রাসূলে পাক (সাঃ)-এর মূল্যবান অভ্যাস - প্রথম পর্ব
রাসূলে পাক (সাঃ)-এর কতিপয় মূল্যবান অভ্যাসঃ
১. হাকেম এবং আর ও কতিপয় ব্যক্তি হয়রত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, পানীয় দ্রব্যের মধ্যে হুজুরে (দঃ) শীতল এবং মিষ্টি শরবতই বেশী ভালবাসিতেন। আর নাঈম হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বলেন, পানীয় দ্রব্যের মধ্যে হুজুর পাক (সাঃ) দুধই অধিক ভালবাসিতেন।
২. ইবনে আসুন্না ও আবু নঈম হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলে, পানীয় দ্রব্যের মধ্যে হুজুর পাক (সাঃ) মধুর শরবতই বেশী ভালবাসিতেন।
৩. আবু নঈম হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এর নিকট প্রিয়তম ব্যঞ্জন ছিল সিরকাহ।
৪. ইবনে আদি হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, ফলের ভিতরে ভিজা খোরমা এবং খরবুজা হুজুর পাক (সাঃ)-এর নিকট বেশী পছন্দনীয় ছিল।
৫. আবু নঈম হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এর কাছে যখন খানা হাজির করা হইত, তখন তিনি স্বীয় সম্মুভ ভাগ হইতে ভক্ষণ করিতেন (অবশ্য) যদি খোরমা হইত, তবে তিনি সব দিকে হইতেই তাহা ভক্ষণ করিতেন।

৮. তিরবানী উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসাহ (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) যখন শুইতেন, তখন তাঁহার ডান হাতে মুবারক ডান গালের নীচে রাখিতেন।
৯. আবু দাউদ, নাসায়ী এবং ইবনে মাজা হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) যখন জুনুব অবস্থায় ঘুমাইতে ইচ্ছা করিতেন, তখন তিনি ওজু করিয়া লইতেন আর ঐ অবস্থায়ই যদি কোন কিছু খাইবার ইচ্ছা করিতেন, তখন তিনি উভয় হাত কব্জা পর্যন্ত ধুইয়া লইতেন, তারপর খানা-পিনা করিতেন। কোন মেয়েলোকে হায়েজ-নেপাস হইতে পাক হইতে পাক হইলে তাহাদের জন্যও ইহাই সুন্নত।
১০. হাকীম তিরমিজী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে কাআব (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) মেসওয়াক করা শেষ করিয়া উহা বয়োজ্যেষ্ঠ লোককে প্রদান করিতেন। আর পানি পান শেষ করিয়া অবশিষ্ট পানি তাহার ডান পাশ্বের্র লোককে দিতেন।
ইহার কারণ ও উদ্দেশ্য ছিল হুজুর পাক (সাঃ)-এর বদান্যতা ও অন্যকে বরকত পৌছানো। আর হুজুর পাক (সাঃ)-এর ইচ্ছাও ছিল ইহাই।
১১. ইবনে সিনি এবং নঈম হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে এবং আবু নঈম হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে নকর করেন যে, হুজুর পাক (সাঃ) চিন্তিত হইলে দাড়ি মুবারকে বার বার হাত বুলাইতে থাকিতেন।
১২. ইমাম আহমদ এবং ইমাম মুসরিম হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হইতে বলেন, যখন হুজুর পাক (সাঃ) খানা খাইতেন তখন তিনি যে তিন আঙ্গুল দ্বারা খানা খাইতেন, খানা খাওয়ার পর তাহা খুব ভালভাবে চাটিয়া খাইতেন যাহাতে আল্লাহর নেয়ামতের অপচয় বা (অপব্যবহার) না হয়।
১৩. আবু নাইম হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) সকালে আহার করিলে বিকালে আহার করিতেন না, আবার বিকালে আহার করিলে সকালে আহার করিতেন না। অর্থাৎ হুজুর পাক (সাঃ) একবেলা আহার করিতেন।
