Banners

রাসূলে পাক (সাঃ)-এর মূল্যবান অভ্যাস - শেষ পর্ব

রাসূলে পাক (সাঃ)-এর কতিপয় মূল্যবান অভ্যাসঃ

নবী, রাসূলের অভ্যাস, নবীজির পছন্দনীয় কাজ, মুসলিমদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
৩১ ইবনে আসুন্না হামান লাগিরাহ মুজাহিদ হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এর নিকট বকরীর সম্মুখ পায়ের মাংসই অধিক পছন্দনীয় 
ছিল

৩২ ইমাম মুসলিম হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) এর দেহ  মুবারক হইতে ঘর্ম অধিক নির্গত হইতআযীযী কিতাবে আছে, হযরত  উম্মে সলিম হুজুর (সাঃ)-এর দেহ নির্গত ঘর্ম জমা করিতেন এবং অন্য খোশবুর সহিত মিলাইয়া লইতেন,
যাহার ফলে খোশবুর ঘ্রাণ দ্বিগুণ  হইত কেননা হুজুর পাক (সাঃ)-এর দেহ নির্গত ঘামের ঘ্রাণ উৎকৃষ্ট খোশবুর অপেক্ষা  বেশী সুঘ্রাণ 
বিশিষ্ট ছিল

৩৩. ইমাম মুসলিম জাবের (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এরা দাড়ি মুবারত যথেষ্ট ঘন ছিল

৩৪. ইমাম আহমদ  ইমাম  নাসায়ী হযরত আবু ওয়াকদ হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) যখন নামাযে ঈমামতি করিতেন, তখন নামায 
খুব অল্প সময়ের মধ্যে পড়াইতেন কিন্তু একাকী নামায আদায় করিবার কালে খুব বেশী সময় লাগাইতেন। জামাতে নামায আদায়কালে
তিনি মুক্তাদীদের প্রতি লক্ষ্য রখিয়া সংক্ষেপ করিতেন কেননা তাহাদের মধ্যে অনেক দুর্বল,  বৃদ্ধ, মাজুর লোক  থাকেনএকাকী নামাজ পড়িবার সয় ইহা লম্বা করার অর্থ হইল, নামায ছিল তাঁহার চোখের শান্তিদায়কনামায আদায়ে  তিনি শান্তি লাভ করিতেনআর ইহা অপেক্ষা বড় আনন্দের বস্তু আর অন্য কি থাকিতে পারে? যেহেতু নামাযই স্বীয় মাহবুবে মাওলার সামনে দাঁড়াইয়া আরর্জি    প্রার্থনার প্রকৃত সুযোগ

৩৫. ইমাম আহমদ  ইমাম আবু দাউদ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বশির (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ) যখনা কাহারও ঘরে যাইতেন, তখন প্রথমেই তিনি দরজার সোজা না দাঁড়াইয়া যান দিকের থামের কাছে দাঁড়াইয়া সালাম করিতেনকাহারও ঘরে প্রবেশ পরিবার সময়
দরজার ডান বা বাম দিকে দাঁড়াইয়া সালাম করা সুন্নত প্রথমবারের সালামের জবাব না পাইলে দ্বিতীয়বার সালাম করা চাই অবশ্য দরজা 
বন্ধ থাকিলে দরজা বরাবর দাঁড়ানোতেও কোন দোষের কিছু নাই

৩৬. ইবনে সাআদ হযরত আকরাম (রাঃ) হইতে বলেন, হুজুর পাক (সাঃ)-এর অভ্যাস ছিল, কোন লোক তাঁহার সামনে আসিলে তিনি যদি
লোকটির মুখ প্রফুল্ল দেখিতেন, তবে তাঁহার হাতখানা স্বীয় হাতের মধ্যে উঠাইয়া লইতেনঅর্থাৎ হুজুর পাক (সাঃ) তাঁহার সহিত লোকটির অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করিতে চাহিতেন

৩৭. ইবনে মানদাহ হযরত উৎবা ইবনে আবদ (রাঃ) হইবে বলেন, যে ব্যক্তি হুজুর পাক (সাঃ)-এর নিকট আগমন করিতেন, যদি তাহার
নামটি ভাল না হইত, তবে তিনি তাহার নামটি বদলাইয়া রাখিয়া দিতেন

