Banners

গাউসে পাকের মুরীদের মর্যাদা - ১র্ম পর্ব


আব্দুল কাদের জিলানী, গাউসে আজম, গাউসে পাকের মুরীদের মর্যাদা, বড়পীর, বিশ্বে ১৬০ কোটিরও বেশি মুসলমান রয়েছে। এই মুসলমানদের মধ্যে এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি অন্যান্য জাতির মধ্যে কোটি কোটি মানুষ কাদেরিয়া তরিক্বায় মুরীদ। কারণ কাদেরিয়া খানদান পাক আল্লাহর তায়ালার নূর ও তাজাল্লিয়াতের এমন এক প্রসবণ, যা থেকে অন্য অন্য তরিকা যেমন- চিশ্‌তীয়া, নকশাবন্দীয়া, মুজাদ্দেদিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া প্রভৃতি তরিকও গউসে পাকের পুষ্পোদ্যান থেকে ফুল কুড়িয়ে নিজেদের আঁচল ভর্তি করেছে। প্রতিটি প্রসিদ্ধ তারিকার প্রধান প্রধান পীরেরা আধ্যাত্মিকভাবে গাউসে পাকের সহাচয গ্রহণ করেছেন এবং তার থেকে বরকত নিয়ে ধন্য হয়েছেন। তাই কাদেরিয়া তরিকার ভক্তবৃন্দ মুরিদান, অনুসারীরা অন্য তরিকার অনুসারীদের থেকে বিশেষ মযাদার অধিকারী। তাই কাদেরীয়া তরিকার অনুসারীদের অন্য কোন তরিকায় বা পীরের কাছে গিয়ে দীক্ষা গ্রহণ করা বা ছবক নেওয়া বা মুরীদ হওয়া উচিৎ নয়। কার সকল আউলিয়া কেরামই বেলায়েত অজনের জন্য গাউসূল আজম বড়পীরের মুখাপেক্ষী তাই গাউসে পাকের দরবারের মুরিদের উচিৎ নয় অন্য তরিকার কোন আউলিয়ার মাজারে গিয়ে কোন কিছুর প্রাথনা করা। তাহলে ঐ মুরীদ গাউসে পাকের গাউসিয়াতের ফুযুজাত থেকে বঞ্চিত হবে। তবে অন্য দরবার শরীফে যাওয়া, মাজার জিয়ারত করা, ফাতেহা শরীফ পালন করা, ওরশে যোগদান করা নিষেধ নয় বং নিঃসন্দেহে একটা আমলে সালেহা (সৎ কাজ)।

১। হযরত শাহ্‌ আবুল মা’আলী কাদেরী (রঃ) তার তোহফায়ে কাদেরিয়া গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, শায়েখ আবুল মুসলী (রাঃ) তাঁর চাচা হযরত সাদি ইবনে মুসফির (রঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, কোন তরিকার মুরিদগণ আমার কাছে তরিকতের দীক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা পোশন করলে আমি তাকে আমার তরিকার দাখিল করে নিই। কিন্তু শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানীর কাদেরীয়া তরিকার মুরীগণকে এ সুযোগ দিই না। কারণ তার এক অনন্ত কুল-কিনারা বিহীন রহমতের সমুদ্রের মাঝে ডুবে আছে। তাদের অন্য কোন তরিকার প্রয়োজন পড়ে না। তারা অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করবেই বা কেন? কেউ কি সমূদ্র ত্যাগ করে পুকুরের নিকট আসে? যে জান্নাতুল আদনে অবস্থান করে সে জান্নাতের বাগন দিয়ে কি করবে? (তাযকিয়ায়ে মাশায়েখে কাদেরীয়া, ইউপি ভারত)

