Banners

আলা হুজুর পাক


হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ)-এর সম্পর্কে আর কী বললে গুনাহগার ভক্ত সকল, তাহার বংশের আওলাদ পাকদের নিয়ে আজকে কিছু আলোচনা করছি। যিনি ছিলেন আমাদের নবী করীম হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর ৩১ তম বংশধর এবং বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ)-এর ১৯ তম বংশধর। যে এর ধরাধামে আলা হুজুর নামে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছেন। তিনি ভারতে পশ্চিমবঙ্গে মেদিনীপুর জম্নগ্রহন করেন।

আলা হুজুর

সৈয়েদেনা হজরত সৈয়দ শাহ মেহের আলি আল কাদেরী আল হাসানী ওয়াল হোসেনী (আঃ) ভক্ত সাধারণের কাছে হজরত আলা হুজুর (আঃ) নামেই অধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন

আলা হুজুর, বড়পীরের বংশধর, ওলী-আল্লাহ, ওলী আল্লাহর জীবনী, মেহের আলি আল কাদেরী (আঃ)
তখনকার সময় মেদিনীপুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ মনোরম ছিল বন, জঙ্গল, পাহাড়, নদী ইত্যাদি সবুজে ভরা  সে যুগে মেদিনীপুরে বহু পীর ওলী বসবাস করতেন এই মেদিনীপুরেই হজরত আলা হুজুর তাঁর প্রথম প্রশ্বাসটি গ্রহণ করেন ১২২৩ হিজরির ১৬ই রবিউল আওয়াল সোমবার রাত্রি তখন ২রা মে ১৮০৮ খ্রীষ্টাব্দ তাঁর জন্মে মুহুর্ত হতেই বুঝি কারামাতের সূত্রপাত তাই তো নবজাতকের আবিরভাবে সমগ্র প্রসূতিকক্ষটি দিবালোকের ন্যায় আলোকিত হয়ে উঠল

তাঁর পিতার মুর্শেদ তথা জ্যেষ্ঠতার সৈয়দেনা হজরত গওস--সানি সৈয়োদান সৈয়দ শাহ জাকের আলি আলকাদারী (আঃ) তাঁর জন্মের বহুপূর্বেই তাঁর আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন শোনা যায় একদিন হযরত গওস--সানি  (আঃ) তাঁর খানকাহ এর বারান্দায় বসেছিলেন হঠাৎ বাতাসের মধ্যে এক সুন্দর সুগন্ধ তিনি অনুভব করলেন কয়েকবার সেই সুগন্ধ তিনি অনুভব করলেন কয়েক বার সেই সুগন্ধ গ্রহণ করে তাঁর স্বর্গীয় ভাবের আবির্ভাব হয় সেই অবস্থায় তিনি বললেন- এক মহাপুরুষ আবির্ভূত হবেন, এই সুবাস তাঁরই আগমণের পূর্বাভাষ

বড়পীর সাহেব হজরত গওস-ইল-আজম (আঃ), তাঁরি পিতা হজরত তোফায়েল আলি আলকাদারী (আঃ) এর নিকট আবির্ভূত হয়ে ভবিষ্যদ্বানী করেনঅতি শীঘ্র তোমার ঘরে একটি পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হবে; সূযের মতই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে

তাঁর মাতামহ (নানাজান) হজরত সৈয়দ শাহ গোলাম আলি (আঃ) ছিলেন অতি উচ্চ মার্গের সাধক তাঁর বেসাল শরীফের সময় নিকটবর্তী হলে তিনি তাঁর কন্যা ও পুত্রদের নিজের কাছে ডেকে পাঠালেন তাঁদের বললেননিকট ভবিষ্যতে হজরত গওস-উল-আজমে এর (আঃ) বংশের এক জবরদস্ত ওলী আবির্ভূত হবেন তখন আমি থাকবো না তাই তোমাদের মাধ্যমে আমি আমার আধ্যাত্ম শক্তি তাঁকে উপহার দিতে চাই এই উপহারে যথার্থ বাহক কে হবে আমি পরখ করতে চাই