৩৮. ইমাম আহমদ এবং আরও কতিপয়ের দ্বারা বর্ণিত আছে, হুজুরে পাক (সাঃ)- এর নিকট যদি কেহ নিজের যাকাত লইয়া আসিত, তখন তিনি তাহার জন্য দোয়া করিতেন- হে মাবুদ! আপনি অমুকের প্রতি রহমত নাযিল করুন

৩৯. ইমাম আহমদ  ইমাম ইবনে মাজা হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হইতে বলেন, জিহাদের গণিমতরূপে হুজুর পাক (সাঃ)- এর অংশে যখন কোন দাস-দাসী আসিত, তখন হুজুর পাক (সাঃ) তাহা তাঁহার বিবিগণের মধ্যে সমভাবে বন্টন করিয়া দিতেন- যাহাতে কাহারও ভাবে
বেশী- কম হইয়া বিবাদ সৃষ্টি না হয়। কোন জিনিস ভাগ করার সময় ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বেশ-কম করিয়া ভাগ করা  উচিত নয়কেননা ইহার দ্বারা হক নষ্ট করা হয় ইহার পরিণাম মারাত্মক

৪০. ইবনে আসকার সালেম ইবনে আবদুল্রাহ ইবনে উমর এবং হযরত কাসেম ইবনে মুহাম্মদ হইতে বলেন, যখন তাঁহারা হুজুর পাক (সাঃ)-এর নিকট খোশবুদার তৈলের পাত্র নিয়া উপস্থিত হইতেন, তখনই উহার তিনি আঙ্গুলি ভিজাইয়া দরকার মত ব্যবহার করিতেন

৪১. শিরাজী আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, হুযুরে পাক (সাঃ) মাথার তেল লাগাইবর সময়ে বাম হাতে তেল লইয়া প্রথমে ভ্রুযুগলে, তারপর চোখে এবং শেষে মাথায় লাগাইতেন

৪২. আবু দাউদ, তিরমিযী এবং তাইলিযী হযরত আনাস এবং জাবের (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) যখন প্রস্রাব পায়খানা বসিবার ইচ্ছা করিতেন, তখন জমিনের একেবারে নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত তিনি সতর উন্মুক্ত করিতেন না

৪৩. খাতীব হযরত আনা (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) নূতন কাপড় সাধারণতঃ শুক্রবার দিন হইতে পরিতে শুরু করিতেন

৪৪. ইমাম আহমদ এবং হাকেম হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) যদি বুছতে পারিতেন যে, তাঁহার পরিবারের কেও   মিথ্যা কথা বলিয়াছে, তবে তাহার সহিত কথা-বার্তা, উঠা-বসা সবকিছু পরিত্যাগ করিতেন তাহার প্রতি পূর্ণ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করিতেনপুনরায় যখন সে তওবা করিত, তখন আবার তাহার সহিত পূর্ববৎ ব্যবহার করিতেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করিতেন। প্রত্যেক গুনাগগারের 
সহিত   হযুর পাক (সাঃ) এইরূপ ব্যবহার প্রদর্শন করিতেন

৪৫. শিরাজী হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) যখন চিন্তিত হইতেন, তখন হাত মুবারক ধরিয়া উহার দিকে   দৃষ্টিপাত করিতেন

৪৬. ইমাম তিরমিজী প্রমুখ বলেন  যে, হযুর পাক (সাঃ) চোখে সূরমা লাগাইবার সময়ে তিন তিন বার লাগাইতেন

৪৭. ইমাম আবু দাউদ  ইমাম ইবনে মাজা হযরত আবু মূস আশআরী (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) যখন সাহাবীদের কাহাকেও কোন কাজে পাঠাইতেন, তখন উপদেশ দান করিতেনঃ সকলের সাথে উত্তম ব্যবহার করিবে, বিনয়  ভদ্রতার সাথে কথা বলিবে, কাহাকে  ঘৃণা করিবে না, শরীয়তের হুকুমের পাবন্ধ থাকিবে, সকলের উপর এহসান করিবে কখনও কাহাকে জুলুম করিবে না