২। হযরত সুলতান বাহু (রাঃ) বলেন- কোন তরিকত পন্থী যত রিয়াযত মুজাহিদা করুন না কেন, একজন সামান্য মযাদার অধিকারী কাদেরীয়া তরিকতপন্থীর মযাদায় পৌঁছাতে পারে না। কারণ কদেরীগণ স্বল্প সময়ে যে মাকাম বা স্তারে পৌঁছাতে পারে, অন্যারা ঐ স্তরে পৌছাতে  অনেক সাধনার   প্রয়োজন হয়। (তরিকেমাশায়েখকাদেরীয়া- ১ম খন্ড, দিল্লি, ভারত)


৩। ইরাকের শীষ মাশায়েখ শায়েখ আবুল ফাতাহ্‌ (রঃ) বণনা করেন- আমি হযরত শায়েক আলী বিন হায়তীকে বলতে শুনেছি কোন শায়েখের (পীরের) মুরীদ সৈয়্যেদেনা আব্দুল কাদের জিলানীর মুরিদগণের থেকে বেশি মর্যাদাবান ও সৌভাগ্যবান হতে পারে না। (বাহজাতুল আসরার, যুবদাতুল আসার, গাউসুল ওরা)

৪। হযরত শায়েখ আলী বিন হায়তী (রঃ) বণনা করেন- শায়েখ বকা বিন বতু (রঃ) বলেছেন- আমি গাউসে পাকের গোলামদেরকে (মুরীদদের) উচ্চ মযাদার দেখেছি। (বাহজাতুল আসরার, যুবদাতুল আসার, গাউসুল ওয়া, গাউসুল আযম)

৫। পারস্যের বিখ্যাত কবি, দাশনিক, অলি হযরত শেখ সাদী (রঃ) এর ওস্তাদ মুহাদ্দিসগণের মাথার তাজ হযরত মুহাদ্দিস ইবনুল জুযি কুদ্দিসা সিররুহুল আজিজ বলেন- হুজুর গাউসে আযমের মুরীদের চেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান অন্য কারো মুরীদ নেই। (বাহজাতুল আসরার, কালায়েদুল জাওয়াহের)

৬। গাউসে পাক দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় ইরাকের শীষ মাশায়েখ হযরত শায়েখ আদি বিন মুসাফির প্রায় সময় বলতেন- গাউসে পাকের  বতমান কেউ আমার খেরকায়ে খেলাফত কামনা আমি ওকে বলতাম, মহা সমুদ্র ছেড়ে নিছক নগন্য খাল থেকে পানি নেওয়ার চেষ্টা করছো।(বাযজাতুল আসরার, যুবদাতুল আসার, গাউসুল ওরা, গাউসুল আযম) উপরোক্ত মাশায়েখগণ (পীর), আউলিয়া কেরাম,  মুহাদ্দিস কেরামের উক্তি থেকে এটা পরিষ্কার যে, কাদেরিয়া খানদান পাকের একজন নতুন মুরীদ অন্য তরিকার একজন খাঁটি মুরীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং এ তরিকার একজন পুরাতন মুরীদ অন্য তরিকার একজন পীরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা  আমাদের সত্যকে উপলদ্ধি করার তৌফিক দান করুন।

রাসূলে পাক (সাঃ) হলের আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ। অতি মহামানব। তার আহলে বাইত বা বংশধরেরা জগতের মধ্যে সকলের উদ্ধে সর্বশ্রেষ্ঠ। তারই খাস বংশধর হলেন আমাদের আকা মাওলা গাউসুল সাকলায়েন, মহিউদ্দিন শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানী (আঃ)। মানব, দানব, জ্বীন, ইনসানের মুক্তির জন্য রাসুলে পাকের (সাঃ) নির্শেদ মওলা আলীর বেলায়তী ক্ষমতার প্রতিভূ হয়ে পীরানেপীর যে তরিকার রেখে গেছেন সেটাই হচ্ছে  কাদেরিয়া তরিকা। আর আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে বার বার মুরিদের নাজাতের কথা বলেছেন। অভয় বণী দিয়েছেন। নিম্নে সে কথাগুলো তুরে ধরার চেষ্টা করা হল-

