী)।

No comments

Powered by Blogger.