দেখি, ঈশ্বর এই উপহারের ধারক হিসাবে কাকে নির্বাচন করেন তারপর প্রথমে পুত্রকে বললেন একটি চীনামাটির প্লেটে একখিলি পান নিয়ে আসতে কিন্তু পুত্ররা আপাতদৃষ্টিতে অতিসরল কাজটি করতে পারলেন না আনার সময় প্রত্যেকের প্লেট থেকেই তা কীভাবে যেন গড়িয়ে মাটিতে পড়ে গেল এবার তিনি কন্যা হজরত সৈয়দা বিবি নেয়ামাত উন্নেসা দিকে তাকিয়ে বললেন- দেখেঁ ইহ নেমত (উপহার), নেমত (কন্যার নাম) নসীব হোতা হ্যায় কি নহীঁ? কন্যা পিতৃআদেশ পালনে সক্ষম হলেন  হজরত গোলাম আলি (রাঃ) পানটি দংশন করে কন্যাকে খেতে দিলেন হজরত বিনি নেয়ামত উন্নেসা (সালাতুল্লা আলেয়হা) এভাবেই তাঁর পিতার আধ্যাত্মিক শক্তির ভান্ডারটি সযত্নে গ্রহণ করে তা সংরক্ষন করলেন ভবিষ্যতের জন্য এরপর হজরত গোলাম আলি (রাঃ) তাঁর পুত্রদের বললেন- তোমরা তোমাদের এই ভগ্নীটির যথোপযুক্ত সম্মান ও সেবা যত্ন করবে, এবং সময় হলে তাঁর বিবাহ দেবে হজরত গওস-উল-আজমের (আঃ) বংশধর ও আধ্যাত্মিক শক্তির উত্তরাধিকারী এক মহামতি  সাধক এঁর দৈবনির্দিষ্ট পতি এঁর গর্ভেই সেই মহাসাধক জন্ম নেবেন যাঁর হাতে আমার এই উপহারটি তুলে দেবার মহান দায়িত্ব আম আজ এঁকে সমার্পন করলাম

শৈশব অতিক্রান্ত হতে না হতেই হজরত আলা হুজুর (আঃ) কঠোর আশ্চযা ও কৃচ্ছাসাধনের জীবন গ্রহণ করেন তাঁর পিতার নির্দেশে সিদ্ধডাল এবং যবের রুটি ছিল তাঁর একমাত্র খাদ্য তাঁর আত্মীয় পরিজন তাঁরই সাথে বসে অতি উপাদেয় গ্রহণ করলেও তিনি কখনও ওরূপ খাদ্যে আসক্তি প্রদর্শন করতেন না পরবর্তী জীবনেও যখনই আধ্যাত্ম সাধনায় নিমগ্ন থেকেছেনসম্পূর্ণ নিরামিষ আহার গ্রহণ করেছেন তাঁর পিতা তাঁর জন্য অতিসাধারণ পোষাক নির্দিষ্ট করেছিলেন এমন কি ঈদের দিনেও ভাল খাওয়া বা পরিধেয় গ্রহণের অনুমতি পিতা তাঁকে দেন নি অন্যান্য বালকদের তুলনায় তাঁর প্রকৃত ছিল একেবারেই ভিন্ন

তিনি অপরূপ সৌন্দযের অধিকারী ছিলেন তাঁর মুখমন্ডল জুড়ে থাকত এক স্বর্গীয় জ্যোতি; এই জ্যেতির তীব্রতা এতই বেশী ছিল যে তাঁর হুজরা খানায় রাতের অন্ধকারেও সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যেত

হজরত আলা হুজুর তাঁর পিতার নিকট আরবি ভাষা ও তার সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত আরবের মতই আরবি পড়তে ও বলতে পারতেন

হজরত মেহের আলির (আঃ) চার কন্যা ও তিন পুত্র ছিলেন তাঁর জ্যেষ্ট পুত্র হজরত মুর্শেদ আলি (আঃ), মাধ্যম পুত্র শাহ আলি মুর্শেদ (আঃ) এবং কনিষ্ঠ পুত্র শাহ ওলী মুর্শেদ (আঃ)

