ক্ষুদামন্দা, শ্বাসকষ্ট, স্থুলতা, চর্মরোগ, জ্বর-কাশি, রক্ত শুদ্ধীকরণে, বায়ুনাশক, ক্ষত নিবারণে- রসূন
রসূন
বাংলায় রসুন বলে, আরবি ভাষায় বলে লাহসুন, ইংরেজিতে বলে গার্লিক যার আদিস্থান মধ্য এশিয়া চীনে খ্রীঃ পূর্ব ৩০০০ বছর আগে রসুনের ব্যবহার প্রমাণ পাওয়া যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটাসও রসুনের নানাবিধ ভেষজগুনের কথা বলা হয়েছে।কথিত আছে, মিশরীয় কোন এক ফারাও সম্রাটের শাসনামলে পিরামিড নির্মাণরত শ্রমিকেরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলো।কারণ সম্রাট শ্রমিকদের প্রয়োজন মতো রসুনের সরবরাহের অক্ষমতা প্রকাশ করেছিল ঐ বছরে মিশরে রসুনের আবাদ অপেক্ষাকৃত কম হয়েছিল। বর্ণিত আছে, শ্রমিকেরা সারা দিনের পরিম্রান্ত ও ক্লান্ত দেহে রাত্রে রসুন ভক্ষণ করত এবং পূর্বের হারানো শক্তি ফিরে পেত।ঐ সময় রসুনকে শক্তিবর্ধক ভেষজ হিসেবে খুব সমাদর ছিল। অন্যত্র বর্ণিত আছে “বনী ইসরাঈল” বিনা পরিশ্রমে জান্নাতী খাদ্য
“মান্না ও সালোওয়া”- এর পরিবর্তে রসুন, আদা, পিয়াঁজ, ইত্যাদি আবাদের নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছিল।
হাদীস পাকে রসুন ও যায়তুন তেলের ব্যবহার
হযরত যায়দ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে রাসূলে পাক (সাঃ) যাতুলজাম তথা বাত রোগে যয়তুন তেল ও রসুনের উপকারীতার কথা দর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী, মেশকাত)
ইমাম জালাল উদ্দীন সূয়ূতী (রহঃ) “জামউল জাওয়ামে দায়লমী (রহঃ) থেকে একটি রেওয়াতে বর্ণনা করেছেন।দায়লমী (রহঃ) হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত করেছেন যে, রাসূলে পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “হে লোক সকল, তোমরা অত্যাধিক পরিমানে রসুন খাবে এবং তদ্বারা
চিকিৎসা করবে। কেননা
তাতে রোগ আারোগ্যের বিশেষ উপায় রয়েছে।” তবে হাদীসটির
বিশুদ্ধতায় এক শ্রেণীর আলেমগণ সন্দীহান।
হারবাল বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রসুনের ভূমিকা
১. ক্ষুদামন্দা, শ্বাসকষ্ট, স্থুলতা, চর্মরোগ, জ্বর-কাশি, রক্ত
শুদ্ধীকরণে, বায়ুনাশক, ক্ষত নিবারণে-এর বিশেষ
ভূমিকা রয়েছে।
২. নিউইয়র্কের
মেট্রোপলিটন হাসপাতালের ডঃ ম্যাকডাফি বিভিন্ন বৈজ্ঞাণিক গবেষণা চালিয়ে রসুনের অনেক
গুণাগুণ প্রমাণ করেছেন। হাঁপানীতে হুপিং কফে বুকে সরিষার তেলের সাথে রসুনের নির্যাস
মিশ্রিত করে মালিশ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। ফাংগাস জনিত চর্ম রোগের ক্ষেত্রেও
রসুন ব্যবহৃত হয়। বাতের
ব্যাথায় রসুন-এর
নির্যাস ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
৩. জেনেভা
ইউনিভার্সিটির ডঃ পিওট্রাক্সি গবেষণার মাধ্যেমে প্রমাণ করেছেন যে উচ্চ রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রসুনের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। রসুনের নির্যাস রক্তের
কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সেই সাথে শর্করার মাত্রাও হ্রাস করে।
৪. কোলেন
ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হ্যামস রসুন ব্যবহারে দেখেছেন, হার্টএ্যাটাকের
ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে মাথা ব্যাথা, অনিদ্রা
ইত্যাদি রোগে ইহা বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৫. রসুনে
এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা হজম সহায়তা করে। পাকস্থলী ও অস্ত্রের জন্যও রসুন
খুবই উপযোগী।
৬. নিউইংর্কের
হারবাল বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন রসুনের মধ্যে অর্গানো সালফাত নামে যৌগ থাকে
তা পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়া রোগে সহায়তা করে। হৃদরোগ প্রতিরোধে রসুন বেশ
কার্যকরী। ইহা
রক্তের কোলেস্টরল কমিয়ে দেয়। ইহা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।
৭. প্রদাহ
দমনে রসুনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তবে কিডনী প্রদাহে রসুন ব্যবহার করা ঠিক নয়।
৮. রসুনে