১৪. মুহাদ্দিস রওবী জয়ীফ সনদে বর্ণনা করেন যে, খুব বেশী হাসি পাইলে হুজুর পাক (সাঃ) মুখের উপর হাত মুবারক রাখিতেন। ছহীহ সনদে বহু স্থানেই বলা হইয়াছে যে, হুজুর পাক (সাঃ) সাধারণত মুচকি হাসি হাসিতেন।
১৫. ইমাম আহমদ এবং ইমাম আবু দাউদ হযরত হোজায়ফা (রাঃ) সূত্রে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) যখন কোন কঠিন সমস্যায় সম্মুখীন হইতেন, তখন তিনি নফল নামায আদায় করিতেন। এই আমল দ্বারা প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য পার্থিব, অপার্থিব যাবতীয ফায়েদা হাসির হয় এবং পেরেশানী দূরীভূত হয়।
১৬. ইবনে সা’আদ হযরত যায়ে ইবনে ছালেহ (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) পায়খানায় যাইবার সময় মস্তক ঢাকয়িা জুতা পায়ে দিয়া যাইতেন।
১৭. আবু নঈম হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এর নেক বিবিগণের কাহারও চোখের রোগ হইলে তিনি তাঁহার সহিত চোখ ভাল না হওয়া পর্যন্ত সহবাস করিতেন না।
১৮. হাকীম, আবু দাউদ এবং ইমাম তিরমিজী (রাঃ) হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) হঁচি দিবার কালে মুখের উপর হাত অথবা কাপড় রাখিয়া আওয়াজ ছোট করিবার চেষ্টা করিতেন।
১৯. ইবনে আবিদ দুনিয়া হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে বলেন, দাঁড়ান অবস্থায় হুজুর পাক (সাঃ)-এর রাগ দেখা দিয়ে তিনি বসিয়া পড়িতেন, বসা অবস্থায় রাগ হইলে শায়িত হইতেন। (কারণ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিলে রাগ কমিয়া যায়)।
২০. ইমাম তিরমিজী হযরত হোরায়রা (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এর ডান দিক হইতে জামা পরিতেন। অর্থাৎ ডান হাত প্রথমে আস্তিনে ঢুকাইতেন।
২১. হাকীম আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এর জামা গিরার উপর পর্যন্ত ছিল নেছাফে ছাক হাঁটুর নীচ ও গিরার উপর পর্যন্ত। আর তাঁহার জামার আস্তিন হাতের গিরা কিংবা হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত লম্বা ছিল।
২২. তাববারী নো’মান ইবনে বশীর (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) আসুদাভাবে খাইবার জন্য সাধারণ খেঁজুরও পাইতেন না।
সারা জাহানের ধন-সম্পদ হুজুর পাক (সাঃ)-এর পদতলে গড়াগড়ি দিলেও তিনি তাহা তুচ্ছ ভাবিতেন পরকালের বিনিময়ে। তাই তিনি অবলম্বন করিয়াছিলেন ফকিরী।
২৩. হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এর সর্বাধিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ছিলেন। তিনি স্বভার চরিত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন, নাতিদীর্ঘ ছিলেন তিনি। অর্থাৎ অতিশয় লম্বা ও ছিলেন না এবং খাট ও ছিলেন না।
২৪. ইবনে সাআদ, ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এর সর্বাধিক সহিষ্ণু এবং সহনশীল ছিলেন। মানুষের দেয়া কষ্ট তিনি সহ্য করিয়া চলিতেন।
