Banners

নবী (সাঃ)-এর শাফায়াত যাদের জন্য হারাম

রাসূল (সাঃ) বলেন, “ যে ব্যাক্তি এজন্য আনন্দিত যে, সে চায় আমার মত জীবন যাপন করতে, আমার মত মৃত্যুবরণ করতে ও আমার প্রতিপালকের চিরস্থায়ী বেহেস্তে বাস করতে যে যেন আমার পর আমার আহলে বায়েতকে অনুসরণ করে। কারণ তারা আমার সবাধিক আপন এবং তারা আমার অস্তিত্ব হতে অস্তিত্ব লাভ করেছে। আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকেই তারা প্রজ্ঞা লাভ করেছে। ধ্বংস আমার সেই উম্মতের জন্য যারা আমার আহলে বায়েতের শ্রেষ্ঠত্বকে মিথ্যা মনে করে এবং আমার ও তাদের (আহলে বায়েতের) মধ্যেকার সম্পক করতন করে। আল্লাহ আমার শাফায়াতকে তাদের জন্য হারাম করুন। (কানজুল উম্মাল ৬ষ্ঠ খ. পৃ:২১৭ হাদীস ৩৭১৯; মাসনাদে আহম্মদ ৫ম খন্ড পৃ:৯৪; মুস্তাদরাক হাকেম ৩য় খন্ড পৃ:১২৮; হুলিয়াতুল আউলিয়া পৃ:৪৪৯)।

হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হয়ে যাও।” (সুরা তাওবা-১১৯)
আল্লাহ আমাদেরকে সত্যবাদীরে সাথে থাকতে বলেছেন কারণ কি? ঈমান আনা যথেষ্ট নয়, কারণ সত্যবাদীদের সাথে থাকলে ঈমান সতেজ ও মজবুত থাকবে। তাই এখন আমরা সত্যবাদীদের কোথা পাবো? আসেুন যে পবিত্র কোরআনে সত্যবাদীদের সাথে থাকার তাগিত দেওয়া হচ্ছে, সেউ কোরআনেই খুঁজি সত্যবাদী কারা।
একদা নাজরানের খ্রিস্টানদের একটি দল পাদ্রীসহ রাসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হন। তারা হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কীয় নবীজির সাথে তকবিতর্কে লিপ্ত হন নবীজির কোন যুক্তিই তারা মনছিলেন না। তখন নবীজির প্রতি কোরআনের এই আয়াতটি অবতীন হয়।

“আপনার নিকট যথাযথ জ্ঞান আসার পরও যে কেউ এই বিষয়ে তরকো করবে, সন্দেহ করবে তাদের বলুন: আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের, আমরা আমাদের নারীদের এবং তোমরা তোমাদের নারীদের এবং আমরা আমাদের নাফ্‌সকে (সত্তা) ডাকি তোমরা তোমাদের নাফস (সত্তা)-কে ডাক। অতঃপর আমরা বিনীত আবেদন করি মিথ্যাবাদীরেদ উপর আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত) বর্ষিত হোক”। (সুরা আলে ইমরান-৬১)

নবী (সাঃ) ইমাম হাসান, ইমাম হোসেন, হযরত ফাতেমা ও ইমাম আলী (আঃ)-কে ডাকলেন এবং হুসাইনকে কোলে নিলেন, ইমাম হাসানের হাত  ধরলেন এবং হযরত ফাতেমা নবীজির পিছনে এবং ইমাম আরী হযরতম মা ফাতেমার পিছনে হাঁটছিলেন। নবী (সাঃ) তাঁদের উদ্দেশ্যে বলনলন হে আমার মিশনের সদস্যগণ আমি যখন অভিসম্পাতের জন্য প্রাথনা করব, তখন তোমরা ‘আমিন’ বলবে।
এখানে বিশষভাবে উল্লেখ্য যে, আল্লাহর পছন্দসহ ধম ইসলামের সত্যতা নিরূপণের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নবী আর কাউকেও সঙ্গে নিলেন না, শুধু আহলে বায়েত (আঃ)-গণের  নিলেন। যেমন আল্লাহর পছন্দসহ ধরমো সত্য ও পবিত্র, ঠিক তেমনি সাক্ষ্যও সত্য ও পবিত্র হতে তাই তিনি আহলে বায়েত (আঃ) গণকেই সাথে নিলেন। কারণ তারাই ছিলেন প্রকৃত সত্যবাদী।