৪৮. ইমাম আবু দাউদ হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) কাহাকেও উপদেশ দানকালে এইভাবে বলিতেন, মানুষের কি অবস্থা হইল যে, তাহারা এইরূপ খারাপ কথা বলা কহা শুরু করিয়া দিল! সুবাহান্নাল্লাহ ! হযুর পাক (সাঃ) প্রত্যেকটি কাজই সুবুদ্ধির দ্বারা  সুষ্ঠ সমাধা করিতেন এই রীতিতে উপদেশ দানে দুইটি উপকার আছে প্রথমতঃ যাহাকে নসীহত করা হয়, সে মনে কোন ক্লেশ পায় না,
বিরক্ত হয় না দ্বিতীয়তঃ সে উপদেশ গ্রহন করতঃ সংশোধিত হইয়া যায়

৪৯. ইমাম ইবনে মাজা হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) যখন ওজু করিতেন, তখন দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল ওজু  নামাজ আদায় করিতেন অবশ্য মাকরূহ ওযাক্ত ব্যতীত তারপর ফরজ পরিবার জন্য মসজিদে যাইতেন

৫০. খতীব এবং ইবনে আসাকের হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বলেন, শুক্রবার আসিলে হুজুর পাক (সাঃ) শুক্রবার হইতে ভিতর বাড়ীঅবস্থান শুরু করিতেন নুতন কাপড় তিনি শুক্রবার হইতেই পরিধান করা শুরু করিতেন এবং আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করিতেন আর
পুরাতন কাপড় কোন গবীবকে দান করিতেন

৫১. ইবনে সাআদ (রাঃ) হযরত মুজাহিদ (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) কোন মহিলার বরাবরে বিবাহের পয়গাম দিলে সে যদি   তাহা কবুল না করিত, তবে তিনি আর দ্বিতীয় বার পয়গাম দিতেন না

একবার হযুর পাক (সাঃ) জনৈকা মহিলার নিকট বিবাহের প্রস্তাব পাঠালেনসে তাহা কবুল করিল না হযুর পাক (সাঃ) অন্য একজনকে 
বিবাহ করিয়া ফেলিলেন তারপর উক্ত মহিলা হযুর পাক (সাঃ)-এর সাথে বিবাহবন্ধ হওয়ার জন্য প্রবল আকাঙ্খা প্রকাশ করিতে লাগিলকিন্তু হযুর পাক (সাঃ) তাঁহাকে জানাইয়া দিলেন, এখন আর তাঁহার বিবাহের প্রয়োজন নাই

৫২. ইবনে সাআদ এবং ইবনে আসাকের হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) যখন স্বীয় পবিত্র বিবিদের সহিত দাম্পত্য সুলভ আচরণ করিতেন, তখন তাঁহার ভিতরে খুবই প্রফুল্লতা  নম্রতা প্রতিভার হইতে থাকিত

৫২. তাবরানী হযরত আইউব আনসারী (রাঃ) হইতে বলেন, দোয়া করিবার সময় হুজুর (সাঃ) সর্বপ্রথম নিজের জন্য দোয়া করিতেন  (তারপর অন্যান্যদের জন্য)

৫৩. ইবনে মানদাহ হযরত সোহাইল (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) কোন কর্মে সম্মত থাকিলে নীরব থাকিতেন

৫৪. ইবনে মুবারক  ইবনে সাআদ বলেন, হযুর পাক (সাঃ) যখন কোন জানাযায় শরীক হইতেন, কখন তিনি অত্যন্ত নীরব-নিস্তদ্ধ হইয়া 
পড়িতেন এবং দিলের ভিতর স্বীয় মৃত্যুর কথা চিন্তা করিতেন

৫৫. ইমাম আবু দাউদ হযরত ওসমান (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর স্বীয় সঙ্গী-সাথীদের সহিত
কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করিতেন তিনি সঙ্গীগণকে বলিতেন, তোমরা মৃত ব্যক্তির মাগফেরাত  তাহার ছাবেত কদমীর জন্য প্রার্থনা কর
যেহেতু এখন মুনকার-নেকীর তাহার নিকট প্রশ্ন করার সময়অতএব  সময় তাহার ছাবেত কদম থাকার জন্য দোয় করার বিশেষ 
প্রয়োজন