১। গাওসে পাক বলেনঃ        মুরিদি হিম ওয়াত্বীব ওয়াশ্‌তাহ্‌ ওয়া গান্নি
ওয়াফআল মাতাশায়ু ফাল্‌ ইসমু আলী। (কাশিদায়ে গাউসিয়া)

অর্থঃ হে আমার মুরিদ! আন্তরিক হিম্মত বাঁধ (বিশ্বাস কর), উল্লাসিত হও (খুশি মনে থাকো), নির্ভীকতা ও নির্ভরতা অবলম্বন কর এবং তোমার অন্তর যা চায় করো। কেননা আমার নাম যে অতি সুউচ্চ।

ব্যাখ্যা বা সবকঃ গাউসে পাকের কাসিদার ব্যাখ্যা কয়েক প্রকার হতে পারে।

প্রথমত: হায়মান, তীর, শাত্বহ ও গেনা, মরিফাতের জগতের কয়েকটি স্তর বা মাকাম। কোন মুরিদের যদি গাউসে পাকের ইশারায় এ মাকামগুলো অতিক্রম করতে পারে তাহলে মুরিদের অবস্থা এমন হবে যে তখন তার চওয়া ও পাওয়ার ইচ্ছা আল্লাহর চাওয়া ও ইচ্ছা হয়ে যাবে। তখন মুরীদ আল্লাহর নির্দেশে যা খুশি তাই করতে করতে পারবে। তাই গাউসে পাক মুরিদদের এ ব্যাপারে বিশ্বস্ত হতে নির্দেশ দিচ্ছেন।


দ্বিতীয়ত: আমি আব্দুল কাদের (আঃ) আল্লাহর প্রেমে এতই মশগুল যে আল্লাহর তায়ালা খুশি হয়ে আমাকে এত উচ্চ মাকাম দান করেছেন তাই হে মুরীদগণ! তোমরা নির্ভয়ে চলো! আমার কথামত চলো। তাহরে নাজাত পেয়ে যাবে।

তৃতীয়ত: আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খাস সন্তান। ইমাম হাসানের বংশধর। আমার হাতে যারা বাইয়াত (মুরীদ) হয়েছে এবং আমার পবিত্র বংশধর বা তরিকায় যারা বাইয়াত হয়েছে তারা মূলতঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতেই সাহাবীদের মতো বাইয়াত হয়েছে। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতে বাইয়াত হয়েছে তারা তো আল্লাহ তায়ালার কুদরতী হাতেই বাইয়াত হয়েছে। কেননা

আল্লাহ তায়ালা তার পবিত্র বাণীতে বলেন- সূরা ফাতহ, আয়াত নং ১০: অর্থঃ যারা আপনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করছে, তারা তো আল্লাহরই নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছে। তাদের হাতগুলোর উপর আল্লাহর হাত রয়েছে। সুতরাং যে কেউ অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, সে নিজেরই অনিষ্টার্থে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে আর যে পূরণ করেছে ঐ অঙ্গীকারকে যা সে আল্লাহর সাথে করেছিল, অতিসত্ত্বর আল্লাহ তাকে মহাপুরস্কার দেবেন।

সুতরাং হে মুরীদ! অপরের নিন্দাকে ভয় করো না। বুকে সাহস রাখো খুশি হও, নির্ভয়ে আমার গান গেয়ে যাও। আমার নাম যে অতি উর্দ্ধে।
গাউসে পাকের মুরীদের মর্যাদা - ২য় পর্ব (শেষ পর্ব) দেখতে ক্লিক করুন

সংগ্রহঃ কিতাবের নাম মুরিদের প্রতি গাউসে পাকের দয়া
লেখকঃ ইঞ্জিয়ার মোহাম্মদ তফিজ উদ্দিন কাদেরী

No comments

Powered by Blogger.