তায়েফের কাফেদের ঘটনা
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তায়েফের দ্বারে দ্বারে নগরে-প্রান্তরে দীর্ঘ দশ দিন পযন্ত আল্লাহপাকের দ্বীনের কথা প্রচার করে গেলেন, কিন্তু মানুষ ধীরে ধীরে তাঁর বিরুদ্ধে উৎতেচিত হয়ে উঠল। রাসূল (সাঃ)-কে পথে দেখতে পেলে তারা পাগলের মতো হৈ-চৈ করে তাঁর চারদিকে ঘিরে দাঁড়াত। তার পবিত্র দেহ মোবারক এ ইট-পাথর মেরে মেরে তাঁর শরীর ক্ষত বিক্ষত করে দিত। মাঝে মাঝে তারা পথের দু’ধারে বসে রাসূল (সঃ)-এর প্রত্যেক পদক্ষেপে তাঁর পায়ে দু’দিকে থেকেই পাথর মারতে থাকতো। যার ফলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চরণযুগল রক্তরঙ্জিত হয়ে যেত। তিনি অবস হয়ে বসে পড়লে নিষ্ঠুর কাফেরা তাঁর দুই বাহু ধরে তুলে দিয়ে চলতে বাধ্য করত এবং আবার পাথর ছুঁড়তে থাকত। কাফেরদের উৎকট কোলাহলে ও বজ্র হাসিঠাট্টা তায়েফের পর্বত প্রান্তর প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠতো।
হযরত রাসূল (সঃ)-এর যখন সমস্ত শরীরে এবং পোশাক পরিচ্ছদ রক্তরঞ্জিত করে অবশেষে পাষাণ কাফের উম্মত্তের দল নিরস্ত হয়ে ফিরে যেত তাদের বাড়িতে। রাসূল (সাঃ) তখন অবসন্ন ও অজ্ঞান প্রায় হয়ে যেতেন।
আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীকে রক্ষা করতে গিয়ে তার সাহাবা যায়েদও ভীষণভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। সে অবস্থায়তেও যায়েদ প্রিয় নবীকে কাঁধে তুলে কোন রকমে নগরের বাইরে নিয়ে চলে আসেন। নিকটেই ছিল উতবা ও শায়বা নামক দুই মক্কাবাসী সহোদরের প্রাচীর বেষ্টিত আংগুরের বাগান। তাঁর সেই বাগানে আশ্রয় নিলেন এবং নিজের প্রতি কোন চিন্তা না করে যায়েদ হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মনে পড়ল নামায পড়ার কথা। তাই অযুর প্রস্তুতির জন্য যায়েদ তাঁর রক্তাক্ত স্ফীত পা দু’খানা জুতার মধ্য হতে টেনে বের করলেন এবং পায়ের ক্ষতের অবস্থা দেখে যায়েদ চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারলেন না।
খুবই কষ্টে অযু
সমাপ্ত
করে
নামায
অবস্থায়
আল্লাহর
দরবারে
হাত
উঠিয়ে
বলতে
লাগলেন,
হে
আল্লাহ
রাহমানুর
রাহীম! অবিশ্বাসীরা আমার উপর যে গুরুতর অন্যায় করেছে সে জন্য তাদেরকে তুমি শাস্তি দিও না। হে আল্লাহ! অবিশ্বাসীরা যে তোমার বাণী গ্রহণ করছে না, তার জন্য আমার অক্ষমতা ও দুর্বলতাই দায়ী। লোকের সামনে আমার এই অযোগ্যতা সম্পর্কে তোমার কাছে ফরিয়াদ করছি, প্রার্থনা করছি, তুমি আমার এই অক্ষমতা দূর করে দাও। তুমি দুর্বলের প্রভু, তুমি দুর্বলের সহায়। এমন রুক্ষ বর্বরদের হাতে ছেড়ে দিয়ে তুমি কি আমার সকল প্রায়াস ও সাধনাকে শেষ করে দেবে? তুমি কি আমাকে জয় করবে না? হে প্রভু, আমার প্রতি তুমি অসন্তুষ্ট হয়ো না। তুমি আমার উপর সবসময় সন্তুষ্ট থাকলে কোন বিপদ বা দুঃখ-বেদনাকে আমি গ্রাহ্য করি না। হে মহা প্রতিপালক ! আমার একমাত্র ভরসা তুমিই।
এই
আবেগভরা
প্রার্থনার মুহূর্তে ওহী নাযিল হল, ধৈয ধর, চরম ধৈযং নিশ্বয় তাহার (অবিশ্বাসীরা) দেখিতেছে ইহা (বিজয়) সুদূরপরাহত, কিন্তু আমরা দেখিতেছি ইহা নিকটবর্তী।
আমাদের প্রিয় নবী করিম হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ইসলাম প্রচারের সবচেয়ে বেশি কষ্টের শিকার হয়েছেন তায়েফের দুষ্ট কাফের দ্বারা। কোন একদিন মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) নবীজির মুখ মোবারকে যখন তৈল মালিশ করতে গিয়ে দেখতে পেলেন, এত সুন্দর পূর্ণিমার চন্দের ন্যায় চেহেরার মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঘাতের চিহ্ন। তখন মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) উক্ত দাগ সম্পর্কে জানতে চাইরে নবীজি করুণ বললেন তায়েফের কাফেরদের অত্যাচারের দাগ। দেখুন মুমিন মুসলিম সকল ভাই বোনেরা যে দেহ মোবারকে আল্লাহ তায়ালা রাব্বূল আলামিন কোন দিন একটি মশা মাছি বসতে দিত না। সেই দেহ মোবারকে কাফেরদের অত্যাচারের দাগ নবীজি দেহ মোবারকে লেগেই ছিল। তার পরও দয়াল নবী কোন দিন কাফেরদের বদদোয়া করেন নি সারা জীবন শুধু উম্মত উম্মত করে গেলেন। তাহলে আজ আমরা নবীর উম্মত হয়ে কি করা উচিৎ?
No comments