ওলীদের কারামত বা অলৌকিক ক্ষমতা

মৌলভী সৈয়দ আহসান উল করিম নামে বর্ধমানের ঝিলু গ্রামে বাস করতেন। তাঁর মধ্যম পুত্র মহম্মদ ইয়াসিন এর একবার খুব জ্বর হল। সব রকম চিকিৎসা করা হল, চিকিৎসার কোন ক্রটি রইল না। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হল না। ক্রমের চিকিৎসকরা ও হাল ছেড়ে দিলেন। সৌভাগ্যক্রমে মাওলাপাক সে সময়ে ঝিলু গ্রামে আসেন। মৌলভী সাহেব পুত্রের মঙ্গল কামনায় মাওলাপাকের কাছে দোয়া চাইলেন। কিন্তু মাওলা পাক তাঁকে কোনও আশার বাণী শোনালেন না বরং বলে দিলেন, যা হবার তা হবে – সে বিষয়ে কারও কোনও হাত নেই। এ কথা শুনে মৌলভি সাহেব কেঁদে ফেললেন।
মাওলাপাক তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন- আল্লাহর দায়ার ওপর আপনি বিশ্বাস ও আস্তা হারাচ্ছেন কেন? মৌলভি সাহে আর কিছু বলতে পারলেন না। পরদিন মাওলাপাক মঙ্গলকোটে চলে গেলেন। যাবার সময় মাওলাপাক বলে গেলেন- আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবই সম্ভব, আপনার ছেলে ভাল হয়েও যেতে পারে। পিতার মনে আশার সঞ্চার হল। তিনি অসুস্থ পুত্রের বিছানার পাশে বসে তাকে নিরীক্ষন করতে লাগলেন। কিন্তু ক্রমে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে হতে অচিরেই তার জীবন-দীপ নিভিয়ে গেল।
মৌলভি আহসান উল করিম মাওলাপাকের কাছে লোক মারফৎ খবর পাঠালেন এবং তাঁর সে সকর আত্মীয় তখন মঙ্গল কোটে মাওলা পাকের কাছে ছিলেন তাঁদের পুত্রের অন্ত্যেষ্টিতে যোগদান করার অনুরোধ জানিয়ে পত্র দিলেন। পত্র বাহকের কাছে এ খবর জানার পর মাওলাপাক তাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে হুজরা খানা প্রবেশ করলেন। এবং সেই সঙ্গে মৌলভি সৈয়য় আল্লা হাফেজ এবং সাহেবজান মিঞাঁকে বললেন- এখুনি আপনার সংবাদ বাহকের সঙ্গে ঝিলু গ্রমে যান। মৌলভী আহসান করিমের পুত্র এখন গভীর নিদ্রায় অচেতন। দেখবেন, লোকে তাকে মৃত ভেবে করব দিয়ে না দেয়।
এই তাবিজ নিয়ে যান, ছেলেটি জাগলে এই তাবিজ পানিতে ডুবিয়ে তাকে খেতে দেবেন। ভোর হতে না হতেই তাঁর পত্রবাহকের সঙ্গে দৌড়াতে দৌড়াতে মৌলভী সাহেবের বাড়িতে এসে পৌঁছালেন। তাঁরা দেখলেন, ছেলেটিকে মেঝেতে একটি মাদুরে উপরে শোয়ানো হয়েছে এবং তার উপর চাদর দিয় ঢাকা দেওয়া হয়েছে। মাওলাপাকের নির্দেশ জানিয়ে চাদর সরিয়ে দিয়ে দেখতে লাগলেন ছেলেটি কখন ওঠে। দেখাগেল তার কানের পাশে কতকগুলি পিঁপড়ে জড় হয়েছে সেগুলি তাঁরা তাড়িয়ে দিলেন বটে কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারলেন, ছেলেটির সমস্ত শরীর খুব শক্ত ও ঠান্ডা। অনেকক্ষণ আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তাঁরা তাবিজ ধোয়া পানি মুখে ঢেলে দিলেন কিন্তু এক ফোঁটা পানিও মুখের ভিতর গেল না; সমন্ত পানি তার গাল বেয়ে পড়ে গেল। তারা কিং কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে ভাবতে লাগলেন- কী ভাবে তার মুখে পানি দেওযা যায়।
কিন্তু আল্লাহর কী বিচিত্র লীলা – ছেলেটি হঠাৎ নিজের মুখ খুললো এবং সঙ্গে সঙ্গেই মৌলভী সৈয়দ আল্লা হাফেজ এক চামচ পানি তার মুখে ঢেলে দিলেন এবং কী আশ্চর্য ছেলেটিও তা গিলে ফেললো। উপস্থিত জনেরা বিস্ময়ের সঙ্গে চিৎকার করে উঠলেন- আলহামদো লিল্লাহ। (Praise be to god)। বালকটি তুলে খাটে শোয়ানো হল। এই অবিশ্বাস্য ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়তে দেরী হল না। যারা আল্লাহ, সাধু ফকির ইত্যাদিতে বিশ্বাস করত না তারাও এই অলৌকিত ঘটনা দেখতে জড়ো হলো। বালকটি ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠল। পিঁপড়ে তার কানের কিছু অংশ খেয়ে ফেলেছিল, সেই ক্ষতটিও ধীরে ধীরে শুকিয়ে গেল। কিন্তু তার দাগ আজীবন থেকে গিয়েছিল।
No comments