মোবাহালার মাঠে নাজরানের পাদ্রী এই সত্যবাদী পাকপাঞ্জাতনকে দেখে ভীত হয়ে খ্রিস্টানদের বলেন, আমি তাদের চেহারাতে এমন জ্যেতি দেখতে পাচ্ছি, যদি তাঁরা এই পাহাড় ও পরবতকে সরে যেতে বলে তারা সরে যাবে। সুতরাং তাঁদের মাথে মোবাহালা (অভিসম্পাতের) প্রাথনা করো না। তারা যে জিজিরা কর ধার্য্য করেন তা মেনে নাও। সুত্রঃ কোরানুল করিম (মুহিউদ্দিন খান) পৃ:১৮১; সহীহ মুসলিম ৭ম খন্ড পৃ:৩৯৮, হা: নং ৬০০২ (ইফাবা); সহীহ রিমিজী ৫ম খন্ড পৃ-১৯১; হাদীস নং-২৯৩৭, তাফসীর ফাখরুদ্দিন রাজি ২য় খন্ড পৃঃ৬৬৯ এছাড়া আরো অনেক কিতাবে রয়েছে।

অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আজ থেকে চৌদ্দ শত বছর পূর্বে খ্রিস্টানেরা পাকপাঞ্জাতন আহলে বায়েত (আঃ)-কে চিনে গেলেন। আর আজ আমরা নিজেকে নীব (সাঃ)-এর উম্মত বলে দাবী করি কিন্তু আহলে বায়েত (আঃ)-কে ঠিক মত চিনি না, জানি না। অনেকেই এমনও পাওয়া যায়, যারা আহলে বায়ে (আঃ) এর নামও শুনে নাই। তাদের অনুসরণ করার তো প্রশ্ন আসে না! তাই এই হতোভাগার কষ্ট করে মানুষকে আহলে বায়েত সম্পর্কে জানারেনা চেষ্টা করছে। আমিও তো জানি আমার জানার পর আমার জন্য যদি একটি মানুষও আহলে বায়েতকে চিনতে বা জানতে পারে এবং তারে অনুসরণ করে সেখানেই আমার পরম আনন্দ।

নবীর আগলে বায়েতের ভালবাসা উম্মতের ইচ্ছের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। নবী যে রিসালতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন আল্লাহ তার বান্দার কাছ থেকে তার পারিশ্রমিক বাবদ নবীর আহলে বায়েতের ভালবাসাকে বাধ্যতামুলক করে দিয়েছেন। যদি আমরা আহলে বায়েতকে অন্তর দিয়ে ভাল না বাসি তাহলে আল্লাহর এই নির্দেশ অকার্যকর থেকে যাবে বা যানা যাবে না। তাই নির্দেশ হচ্ছে- “হে রাসূল বলুন: যে আমি আমর রেসালাতের প্রারিশ্রমিক তোমাদের কাছে কিছুই চাই না, শুধু আমার কুবরা (নিকট আত্মীয়) এর মোয়াদ্দাত (প্রাণাধিকার ভালবাস) ব্যতিত। (সুরা: শুরা-২৩)

হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বণনা করেছেন যে, যখন এই আয়াত নাযিল হলো তখন যাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ করা আপনার নিকট আত্মীয়? যাদের মুয়াদ্দাত(প্রাণধিক ভালবাসা ও অনুসরণ) পবিত্র কোরআনে উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে। উত্তরেন নবীজি বললেন- আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। সুত্রঃ কোরান শরীফ (হাকীমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী) পৃ:৬৯২, তাফসীরে দুরবে মানসু ৬ষ্ঠ খন্ড পৃ-৭, তাফসীরে কাবির ২৭তম খন্ড পৃ-১৬৬, তাফসীরে কাশশাফ ৪থ খন্ড পৃ-২২০(মিশর), তাফসীরে কুরতুবি ১৬তম খন্ড পৃ-২২ এছাড়া আরো অনেক কিতাবে।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করে, সে শহীদি মযাদা পায়।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করে, সে নাযাত প্রাপ্ত হয়ে মারা যায়।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করে, সে তওবাকারী হিসাবে মারা যায়।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করে, সে পূণ ইমানের সঙ্গে মারা যায়।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করে, তাকে মালেকুল মাউত, মানকীর ও নাকীর ফেরেস্তারা বেহেস্তের সুসংবাদ দেয়।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করে, তাকে এমন ভাবে বেহেস্তে নিয়ে যাওয়া হবে যেমন বিবাহের দিন কন্যা তার শশুড়ালয়ে যায়।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করলো তার কবরে জান্নতে মুখি দুটি দরজা খুলে দেয়া হবে।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করে, আল্লাহ তার কবরকে রহমতের ফেরেস্তাদের যেয়ারতের স্থানের মযাদা দেন।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যু বরণ করে, সে নবীর সুন্নত ও তার জামাতে মারা যায়।

নবী (সাঃ) আরো বলেছেন
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, কেয়ামতে তার কপালে লেখা থাকবে সে আল্লাহর রহমত হবে বঞ্চিত নিরাশ আছে।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে কাফের হয়ে মারা যায়।
যে ব্যাক্তি আলে মুহাম্মদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে বেহেস্তের সুগন্ধও পাবে না।

সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার আহলে বায়েত কারা? তিনি বলেন: আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার আহলে বায়তের উপর জুলুম করবে বা আমার ইতরাতের ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিবে তার উপর বেহেস্ত হারাম। (তাফসীর কাশশাফ ওয়াল বায়ন, (আল্লামা জামাখশারী), হয় খন্ড পৃ-৬৭ মিশরে মুদ্রিত।), তাফসীরে কাবির (আল্লামা ফখরুদ্দীন রাজী) ২৭তম খন্ড পৃ-১৬৬, তাফসীরে কুরতুবি ১৬তম খন্ড পৃ-২২ মিশর।

নবী ও তাঁর আহলে বায়েতের চির শত্রু বনী উমাইয়াদের প্রোপাগান্ডায়, আহলে বায়েতের ভক্তদের বা প্রেমিকদের রাফেজী নামে ডাকা হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ও কাজী হামিদ উদ্দিন নাগুরী (রহঃ) বলেছেন, আহলে বায়েতের ভালবাসা যদি মানুষকে রাফেজী বনিয়ে দেয় তবে আল্লহ্‌, জিবরাইল, মুহাম্মদ আহলে বায়েতকে ভালবেসেছেন। তাহলে আল্লাহ রাফেজী, জিবরাইল রাফেজী, মুহাম্মদও রাফেজী। হে জ্বীন ও মানুষগণ! তোমরা সাক্ষী থেকো আমিও রাফেজী!

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় উমাইয়ারা আহলে বায়েতের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে হত্যা করেছে শত্রুতা করেছে বেইমানী করেছে মোনাফেকী করেছে আমরা তাদেরকে কিনামে ডাকবো এটা অবশ্য তারা আমাদেরকে বলেনি?

আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়তী বণনা করেন যে, পবিত্র কোরআন ও নবীর হাসীস হতে একটা প্রমাণিত হয় যে, আহলে বায়েত (আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (আঃ)-এর মুয়াদ্দাত (প্রাণাধিক ভালবাসা অনুসরণ) দ্বীনের ফরায়েজে গণ্য (বাধ্যতামূলক) : সুতরাং ইমাম শায়েয়ী (রহঃ) উহার সমথন এরূপ সনদ দিয়েছেন যে, হে আহলে বায়েত-এ রাসূল, আল্লাহ তাঁর নাজিল করা পবিত্র কুরআনে আপনাদের মুয়াদ্দাতকে ফরজ করেছেন যারা নামায়ে আপনাদের উপর দরূদ না পড়ে তাদের নামাজেই কবুল হয় না। (ইবনে হাজার মাক্কীর সাওয়ায়েকে মুহরেকা পৃ:১০৩)

নবী (সাঃ) আরো এরশাদ করেছেন: “আল্লাহর কসম যাহার হস্তে আমার জীবন যে ব্যাক্তি আমার আহলে বায়েতকে শত্রু মনে করবে যে জাহান্নামী”। (এহইয়াউল মাইয়াত পৃঃ৬; আরহাজোল মাতালেব পৃঃ৪১৮; সাওয়ায়েকে মোহরেকা পৃঃ১০৪)

হযরত আলী থেকে বণিত, যিনি বীজ হতে চারা গজান ও আত্ম সৃষ্টি করেন, সেই আল্লাহর কসম, নিশ্চই আল্লাহর রাসূল আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, প্রকৃত মুমিন ছাড়া আমাকে কেউ ভালবাসবেনা এবং মুনাফিকগণ ছাড়া কেউ আমার প্রতি ঘৃণা প্রদশন করবে না। রাসূলের সাহাবাগণ ইমাম আলীর প্রতি ভালবাসা অথবা ঘৃণা দ্বারা কোন লোকের ইমান ও নিফাক পরোখ করতেন। আবু যার গিফারী, আবু সাঈদ খুদরী, আব্দুল ইবনে মাসউদ, জাবের ইবনে আব্দুলাহ হতে বণিত যে, আমরা সাহাবাগণ আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফিকদের খুঁজে বের করতাম। (সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড পৃ:৬০ মিশর; সহীহ রিমিজী ৫ম খন্ড পৃ:৬৩৫; ইবনে মাজাহ ১ম খন্ড পৃ:৫৫; সুনামে নাসায়ী ৮ম খন্ড পৃ:১১৫; মাসনাদে হাম্বল ১ম খন্ড পৃ: ৮৪; সহহি মুসলিম ১ম খন্ড হদিস ১৪৪ (ই.ফা.) আশারা মোবাশ্‌শারা এমদাদিয়া লাইব্রেরী পৃ:১৯৭, হযরত আরী, এমদাদিয়া পুস্তকালয় পৃ:১৪)

এছাড়া নবীজি বলেছেন “যে আলীকে গালি দেয় সে আমাকে গালি দেয়”। (মেশকাত শরীফ ১১তম খন্ড হাদিন ৫৮৪২ (এমদাদীয়া)।

সংগ্রহঃ আহলে বায়েত (আঃ) ই নাজাতের তরী বা ত্রাণকরতা

No comments

Powered by Blogger.