প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘সি’ আছে
ফলে স্কার্ভি রোগের উপশমেও রসুন ব্যবহার হয়ে আসছে।
৯. রসুনের
মধ্যে এমন কিছু অ্যালকালয়েড রয়েছে যা মস্তিষ্কের স্নায়ুসমূহকে কার্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১০. যুক্তরাষ্ট্রের
ভেষজ বিজ্ঞানী প্রমাণ করেছেন যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং যৌন অক্ষমতা দূরীকরণেও
রসুনের বিশেষ ভূমিকা।
১১. রাশিয়ার
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন রসুন নিয়ে নানাভাবে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, রসুন
পেনিসেলিন সমগোত্রীয়।
১২. জাপানী
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, রসুন –ই
কোলাই, টাইফয়েড ও আমাশয়ের জীবাণু ধ্বংস করে।
১৩. ব্রাজিল
ভেষজ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন রসুনের রয়েছে অ্যালাইল সালফাইড যা জীবাণু নাশক হিসেবে
কাজ করে।
১৪. চিকিৎসা
বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস বলেছেন- রসুন রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
১৫. রসুনে
রয়েছে অস্ত্রের জীবাণু ধ্বংসকারী গুণসম্পন্ন অ্যালকালয়েড।
১৬. রসুনে
রয়েছে অ্যালিসিন যা জীবাণু নাশক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন
করে। শরীরের বহি ও
অন্তঃক্ষত সারাতেও এর বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
১৭. ১৯২১
সালে ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানিয়েছেন নিয়মিত রসুন গ্রহণের রক্তণালীতে
চর্বি জমে না; রক্ত চলাচল সুচারুভাবে সম্পন্ন হয় এবং হৃদরোগের
ঝুঁকি কমে যায়।
১৮. ব্রংকাইটিস
ফুসফুসে জমা কাশি বের হতে সাহায্য করে।
১৯. জর্মান
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, নিয়মিত রসুন খেলে হৃদরোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
২০. ফ্রান্সে
ডিসপেপসিয়া রোগে রসুন খাওয়া এখনও প্রচলন আছে।
২১. টনসিল
প্রদাহ হলে গলায় রসুন পানির গরম ভাঁপ নিলে ব্যাথা কমে যায়। কেটলিতে রসুন সহকারে পানিতে ফুটতে
দিয়ে সেই বাস্প গলার ভিতরে নিতে হবে।
২২. দাঁতের
ব্যাথায় রসুন ব্যবহৃত হয়। আবার আঘাত লেগে কোথাও ফুলে গেলে কিংবা বাত ব্যাথায় রসুন তেল
ব্যবহৃত হয়।
২৩. ভারতীয়
চিকিৎসকদের অভিমত হলো, পায়ের তলায় কড়া হলে রসুন ব্যবহারে খুব উপকার
পাওয়া যাবে। রাত্রে
ঘুমানোর আগে রসুনে কোওয়া দুই ভাগ করে কেটে পায়ের তলায় কড়ার উপর চেপে দিলে
লিউকোপ্লাস্ট পায়ের কড়া ভালো হয়ে যাবে।
২৪. রসুন, ম্যালেরিয়া
রোগে কাযকরী ভেষজ ঔষধ। একটি গবেষণায় দেখা, গেছে, ম্যালেরিয়া
রোগের চিকিৎসায় রসুনে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রসুন, পিয়াজ, মেহগনি
গাছে “ডাই-সালফাইড” নামক
অ্যালকালয়েড রয়েছে যা ফাংগাস, ক্যান্সার এবং
ব্যাকটেরিয়া বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই “ডাই-সালফাইড” ম্যালেরিয়ার
বিরুদ্ধে কার্যকরী তা প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণার জন্য বিশেষ উপায়ে তৈরী-১১ (এগার) প্রকার
ডাই-সালফাইড
দিয়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কোষের বিরুদ্ধে একটি সমীক্ষা চালনা করা
হয়েছে।ক্যান্সার
কোষের বিরুদ্ধে এ পরীক্ষা চালনা করা হয়। ক্যান্সার কোষ নির্মূল যে সব ডাই-সালফাইড বিশেষ
ভূমিকা রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে, এর সবগুলোই ম্যোলেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী তা প্রমাণিত হয় নি। কোষে
তাকা গুটাথিয়ন সিস্টেমই এর চালিকা শক্তি। যেসব কোষ খুব দ্রুত তৈরী হয়, যেমন
ক্যান্সার কোষ বা ম্যালেরিয়ায় আক্তান্ত কোষের ক্ষেত্রে এই গুটাথিয়ন হিসেবে জমা
থাকে। প্রাকৃতিকভাবে রসুনে ডাই-সালফাইড পাওয়া যায় যা গুটাথিয়ন রিডাকশনের বিরুদ্ধে
বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। স্বাভাবিক অবস্থায় একে ব্যবহার করেই কোষ বৃদ্ধি পায়।
সংগ্রহঃ বিশ্বনবী'র (সাঃ) চিকিৎসা
বিধান, ডাঃ আলমগীর মতি
কাশির ট্যাবলেট এর নাম
ReplyDelete