Banners

মাওলা পাকের আখেরি সফর

মাওলা পাকের অনুচরবর্গ, দর্শনার্থী, ভক্ত, শিষ্যসকলেই প্রতিই মাওলাপাকের ব্যবহার এতই মধুর ছিল যে কেউই ভাবতে পারত নামাওলাপাক তাদের ফেলে রেখে একদিন চলে যাবেন তাই তিনি যখন তাঁর বেসালের দিন ঘোষনা করলেন তখন ঘরে ঘরে ক্রন্দনের রোল উঠল কী যেন এক মহা বিপদ, ঘোর অন্ধকারময় দিন সমাগত 

অকূল এই জীবন সমুদ্রে কে তাঁদের পথ দেখাবেন? কিন্তু মাওলাপাক তাঁদের এই বলে আশ্বস্ত করলেনমৃত্যুর পরপারেও আমার ভক্ত শিষ্য বৃন্দের জন্য আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা কামনা করব আমি এখন যাই, আমি সাতবার মৃত্যুর দূতকে ফিরিয়ে দিয়েছি কোন সিদ্ধপুরুষকে (কশফ) জিজ্ঞাসা করলেই আমার বাক্যের সত্যতা উপলদ্ধি করতে পারবে যা হোক আল্লাহর কাছে আত্মোৎসর্গ তো প্রয়োজন আমি এখন যাই

মাওলা পাকের কারামত, মাওলা পাক, আখেরি সফর, ওলী আল্লাহ, ওলী আল্লাহর জীবনি১৩৩৮ হিজরী ২৭ শে সওয়াল ইংরজী ১৯০১ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী বাংলা ১৩০৭ সালের ৪ঠা ফাল্গুন শনিবার রাত্রি ২ টা ১১ মিনিটে কলকাতার বাসভবনে তিনি পরমব্রক্ষে লীন হয়ে যান

বহু বছর আগেই তিনি তাঁর বেসালের সঠিক দিনক্ষণ জানিয়ে ছিলেন বালেশ্বরের তদানীন্তর ডেপুটী ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুপী কালেকটর সৈয়দ শাহ আব্দুল মালেক সাহেবকে হুজুর এক সপ্তাহ আগেই খবর পাঠান- আমার বেসালের পর আগামী রবিবারে আমার শবদেহ মেদিনীপুর নিয়ে যাওয়া হবে; তুমি সেদিন মেদিনীপুরে গিয়ে আমার অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার যোগদান করবে

শনিবার রাত্রি দুটোর সময় মাওলাপাক তাঁর খাদেম মুন্সি আব্দুল লতিফকে নির্দেশ দিলেনমেরা সামান- সফর লে আও মাওলাপাক প্রায়ই পরিভ্রমণে বের হতেন বলে তাঁর প্রয়োজনের টুকিটাকি জিনিসের একটিপুলিন্দা সর্বদাই প্রস্তুত করা থাকত মুন্সি সাহেব সেটিই  নিয়ে এলেন যদিও তিনি ভেভবে পেলেন না, এত  রাত্রে হুজুর সামান-সফর নিয়ে কী করবেন মাওলাপাক তার কান্ড দেখে  হেসে বললেন ইয়ে সফর আখরি সফর হ্যায়; মেরা কাফন লে আও মাওলাপাক তাঁর নিজ কাফন তাঁর সঙ্গেই রেখে দিতেন

অন্তিম ক্ষণ সমাগত (শেষ মুহুর্ত ঘনিয়ে আসছে) হজরত এতক্ষণ পিঠের নিচে রাখা একটি বালিশে ঠেস দিয়ে বসেছিলেন ঠিক রাত্রি ২ টা ১১ মিনিটে তিনি বালিশের ওপর একটু শুয়ে পড়লেন এবং ইহলোক ত্যাগ করলেন

রেলযোগে তাঁর পবিত্র দেহ মেদিনীপুরে আনা হল সেখানে তাঁদের পারিবারিক সমাধিক্ষেত্রে তাঁর পিতা মাতার পাশে এক মনোরম সমাধিতে তাঁর পবিত্র দেহ সমাহিত করা  হয়

তাঁর সমাধিতে দলে দলে লোক আসে নিজের মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ হওয়ার আশায় তাঁরা কেউ বিফল মনোরথ হয়েছেন এমনটি কখনও হয়নি, যেদিন তাঁর জীবদ্দশায় হয় নি কেউ ব্যর্থ মনোস্কাম

প্রতিবছর ৪ঠা ফাল্গুন মেদিনীপুরে মাওলাপাকের পবিত্র উরস্‌ (মহাপ্রায়ণের স্মৃতিবাসর) উদ্যাপিত হয় অপরপক্ষে, চন্দ্রমাস হিসাবে ২৭ শে শাওয়াল তারিখে তাঁর বার্ষিক স্মৃতি তর্পন হয়ে থাকে

কিতাবঃ মাওলা পাক (আঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনী (আবুল হাসনাত কাদেরী) জিলানী প্রকাশনী

No comments

Powered by Blogger.