Banners

মাওলা পাক

মাওলা পাক

সৈয়দেনা হজরত সৈয়দ শাহ্মুর্শেদ আলি আল-কাদেরী (আঃ)

১২৭৮ হিজরীর ২৭ শে রমজান, ইংরেজি ১৮৫৮ সালের ১৬ই জুলাই শেষ রাত্রে এক মহামানব অবর্তীন হলেন মেদিনীপুর শহরেসে রাত টি ছিল শবে কদরের, শুক্রবার

যিনি ছিলেন আমাদের নবী করীম হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর ৩২ তম বংশধর এবং বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ)-এর ২০ তম বংশধর। যে এর ধরাধামে মাওলা পাক নামে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছেন। তিনি ভারতে পশ্চিমবঙ্গে মেদিনীপুর জম্নগ্রহন করেন।

মাওলা পাক, ওলী আল্লাহর জীবনী, মেদেনীপুর, জোড়া মসজিদ, কাদেরিয়া তরিকা
তাঁর পিতা মহাসূফী হজরত আলা হুজুর ওরফে সৈয়দেনা হজরত সৈয়দ শাহ্মেহের আলি আল-কাদেরী আল জিলানী (আঃ)তাঁর জন্মের কিছুদিন পূর্বে তাঁর পূর্বপুরুষ হজরত আলি মুশকিল কুশা- (আঃ) দিব্য-দর্শনে পানহজরত আলি (আঃ) তাঁকে এই মর্মে সূচনা দেন যে এক মহা সাধক অল্পদিন পরেই তাঁর গৃহে অবতীর্ন হবেনতাঁর ইচ্ছা শিশুর নামকরণ যেন তাঁর নামেই হয়এর কিছুদিন পরের তিনি হজরত গওসউল আজমের দিব্য দর্শন লাখ করলেনতিনিও তাঁকে মহামানবের আগমনের সূচনাটি দেয়ে এই ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে দিব্য আধার যেন তর নামে জগতে খ্যাত হনতাই পিতা তাঁর নাম রাখলেন আলি আব্দুল কাদের (আঃ), যদিও তাঁর পোশাকি নাম সৈয়দেনা হজরত সৈয়দ শাহ্মুর্শেদ আলি আলকাদেরী আল হাসানী ওয়াল হোসেনী (আঃ)পরবর্তী কালে ভক্তদের কাছে তিনিমাওলাপাক নামে সুপরিচিত হন


হজরত মেহের আলি (আঃ) তাঁর জ্যেষ্ট সন্তান এই শিশুটিকে অত্যন্ত ভালবাসতেনতাঁর চার বৎসর বয়স থেকেই তিনি পিতার ছায়া-সঙ্গী হয়ে পড়েন

তিনি ঈশ্বরে ধ্যান করার জন্য নিকটবর্তী জঙ্গরে গিয়ে প্রবেশ করতেন, যখন তাঁর বয়স ছয় কি সাত বৎসরপ্রতিদিন গভীর জঙ্গলের মধ্যে কংশাবতী নদীর তীরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় তিনি ধ্যানমগ্ন হতেনএকাকী বসে হিংস্র শ্বাপদপুর্ন পরিবেশে ধ্যান করতে বিচলিত বোধ করতেন নাতিনি ছিলেন জন্মসিদ্ধ সাধনপিতার নির্দেশে আধ্যাত্ম সাধনায় প্রতিটি স্তর তিনি একে একে নিষ্ঠার সাঙ্গে এগিয়ে চলেনকোন কোন দিন গভীর রাতে পিতা তাঁকে কঠিন সাধনার শিক্ষা দিনেততাঁকে পায়ে দড়ি বেঁধে ছাদের কড়ি থেকে ঝুলিয়ে দিতেন(সালত--মাকুস) অভিকর্ষের টানে রক্তধারা ক্রমে জমা হত মাথায় মুখের শিরায় শিরায়অবশেষে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ত তাঁর নাক দিয়েপিতা, তাঁর পুত্রের পবিত্র রক্ত যাতে মাটিতে না পড়েতার জন্য একটি মাটির পাত্র রেখে দিতেন তাঁর মাথার নীচে