২৫. ইমাম তিরমিজী হিন্দী ইবনে আবি হালা হইতে বলেন, হাঁটিবার সময় হুজুর পাক (সাঃ) এমনভাবে পায়ে ভর দিয়া হাঁটিতেন, মনে হইত যেন তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে মাটিতে পা রাখিতেছেন। পদক্ষেপ এমনভাবে করিতেন, দেখিলে মনে হইত, তিনি কোন উচ্চস্থান হইতে নিম্ন দিকে অবতরণ করিতেছেন। (তবে) পা অত্যন্ত নম্রতার সহিত বাড়াইতেন। পাশ্ববর্তী কোন কিছু দেখিতে হইলে সম্পূর্ণ ঘুরিতেন। (আড় চোখে তাকাইতেন না), দৃষ্টি প্রায় সর্বদাই জমিনের দিকে রাখিতেন। ঊর্দ্ধে বা আসমানের দিকে খুব কমই দৃষ্টিপাত করিতেন। সাধারণতঃ অবনত চোখে দৃষ্টিপাত করিতেন। কাহারও সঙ্গে সাক্ষাত হইলে অগ্রেই সালাম করিতেন।
২৬. ইমাম আবু দাউদ (রাঃ) হযরত জাবের (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) ধীরে ধীরে কথা বলিতেন যেন শ্রোতাগণ উত্তমরূপে বুঝিতে পারে। তাই বলিয়া আবার এত ধীরে ধীরে নয় যে, শ্রোতাগণ বিরক্ত হইয়া পড়ে। অপর এক হাদীসে আছে যে, তিনি একটি কথা তিনবার বলিতেন।
মোটকথা হুজুর পাক (সাঃ)-এর কথা বলার ক্ষেত্রে যথাযথ পন্থা অবলম্বন করিতেন। যেখানে যেরূপ দরকার সেখানে তদ্রূপভাবে কথা বলিতেন। শ্রোতা বিজ্ঞ লোক হইল সেখানে এক কথার পুনরুক্তি করা উচিত নয়। আবার সেখানে অল্পবুদ্ধির লোক হয়, সেখানে একবার বলিলে তাহাদের কথা বুঝে আসে না।
অতএব সেখানে একাধিক বার অর্থাৎ দুইবার কিংবা প্রয়োজনে তিনবারও বলার প্রয়োজন হয়। সারকথা, কাহার ও সহিত রুক্ষ বা কর্কশ ব্যবহার করা উচিত নয়। সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার এবং ধৈর্যের সাথে মানুষকে শিক্ষা দান করাই ছিল হুজুর পাক (সাঃ)-এর একমাত্র উদ্দেশ্য। সকলের সাথে উত্তম ব্যবহার অভ্যস্ত হওয়া সর্বাদিক দিয়া কামালিয়াতের নিদর্শন এবং একটি মূল্যবান সম্পদ তুল্য।
২৭. ইমাম আবু দাউদ হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) কথাবার্তা আলগ আলগভাবে এবং স্পষ্ট বলিতেন যেন যে কেহ শুনিয়া বুঝিতে পারে।
২৮. বায়হাকী হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন যে, হুজুর পাক (সাঃ) সমস্ত বদভ্যাসের মধ্যে কথাকেই বেশী ঘৃণা করতেন।
২৯. বায়হাকী ও ইমাম আবু দাউদ হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) সমস্ত কাপড়ের মধ্যে ইয়ামেনি চাদরকে বেশী পছন্দ করিতেন।
অনেকের ধারণা এই চাদর কিছুটা মামুলী ধরনের ও কম ময়লা হওয়ার দরুন ইহা হুজুর পাক (সাঃ)-এর কাছে বেশী পছন্দনীয় ছিল। সুবাহান্নাল্লাহ! হুজুর পাক (সাঃ) নিজেকে ক্ষণিকে মুসাফির মনে করিয়াছিলেন। তাই তিনি দুনিয়ার শান-শওকতের দিকে এতটুকু আকৃষ্ট হন নাই। শান-শওকেতকে তিনি এতটুকু পছন্দও করেন নাই। প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য ইহাই প্রকৃত আদর্শ।
৩০. ইমাম বুখারী ও ইমাম ইবনে মাজা হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) সেই ইবাদত বেশী পছন্দ করিতেন, যাহা নিয়মিত আদায় করা যায়। পক্ষান্তরে অধিক ইবাদত, অথচ নিয়মিত নয় এরূপ ইবাদত তিনি পছন্দ করিতেন না। রাসূলে পাক (সাঃ)-এর মূল্যবান অভ্যাস - শেষ পর্ব
সংগ্রহঃ বিশ্বনবী'র (সাঃ) চিকিৎসা বিধান, ডাঃ আলমগীর মতি
সংগ্রহঃ বিশ্বনবী'র (সাঃ) চিকিৎসা বিধান, ডাঃ আলমগীর মতি
এটা সকল বিষয় সমূহ সকল মানুষের অনুসরণ করা উটিচ!
ReplyDelete