৫৬. ইবনে সাআদ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হইতে বলেন কোন সাহাবী যদি হযুর পাক (সাঃ)-এর সাক্ষাতে আসিয়া তাঁহার নিকট
দাঁড়াইতেন তখন তিনিও তাহার বিদায় না নেওয়া পর্যন্ত দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করিতে থাকিতেন

কোন সাহাবী হযুর পাক (সাঃ)-এর সহিত মুসা (হাত মিলানো) করার পর তিনি স্বেচ্ছায় হযুর পাক (সাঃ) কখনও নিজের চেহারা মুবারক
ফিরাইয়া দিতেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন সাহাবী নিজের চেহারা হযুর পাক (সাঃ)-এর দিকে ফিরাইয়া না দিতেন কোন সাহাবী কোন 
গুপ্তকথা বলার জন্য হুযুর (সাঃ)-এর কানের নিকট মুখ বাড়াইয়া দিলে হযুর পাক (সাঃ)- নিজের কান মুবারক আগাইয়া দিতেন সাহাবী
যতক্ষন পর্যন্ত না সারিয়া যাইতেন, হযুর পাক (সাঃ)-  সে পর্যন্ত স্বীয় কান মুবারক সারাইয়া দিতেন না

৫৭. ইমাম নাসায়ী হযরত খাদীজা (রাঃ) হইতে বলেন, সাহাবীগণের যে কেহ হযুর পাক (সাঃ)- এর সহিত সাক্ষাত করিতেন, হযুর পাক   (সাঃ) তাঁহার সহিত-- মুসাফাহা করিতেন এবং তাঁহার জন্য দোয়া করিতেন

৫৮. তারবানী জুনদুর (রাঃ) হইতে বলেন, সাহাবীগণের সহিত সাক্ষাত হইলে হযুর পাক (সাঃ) প্রথমেই মুসাফাহা করিতেন না সালাম   করিতেন আগে

৫৯. ইবনে সিনি জনৈক আনছারীর দাসী হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) নাম না জানা কাকেও ডাকিলে- “ইয়া ইবনে আবদুল্লাহ বলিয়া 
ডাকিতেন

৬০. হাকমি জাবের (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) পথ চলিবার সময়ে এদিক-ওদিক তাকাইতেন না চোখের দৃষ্টি সম্মুখে নীচের 
দিকে রাখিতেন

৬১. ইমাম আবু দাউদ উম্মে সালমাহ (রাঃ) হইতে বলেন হযুর পাক (সাঃ)-এর বিছানা হইত কাফনের মত (মামুলি ধরনের) শুইবার 
সময় তাঁহার মস্তক মুবারক মসজিদের দিকে থাকিত

৬২. ইমাম তিরমিজী হযরত হাফসা (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ)- এর বিছানা ছিল চাটাইয়ের বিছানা

৬৩. ইমাম তিরমিজী হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতেন বলেন, হযুর পাক (সাঃ)-এর বালিশ ছিল চামড়ার, যাহার মধ্যে খেঁজুর গাছের আঁশ 
ভরা ছিল

৬৪. ইমাম তিরমিজী হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বলেন, পরবর্তী দিনের জন্য হযুর পাক (সাঃ) কিছুই জমা রাখিতেন না

৬৫. তারবানী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ)-এর চলার পথ হইতে কখনও জনসাধাণেকে হটাইয়া 
দেওয়া হইত না

৬৬. ইবনে আদ হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বলেন, হযুর পাক (সাঃ) (কখনও) তিনদিনের কমে কোরআন খতম করিতেন না
রাসূলে পাক (সাঃ)-এর মূল্যবান অভ্যাস - প্রথম পর্ব
সংগ্রহঃ বিশ্বনবী'র (সাঃ) চিকিৎসা বিধান, ডাঃ আলমগীর মতি

No comments

Powered by Blogger.