শৈশব কাল থেকেই তাঁর অলৌকিক শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়অনেক ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনার বর্ণানা এখাননে উল্লেখ করিহুজুর তখন অল্প বয়সী মাত্র এবং নিজ পারিবারিক মাদ্রাসার ছাত্র মাদ্রাসার ছাত্র সাজ্জাদ  করিম হুজুরের লেখা পড়ার সময় তাঁকে ইচ্ছাকৃত ভাবে জ্বালাতন করতলেখা পড়া করতে দিন নাএকদিন বিরক্ত হয়ে হুজুর সাজ্জাদের দোয়াতটি ছুড়ে কুঁয়োতে ফেলে দেনসাজ্জাদ চিৎকার চেঁচামেচি হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়ে দিলপাশের ঘরে গৃহশিক্ষক ঘুমোচ্ছিলেন, সাজ্জাদ সম্পর্কে তাঁর শ্যালকচিৎকার শুনে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেল এবঙ তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেনসাজ্জাদ তাঁর কাছে সত্য গোপন করে মিথ্যা বর্ণনা করলমৌলভি সাহেব অন্যায়ের পক্ষপাত ছিলেনতিনি হুজুরকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই বললেনগরীবের দোয়াতটি কুয়ায় ফেলে দেওয়া খুবই অন্যায়তখন হুজুর বললেন যে কুলুঙ্গীতে দোয়াত রয়েছে, যাও নিয়ে আসকুলুঙ্গীতে সাজ্জাদের দোয়াতটি পাওয়া গেলমাদ্রাসার অন্যান্য বালকেরা দেখেছিল যে হুজুর দোয়তটি কুঁয়াতেই ফেলে দিয়েছেন ঘটনা চাক্ষুস করে সেখানে উপস্থিত থাকা বালকেরা তাঁর পদপ্রান্তে পতিত হলসাজ্জাদও তাঁর পদতলে পতিত হলএই অভাবনীয় ঘটনা দেখে মৌলভি সাহেবও তাঁর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন

আধ্যাত্মিক সাধনা পার্থিব বিদ্যার চর্চার পাশাপাশি চলতে লাগলতাঁকে নানা বিষয়ে পাঠদান করতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক নিযুক্ত হলেনতাঁর স্মৃতি শক্তি ছিল অসাধারণএকবার মাত্র পাঠ করেরই তিনি পাঠ্য বিষয় আজীবনের জন্য স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারতেনহাদিস, ফিকা,  বর্কশাস্ত্র (ইল্ম মান্তিক), এবং অন্যান্য বিষেয় তাঁর আয়ত্ব ছিলতিনি ছিলেন আল্লাহ্ দেওয়া জ্ঞানের অধিকারী, তাই  যে কোন বিষয়ে জ্ঞান তাঁর আয়ত্ব ছিলতাঁর পিতা হজরত আলা হুজুর প্রায়--বলতেন- “হযরত গাওসউর আজম (আঃ) স্বয়ং তাঁর শিক্ষার ভার নিয়েছেন

মাওলাপাক”- এর বয়স যখনা মাত্র ষোল বৎসর, তাঁর পিতা নিজের আধ্যত্ম উত্তরাধিকার তাঁর হাতে অর্পন করে পরলোক গমন করেনপিতার প্রায়নে হুজুর খুব চিন্তান্তিত  হয়ে পড়লেনএর পর তিনি টানা চল্লিশ দিন সূযোর্দয় থেকে সূযাস্ত পযন্ত ইস্ত্রিগঞ্জের কাছাকাছি বনে কিম্বা নির্জন জায়গায় অতিবাহিত করে সূর্যাস্তের পর সারারাত পিতার মাজার শরিফের পাশে বসে প্রার্থনায় মগ্ন থাকতেনএভাবে সম্পূর্ণ মৌনব্রতী অবস্থায় চল্লিশ দিন  অতিক্রান্ত হলে তিনি আর গৃহে না এসে গভীর আরণ্যে নগ্নপদে এখানে সেখানে পরিভ্রমন করতে লাগলেনএই সময় ইশ্বরপ্রেমে মাতোয়ারা হয়ে বাহ্যজ্ঞানরহিত আহার নিদ্রাহীন অবস্থায় জীবনের একটি বছর অতিক্রম হল তাঁর