আলা হুজুরের কনিষ্ঠ পুত্র হজরত সৈয়দ শাহ ওলী মুর্শেদ তাঁর লিখিততাহরিসে মুতাবায়াতে ওলী মুর্শেদপুস্তকের ৬৪ পৃষ্ঠায় তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতেই যে, “সাজ্জানদানশীসে কথার উল্লেখ করেছেন পাঠকদের অবগতির জন্য নিম্ন ৬৪ পৃষ্ঠার কিয়দংশ মুল উদ্দুর্র বাংলা উচ্চারণে ও বঙ্গানুবাদ উদ্ধৃত করলামঃ-
আপকে (আলা হুজুর) তিন ফরজান্দ একতো, হজরত  ফায়েজ দারজাত মোয়াল্লা আলকাব সাজ্জাদায়ে মশনদে এরশাদে কাদেরীয়া ওয়াকেফে রামুয়ে এলাহী আরেফে নিকাতে শরীযত ও তরিকাত সায়েমুদ্দাহার কায়েমুল লায়েল মওলানা সৈয়দ শাহ আলী আবদুল কাদের শামসুল কাদেরী আলমারুফ ওয়া মশহুর নাজদিক ও দূর বা সৈয়দ শাহ মুর্শেদ আলী আল কাদেরী সাহাব কেবলা মাদ্দেজিল্লাহুল আলী মাদায়ে বেলাদত আপকা লবস চেরাগউদ্দিনসে নিকাল তা হ্যায় আল মুতখাল্লেস বা আসি ও জামাল বাসিন্দায়ে কালকাত্তা সাহেবে আওলাদ
দুসরে হজরত সৈয়দ শাহ আবদুল কাদের বিলকাদেরী আল মারুফ বা সৈয়দ আলী মুর্শেদ আল কাদেরী ওয়া মুর্শেদ নব (আনায়ারুল্লাহো মারকাদুহুলা আওলাদ)”
তিরসা ইয়েগুনাহগার ইয়ানী ওয়লী মুর্শেদ আল কাদেরী মাশহুর বা মেদিনীপুর মহম্মদ আকবর আলী আল মোতাখাল্লেস বা মুর্শেদ (আল্লারাক্ষে) সাহেবে আওলাদ

বঙ্গানুবাদঃ-তাঁর (আলা হুজুর) তিন পুত্র প্রথম, কাদেরীয় তরিকতের সাজ্জাদানশীন আল্লাহর মারেফাতের জ্ঞানের অধিকারী এবং শরীয়ত ও তরিকতের সূক্ষ জ্ঞানী, রজনীতে দীর্ঘ এবাদত কারী এবং পূর্ণ বৎসরের রোজ মাওলানা সৈয়দ শাহ আলি আবদুল কাদের শামসুল কাদেরী, যিনি সৈয়দ শাহ মুর্শেদ আলি আল কাদেরী সাহেব কেবলা মাদ্দাজিল্লাহুল আলী নামে নিকট ও দূরে বহুল পরিচিত ও সুখ্যত আপনার জন্মের তারিখে উৎপত্তি চেরাগউদ্দিন শব্দ হতে কাব্যিক নাম আসি জামাল, কলকাতার বাসিন্দা ও সাহেব আওলাদ

দ্বিতীয়, হজরত সেয়দ শাহ আবদুল আদের বিল কাদেরী, যিনি সৈয়দ আলী মুর্শেদ আলকাদেরী ও মুর্শেদ নবী নামে পরিচিত তিনি নিঃসন্তান ছিলেন আনোয়ারুল্লাহু মারকুদুহু

তৃতীয়, এই গুনাহগার অর্থাৎ ওলী মুর্শেদ, আল কাদেরী মেদিনীপুরে মহম্মদ আকবর আলী নামে পরিচিত, কিব্যিক নাম মুর্শেদ, (আল্লাহর রাখে সাহেবে আওলাদ)

হজরত তাঁর জীবনে অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শন করেছেন; ফারসি ভাষায় রচিত পুস্তকতোগরা--মাহামেদপুস্তকে তাঁর অনেক অলৌকিক ক্রিয়া কলাপের বর্ণনা আছে

১২৮৫ হিজরীর ১৬ই মহরম অর্থ্যা ৯ই মে, ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পরলোক গমন করেন তাঁর বেসাল শরীফের ঠিক পূর্বে তিনি তাঁর পুত্র সৈয়দেনা হজরত সৈয়দ শাহ মুর্শেদ আলি আল-কাদেররী আল-জিলানীর (আঃ) হাতে তাঁর আধ্যত্ম উত্তরাধিকারটি সমর্পন করেন আপন আধ্যাত্ম শক্তি পুত্রে সঞ্চারিত করার জন্য তিনি তাঁকে আপন বক্ষসংলগ্ন করে আলিঙ্গন করেন সে সময় তাঁর দিব্যবিভায় সমগ্র হুজরাখানা যে এক সহস্র বাতির আলোকে ঝলসে উঠেছিল

কিতাবঃ মাওলাপাকের সংক্ষিপ্ত জীবনি

No comments

Powered by Blogger.