এতদিনে তাঁর মন কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছেএবার তিনি ইস্ত্রিগঞ্জে ফিরে এলেনকিন্তু তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনা সম্পূর্ণ হলো নাতাঁর মাকুশি সাধনা অব্যাহত রইল, বেশ কয়েকবার গোরচিল্লায়ও অতিবাহিত করলেনদীর্ঘকাল তিনি নিদ্রায় যান নি, এমনকি বিশ্রামের নিমিত্ত শয়ন পযন্ত করতেন না

তারপর তিনি পায়ে হেঁটে সারা ভারতবর্ষ ভ্রমন করেনপথে যেখানেই কোন সাধক মহাপুরুষের সমাধিক্ষেত্র চোখে পড়ত- সেখানেই তিনি অল্প সময় অপেক্ষা করতেনতিনি মাজারের কাছাকাছি আসলেই সমাহিত ব্যাক্তির আত্মা তাঁর কাছে করুনা ভিক্ষা করততিনিও তাঁদের প্রতি দোওয়া করতেন; মুহুর্তে তাঁদের অসমাপ্ত সাধনা সম্পূর্ন হতভ্রমনকালে অর্থহীন অবস্থায় সম্পূর্ন আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে তিনি গ্রাম, নগরজঙ্গল, পর্বত, উপত্যকা, প্রদেশ প্ররিক্রমন করতেন

অবশেষে তিনি তাঁর নিঃসঙ্গ ভ্রমণ সমাপ্ত করে কলকাতার ৫১ নং তালতলা লেনে বসতি স্থাপন করলেনপরে তিনি ৯নং গার্ডেনার লেনের (বর্তমান ২২ নং খানকাশরীফ লেন) বাড়িতে উঠে আসেনকালক্রমে তাঁর এই বাসভবন এক মহাতীর্থে পরিনত হল

তাঁর ধর্ম ছিল সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক হিন্দু, মুসলমান, জৈন্য, খ্রিষ্টান, ধনী দরিদ্র সকলেই প্রতিই তাঁর সমান দৃষ্টি ছিলতাই  সকল ধর্ম সকল সম্প্রদায়ের লোকই তাঁর শিষ্য শ্রেণীভূক্ত ছিলরাজকীয় জীবন যাপনের অধিকারী ছিলেন তিনি; কিন্তু অতি সাধারণ দারিদ্রের ন্যায় জীবন যাপন করতেনকয়েকটি লুঙ্গি এবং একটি মাত্র পিরহান ছিল তাঁর পরনের বস্ত্রতাঁর খাওয়া-দাওয়াও ছিল যৎ সামান্যতিনি মাটির পাত্রে আহার করতেনসারা বৎসরই দিনের দিকে তিনি উপবাস করতেন এবং সূর্যাস্তের সময় মাত্র একগ্লাস সরবত সামান্য কিছু ভিজে ছোলার দানাতে তাঁর উপবাস ভঙ্গ হতগভীর রাত্রে  দু-একটি ব্যঞ্জন সহ সামান্য অন্ন গ্রহন করতেনআবার মাঝে মাঝে তাও গ্রহন করতেন নাকয়েকদিন এক নাগাড়ে নিরম্বু (পানি না খেয়ে) উপবাস করে দিনরাত্রি তপস্যাস মগ্ন থাকতেনধর্মগ্রন্থ পাঠ  অথবা সাধনায় নিযুক্ত থাকার সময়টুকু বাদে তিনি দিন-রাত্রি তসবী পড়তেন


বাস্তবিকেই হুজুর নিজের জন্য জীবন ধারণ করতেন নাসংসারের কোন কামনা, বাসনা বা মৃত্যুভয় তাঁর মন অধিকার করতে পারে নিতিনি বলতেনসংসারের জন্য যে কোন কাজই কর না, সকলই সেই পরমাত্মার জন্য চিন্তা সর্বদা হৃদয়ে ধারণ করবে, তাতে মনে বল পাবে আর হৃদয়ে আশামুকুল কুসুমিত হবে
কিতাবঃ মাওলা পাক (আঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনী (আবুল হাসনাত কাদেরী) জিলানী প্রকাশনী

2 comments:

  1. মাওলা পাক আপনি আমাদের গোলম বলে কবুল করুন

    ReplyDelete

Powered by Blogger.